Ram Navami preparations in full swing in Malda:মালদা জেলার সামসী শহরে এই মুহূর্তে যেন উৎসবের আবহ বইছে। আর এই আবহের কেন্দ্রবিন্দু হলো আসন্ন রাম নবমী উৎসব। প্রতি বছর রাম নবমী মানেই সামসী শহরের রাস্তায় ঢাকের বাদ্য, ডিজের তালে নাচ, রাম নামের ধ্বনি আর মানুষের মিলন মেলা। এবছরও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। বরং বলা যায়, এবছরের প্রস্তুতি আগের সব বছরকে ছাপিয়ে গেছে। রবিবার, রাম নবমীর দিন, সামসীতে আয়োজিত হতে চলেছে এক বিশাল ধর্মীয় শোভাযাত্রা, যার প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। সামসী রাম নবমী উৎসব উদযাপন কমিটির সম্পাদক অভিষেক সিংহানিয়া আমাদের “খবর বাংলা”-কে জানালেন, “২০১৭ সাল থেকে সামসীতে আমরা এই রাম নবমীর শোভাযাত্রা করে আসছি। শুরুটা ছোট ছিল, কিন্তু আজ এটা একটা বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে, এবং এবছরও আমরা ১৫ ফুটের রামচন্দ্রের প্রতিমা নিয়ে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করছি।” শোভাযাত্রায় থাকবে শতাধিক ঢাকি, ডিজে, রাম নাম কীর্তন, এবং রামভক্তদের নাচ। মহিলাদেরও থাকবে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ, যা বিগত কয়েক বছর ধরে এই শোভাযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। শুধু সামসী নয়, পার্শ্ববর্তী এলাকা হরিশ্চন্দ্রপুর, কালিয়াচক, রতুয়া, চাঁচল থেকেও বহু মানুষ এই শোভাযাত্রায় অংশ নিতে আসেন। শহরের অলিগলি জুড়ে ইতিমধ্যেই লাউডস্পিকারে ভক্তিমূলক গান বাজছে, বাড়ির ছাদে উড়ছে রামধ্বজা, দোকানে দোকানে সাজানো হয়েছে রামায়ণের চরিত্রের বিভিন্ন কাটআউট, এবং চারিদিকে রঙবেরঙের আলোয় আলোকিত হয়েছে শহর। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও এই উৎসবে সামিল হচ্ছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা মহাকাব্য রামায়ণের বিভিন্ন দৃশ্য অভিনয় করছে রিহার্সালে, যা মূল অনুষ্ঠানে মঞ্চস্থ হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও প্রশাসন রয়েছে তৎপর। মালদা জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাম নবমীর শোভাযাত্রা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে সামসীতে
অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন করা হচ্ছে। বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা, পুলিশ পিকেট ও র্যাফ। সামসী থানার ওসি জানিয়েছেন, “ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য পুলিশ পুরোপুরি প্রস্তুত, এবং আমরা সবরকম সহযোগিতা করছি আয়োজকদের সঙ্গে।” এই অনুষ্ঠান শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি সামসীর অর্থনীতি ও সামাজিক জীবনে একটি বড় প্রভাব ফেলে। দোকানে দোকানে ভিড়, প্রসাদ তৈরির অর্ডার, ফুলের চাহিদা, বাঁশ, কাপড় ও আলোকসজ্জার জিনিসপত্রের বিক্রি — সব মিলিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই সময়টিকে একটি সিজন বলেই মনে করেন। রাম নবমী উপলক্ষে অনেক দোকানদার স্পেশাল ছাড়ও দেন এই সময়ে। সামাজিক দিক থেকে এই শোভাযাত্রা সামসী শহরের মানুষের মধ্যে একতা, সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের বার্তা বহন করে। এখানে হিন্দু-মুসলমান সকল সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে মিলে অনুষ্ঠান সফল করে তোলেন। সামসীর এক স্থানীয় বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন বলেন, “আমি মুসলিম হলেও প্রতিবছর আমার দোকান থেকে ফুল সরবরাহ করি এই উৎসবে। আমাদের এখানে সব ধর্ম একসঙ্গে মিলে যায় এই দিনটিতে।” সামসী হাইস্কুলের এক শিক্ষক, মধুসূদন দাস জানান, “আমরা ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে প্রতি বছর এই উৎসবের ইতিহাস জানাই। তারা রামচন্দ্রের চরিত্র থেকে শিক্ষা নেয়, যা তাদের জীবনে মূল্যবোধ গঠনে সাহায্য করে।” এরকম একটি অনুষ্ঠান শহরের নতুন প্রজন্মের মধ্যেও উৎসাহ জোগায়, এবং তাদের নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। সামসীতে রাম নবমী শুধু ধর্মীয় নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও বটে। তবে কিছু মানুষ আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এত বড় মাপের শোভাযাত্রা হলে যেন শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে। প্রশাসন যদিও বারবার সবাইকে আবেদন জানাচ্ছে, যাতে কেউ গুজব না ছড়ায় এবং সকলে মিলেমিশে এই উৎসব পালন করেন। মালদা জেলা শাসক নিজেও জানিয়েছেন, “আমরা চাই সামসী যেন সম্প্রীতির শহর হিসেবেই পরিচিত হয়। তাই সকল পক্ষকে নিয়ে আলোচনা করে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।” সবমিলিয়ে, সামসীতে রাম নবমী যেন একটি বার্ষিক মেলা, যেখানে ভক্তি, আনন্দ, উৎসব আর ঐক্যের মিলন ঘটে। এবছরও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই আশাবাদী আয়োজক থেকে প্রশাসন, স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ — সবাই। এই উৎসব যেন সামসীর সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় হয়ে উঠেছে। আগামী রবিবার যে শহর জেগে উঠবে রাম নামের ধ্বনিতে, তার প্রহর গোনা এখন শুরু হয়ে গেছে। রঙ, আলো, ভক্তি আর সংস্কৃতির এক অভাবনীয় মেলবন্ধন ঘটতে চলেছে এই রাম নবমীতে।