Monday, April 14, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যচিনে বাংলাদেশি রোগীদের জন্য বিশেষ ছাড়

চিনে বাংলাদেশি রোগীদের জন্য বিশেষ ছাড়

Special discounts for Bangladeshi patients in China: বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাম্প্রতিক পরিবর্তনের পর একদিকে যেমন প্রশাসনিক স্তরে বড়সড় রদবদল এসেছে, ঠিক তেমনই তার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনেও, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক কিছুটা অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে, আর সেই সম্পর্কের টানাপোড়েনের অন্যতম বড় শিকার হয়েছেন দেশের হাজার হাজার অসুস্থ মানুষ, যারা এতদিন ভারতে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করতেন। ভারতের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া কঠিন করে দেওয়ায়, এখন সেই দরজাটা প্রায় বন্ধের মুখে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, “বর্তমানে কেবলমাত্র জরুরি ও চিকিৎসা সংক্রান্ত বিশেষ প্রয়োজনে ভিসা প্রদান করা হচ্ছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুরোনো নিয়মে ফেরা সম্ভব।” এই অবস্থায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে একরকম বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে বিকল্প চিকিৎসা গন্তব্য খোঁজা, আর সেখানেই দারুণভাবে এগিয়ে এসেছে চীন। দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে চীনের ইউনান প্রদেশের চারটি শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালকে বাংলাদেশি রোগীদের জন্য বিশেষভাবে মনোনীত করা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে ফু-ওয়াই কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতাল, ইউনান ক্যানসার হাসপাতাল, কুনমিং মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হাসপাতাল এবং ইউনান ফার্স্ট পিপলস হাসপাতাল। চীনের এই উদ্যোগ শুধু যে মানবিক, তা নয়, বরং কৌশলগতও, কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের এক নতুন কৌশলও বটে। তবে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বললে, এটা যেন নতুন আশার আলো। এখন অনেকেই চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি কুনমিং রুটে সম্ভাব্য ফ্লাইট চালুর খবরে খুশি, কারণ এতে করে রুগীদের যাতায়াতের খরচ ও কষ্ট দুই-ই কমবে। চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স এই রুটে নিয়মিত ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা করছে, যা

বাস্তবায়িত হলে বহু মানুষ উপকৃত হবেন। বরিশালের একজন ক্যানসার রোগীর পরিবার জানিয়েছেন, “ভারতে আমরা বারবার চেষ্টা করেও ভিসা পাইনি, এখন চীনে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে আমরা খুশি, সেখানে চিকিৎসা সেবা ভালো ও খরচ অনেকটাই কম।” এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চীনের হাসপাতালগুলো বিভিন্ন প্যাকেজ অফার করছে, যার মধ্যে রয়েছে বাংলায় কথা বলা মেডিকেল কনসালটেন্ট, হোটেল বুকিং-এর সুবিধা, হাসপাতাল পিক-আপ সার্ভিস ইত্যাদি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকেই ইতিমধ্যেই যোগাযোগ শুরু করেছেন ইউনান প্রদেশের সঙ্গে। তবে চিকিৎসাবিদদের একাংশ মনে করছেন, চিকিৎসার গুণমান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই রোগীর মানসিক স্বাচ্ছন্দ্যটাও গুরুত্বপূর্ণ, আর সে দিক থেকে ভারত এতদিন সবচেয়ে বড় ভরসা ছিল। ভারতের কলকাতা, ভেলোর, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, মুম্বাইতে হাজার হাজার বাংলাদেশি রোগী প্রতিবছর চিকিৎসা করাতে যেতেন, বিশেষ করে ক্যানসার, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা ও নিউরো সমস্যা নিয়ে। এখন সেই চেনা জায়গা বন্ধ থাকায়, একটা মানসিক ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে রোগী ও তাঁদের পরিবারের মধ্যে। তবে এর মধ্যেই চীনের তরফ থেকে বাংলা ভাষায় ব্রোশিওর, হেল্পলাইন নম্বর, এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন ছাড়াও রোগীদের জন্য অনলাইন কনসালটেশন চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইউনান প্রদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের এক মুখপাত্র বলেন, “বাংলাদেশি রোগীরা যাতে আমাদের দেশে এসে আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী চিকিৎসা নিতে পারেন, তা নিশ্চিত করতেই আমাদের এই বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা।” চীনের এমন পদক্ষেপ কূটনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এই দুরত্বে চীন যেভাবে একটি মানবিক ইস্যুকে কৌশলগতভাবে কাজে লাগাচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের চোখ এড়ায়নি। তবে সাধারণ রোগীর জন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজন হচ্ছে নিরাপদ, দ্রুত ও ব্যয়বহুল নয়, এমন চিকিৎসা ব্যবস্থা, যেটা তাঁরা চীনে পাচ্ছেন বলে মনে করছেন অনেকে। তবে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক যেহেতু চিরকাল একরকম থাকে না, তাই অনেকেই আশায় আছেন যে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আবারো আগের মত মসৃণ হলে ভিসা নীতিও সহজ হবে এবং তারা আবারো কলকাতা বা চেন্নাইয়ের হাসপাতালে ফিরে যেতে পারবেন। চট্টগ্রামের আবদুল হালিম নামের একজন কিডনি রোগী বলেন, “আমার চিকিৎসা কলকাতার এক হাসপাতালে চলছিল, কিন্তু এখন আর যেতে পারছি না। চীনে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি, সেটা ভালো, কিন্তু তাও মনটা ভারী হয়ে আছে।” সবমিলিয়ে, বাংলাদেশি রোগীদের জন্য চীনের এই বিশেষ ছাড় যেন এক কঠিন সময়ে আশার আলো, তবে দীর্ঘমেয়াদে এই চিকিৎসা সেবা টেকসই হবে কি না, তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির চড়াই-উৎরাইয়ের উপর। তবুও এই মুহূর্তে যাদের চিকিৎসা দরকার, তাদের কাছে চীনের হাসপাতালগুলো যেন এক নতুন আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে, যেখানে তারা পাচ্ছেন স্বস্তি, সহানুভূতি ও সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা—যেটা ঠিক এখনই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments