Elon Musk’s company X has been sold, but who bought it?: ঘটনাটা যেন সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো—নিজেরই তৈরি এক সংস্থা বিক্রি করলেন নিজেকেই! হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। ২০২২ সালে ৪৪০০ কোটি ডলার খরচ করে এলন মাস্ক যখন টুইটার কিনেছিলেন, তখন অনেকেই ধারণা করেছিলেন প্রযুক্তি দুনিয়ায় নতুন এক বিপ্লব আসতে চলেছে। এরপর টুইটারের নাম বদলে ‘X’ রাখেন মাস্ক, এবং শুরু হয় একের পর এক পরিবর্তনের পালা। একদিকে সাবস্ক্রিপশন সিস্টেম চালু, অন্যদিকে বিজ্ঞাপন নীতি বদল, কর্মী ছাঁটাই, ফিচার পরিবর্তন—সব মিলিয়ে টুইটার থেকে এক্স হয়ে উঠেছিল এক রহস্যময় অথচ আকর্ষণীয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। আর ঠিক সেই সময়েই এলন মাস্কের মাথায় আসে আরও একটি ধারণা—আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে (AI) ব্যবহার করে ভবিষ্যতের ইন্টারনেট ও মানবজাতির চিন্তাধারায় রূপান্তর আনা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালে তিনি গঠন করেন xAI, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল GPT বা ChatGPT, Google Bard, Meta AI কিংবা চিনের DeepSeek-এর মতো কৃত্রিম মেধার সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যাওয়া। আর এবার তিনি যা করলেন, তা এক কথায় অভাবনীয়—এক্সকে বিক্রি করে দিলেন এই xAI-কে, এবং সেই ঘোষণা নিজেই করলেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। এলন মাস্ক টুইটে লিখেছেন, “আজ আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য, ব্যবসায়িক কাঠামো, প্রযুক্তিগত পদ্ধতি, পরিষেবা বিতরণ এবং প্রতিভাকে একত্রিত করার পদক্ষেপ নিচ্ছি।
এক্স এবং xAI মিলে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হবে, যা মানব সভ্যতার অগ্রগতিকে তরান্বিত করবে।” এটা বোঝাই যাচ্ছে, মাস্ক এই দুই সংস্থাকে একীভূত করে এক নতুন রূপ দিতে চাইছেন, যেটি শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়া নয়, বরং প্রযুক্তি, তথ্য ও চিন্তাশক্তির এক সর্বভারতীয় প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠতে চলেছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, এই বিক্রির পেছনে আসল উদ্দেশ্য কী? সূত্র অনুযায়ী, এক্স বর্তমানে প্রায় ৬০০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে এক বিশাল শক্তি। কিন্তু এর পাশাপাশি, কৃত্রিম মেধার যে ভবিষ্যৎ আসছে, তাতে প্রযুক্তির সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার মেলবন্ধন দরকার। তাই মাস্ক চেয়েছেন যেন xAI-এর উন্নত মডেলগুলো এক্সের প্ল্যাটফর্মেই ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে হয়তো এক্স-এ থাকবে এমন এক AI সিস্টেম, যা ব্যবহারকারীর অভ্যাস বুঝে কনটেন্ট সাজিয়ে দেবে, অটোমেটিক পোস্ট রচনা করবে, এমনকি AI অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করবে। এর ফলে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে আরও ব্যক্তিগত এবং সহজ। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি মাস্কের একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। টেসলা, স্পেসএক্স, নিউরালিংক-এর মতো সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তিনি ইতিমধ্যেই প্রযুক্তির শীর্ষে রয়েছেন।
এবার সোশ্যাল মিডিয়া ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে আধিপত্য বিস্তার করতেই এই এক্স ও xAI-এর মিলন। এই পরিবর্তনের প্রভাব শুধু প্রযুক্তি জগতে নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পড়বে। যেমন, ভবিষ্যতে এক্সে কোনো খবর পড়তে গিয়ে আপনি সেই খবরের সারাংশ পেয়ে যাবেন AI-এর মাধ্যমে, আপনি পোস্ট লিখতে গেলে AI আপনাকে সাজেস্ট করবে, এমনকি নিজের মতামতও জানাবে। যেটা এখন চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে হয়, সেটাই মাস্ক নিয়ে আসতে চলেছেন সরাসরি সোশ্যাল মিডিয়াতে। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যারা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ডিজিটাল মার্কেটার, সাংবাদিক, ছাত্রছাত্রী—তাদের কাছে এটি হতে চলেছে এক নতুন দিগন্ত। এলন মাস্কের এই পদক্ষেপ সম্পর্কে টেক বিশেষজ্ঞ অনিরুদ্ধ ঘোষাল বলছেন, “এই মিলনটা প্রযুক্তির ভবিষ্যতের জন্য এক বিশাল পদক্ষেপ। মাস্ক জানেন কোথায় বিনিয়োগ করলে আগামী ২০ বছর তিনি বাজার দখল রাখতে পারবেন।” অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ার এক স্টার্টআপ ইনভেস্টর অ্যালেন ব্রুকস জানিয়েছেন, “মাস্ক এই মুহূর্তে একমাত্র ব্যক্তি যিনি সোশ্যাল মিডিয়া, AI এবং স্পেস টেকনোলজির তিনটি ক্ষেত্রেই সমান দক্ষ

এটা তাকে ভবিষ্যতের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি করে তুলবে।” ভারতীয়দের জন্যও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ ভারতে X-এর বিশাল ব্যবহারকারী সংখ্যা রয়েছে, অনেকেই পেশাগত এবং রাজনৈতিকভাবে X-কে ব্যবহার করেন। মাস্ক এই পরিবর্তনের ফলে ভারতে AI সমৃদ্ধ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের একটি নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। শিক্ষাক্ষেত্র, সংবাদমাধ্যম, ব্যবসা, বিনোদন—সবক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। তবে কিছু মানুষ এটিকে নিয়ে উদ্বিগ্নও। অনেকে বলছেন, AI-এর দৌলতে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা, মতামতের স্বাধীনতা, এবং মানুষের চিন্তাশক্তি হ্রাস পেতে পারে। সবকিছু যদি AI ঠিক করে দেয়, তবে মানুষের বিশ্লেষণ ক্ষমতা কোথায় থাকবে? তবে মাস্ক এই বিষয়ে বলেন, “AI মানুষের সহকারী, বিকল্প নয়। আমরা প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষকে আরও ক্ষমতাশালী করে তুলতে চাই।” সব মিলিয়ে বলা যায়, এক্সের বিক্রি কোনও সাধারণ ব্যবসায়িক লেনদেন নয়, এটি ভবিষ্যতের প্রযুক্তিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এক কৌশলগত পদক্ষেপ। এক্সএআই এবং এক্সের এই একীভবন মানব সভ্যতার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এলন মাস্ক? তিনি আবারও প্রমাণ করলেন, ভবিষ্যৎ তাঁর হাতে লেখা।