Sunday, April 13, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসদেশএবার স্মার্টফোনের ইতি ঘটাতে নতুন প্রযুক্তির মাস্কের

এবার স্মার্টফোনের ইতি ঘটাতে নতুন প্রযুক্তির মাস্কের

Now, a new technology mask is ready to put an end to smartphones : এখন ৮ থেকে ৮০, প্রত্যেকেই স্মার্টফোনে অভ্যস্ত। সকালের ঘুম থেকে ওঠা থেকে রাতের ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত, একটানা ফোনে মুখ গুঁজে থাকা যেন আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কেউ ফোনে মুভি দেখছেন, কেউ গেম খেলছেন, কেউ আবার গুগল ম্যাপে রাস্তা খুঁজছেন কিংবা অনলাইন ব্যাঙ্কিংয়ে টাকা লেনদেন করছেন—সব কাজই আজকাল হাতে ধরা স্মার্টফোনের মাধ্যমে। কিন্তু ভাবতে পারেন, এমন একটা দিন আসতে চলেছে যখন এই ফোনটাই আর লাগবে না! হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। স্মার্টফোন ছাড়াই ভবিষ্যতে আপনি কথা বলতে পারবেন, গান শুনতে পারবেন, সিনেমা দেখতে পারবেন এমনকি মনের মধ্যে ভাবলেই গন্তব্যের ঠিকানাও চলে আসবে—এই অসাধ্য সাধন করে ফেলেছেন বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের ইলন মাস্ক। তাঁর সংস্থা নিউরালিংক (Neuralink) নিয়ে এসেছে এমন এক বিপ্লবী প্রযুক্তি যা বদলে দিতে চলেছে গোটা দুনিয়ার যোগাযোগব্যবস্থা এবং মানুষের চিন্তাধারাও। নিউরালিংকের এই প্রজেক্ট শুনে যেমনটা সায়েন্স ফিকশনের গল্প মনে হচ্ছে, বাস্তবে সেটাই ধীরে ধীরে সম্ভব করে তুলছে বিজ্ঞান।

ইলন মাস্কের এই নতুন প্রযুক্তির নাম ব্রেন চিপ ইমপ্লান্ট, যা মানুষের মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসানো হবে। এই চিপের সঙ্গে যুক্ত থাকবে শক্তিশালী AI অর্থাৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এই চিপ আমাদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করবে। যেমন ধরুন, আপনি কারও সঙ্গে কথা বলতে চান—তখন আপনাকে আর ফোন বের করে ডায়াল করার দরকার পড়বে না। আপনি শুধু মনে মনে ভাবলেই সেই কলটি চলে যাবে এবং আপনি সরাসরি কথা বলতে পারবেন। আবার ধরুন আপনি গুগলে কিছু সার্চ করতে চাইলেন, আপনি শুধু মনের মধ্যে সেই প্রশ্নটা ভাবলেই মস্তিষ্কে থাকা চিপের মাধ্যমে সেই উত্তর চলে আসবে আপনার চিন্তায়, যেন মনের মধ্যে একটা স্ক্রিন কাজ করছে।

artificial intelligence new technology science futuristic abstract human brain ai technology cpu central processor unit chipset big data machine learning cyber mind domination generative ai scaled 1

নিউরালিংকের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালের শুরুতেই তারা প্রথম মানুষের শরীরে এই চিপ ইমপ্লান্ট করেছে। যাঁর শরীরে প্রথম এই চিপ বসানো হয়েছে, তাঁর নাম নোলান আরবান—যিনি একজন দুর্ঘটনায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী ছিলেন। তাঁর শরীরে এই চিপ বসানোর পর দেখা গিয়েছে, তিনি কেবল চিন্তা করেই কম্পিউটার স্ক্রিন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন! এমন নজিরবিহীন সাফল্য নিউরালিংকের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। মাস্ক বলেন, “আমরা এমন একটা পৃথিবী গড়ে তুলতে চাই, যেখানে প্রযুক্তি আমাদের চিন্তাধারার সঙ্গে একাত্ম হবে, যেটা শুধু ডিভাইসে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং মানুষের মনেই তৈরি হবে তথ্যের জগৎ।”

এই প্রযুক্তি যদি সফলভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে একদিন হয়তো স্মার্টফোন শুধু জাদুঘরের বস্তু হয়ে দাঁড়াবে। আপনি অফিসে মেইল পাঠাতে চাইছেন? ভাবলেই সেটা হয়ে যাবে। কাউকে ম্যাসেজ পাঠাতে ইচ্ছা করছে? চ্যাটবক্স খুলে টাইপ করার দরকার নেই, মনেই পাঠিয়ে দিতে পারবেন। এমনকি গান শুনতে ইচ্ছা হলে সেই গানটা আপনার মাথায় বেজে উঠবে, আপনি কানে হেডফোন দিচ্ছেন না, কিন্তু শুনতে পাচ্ছেন। ভাবুন তো, একটা নতুন যুগের দরজা খুলছে আমাদের জন্য।

তবে এই প্রযুক্তির কিছু প্রশ্ন এবং চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অনেকেই ভাবছেন, এই চিপ কি নিরাপদ? ব্যক্তিগত তথ্য বা চিন্তা কি তাহলে হ্যাকারদের নাগালে চলে যাবে? মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যে তথ্য ঢুকিয়ে দেওয়া বা সেটা বের করে নেওয়া কি তাহলে সহজ হয়ে যাবে? এ নিয়ে ইতিমধ্যেই চিন্তিত অনেক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। নিউরালিংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সবরকম সুরক্ষার দিকেই নজর রাখছেন এবং চিপ ব্যবহারের আগে একাধিক স্তরের নিরাপত্তা পরীক্ষাও হচ্ছে।

ভারতের প্রখ্যাত নিউরো-সার্জন ডঃ অভিষেক গুহ বলছেন, “মানব মস্তিষ্কে চিপ বসানোর এই প্রযুক্তি সত্যিই বিপ্লব আনতে পারে। তবে এই প্রযুক্তি সবার কাছে পৌঁছতে এখনও অনেকটা পথ বাকি। পাশাপাশি এটাকে ভুলভাবে ব্যবহার করা না হয়, সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে।”

বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি গবেষক ডঃ হাসান ইকবাল জানিয়েছেন, “এটা শুধুমাত্র একটা যোগাযোগ মাধ্যম নয়, বরং ভবিষ্যতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকা মানুষদের জীবন বদলে দিতে পারে এই চিপ। যারা কথা বলতে পারেন না বা চলাফেরা করতে পারেন না, তারা এই চিপের মাধ্যমে নিজের ভাব প্রকাশ করতে পারবেন।”

তবে এখানেই শেষ নয়। এই প্রযুক্তি কেবল স্মার্টফোনের কাজ নয়, আরও অনেক কিছুতেই ব্যবহার হতে পারে—যেমন স্মার্ট হোম নিয়ন্ত্রণ, ড্রোন চালানো, এমনকি গাড়ি বা রোবটকেও কন্ট্রোল করা সম্ভব হবে কেবল চিন্তা করেই। ইলন মাস্কের মতে, “একটা সময় আসবে যখন এই চিপই হবে মানুষের মস্তিষ্কের এক্সটেনশন।”

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রযুক্তি যদি সত্যিই আমাদের জীবনে ঢুকে পড়ে তাহলে আমাদের স্থানীয় সমাজে কী প্রভাব পড়বে? প্রথমত, স্মার্টফোন বা কম্পিউটার শিল্পের উপর বিশাল ধাক্কা আসবে। বহু মানুষ যাঁরা স্মার্টফোন উৎপাদন, সার্ভিসিং, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল রিটেল ইত্যাদি পেশার সঙ্গে যুক্ত—তাঁদের কর্মসংস্থান বিপন্ন হতে পারে। আবার নতুন করে চাকরি তৈরি হবে প্রযুক্তিগত দিক থেকে—যেমন ব্রেন-চিপ ইঞ্জিনিয়ার, নিউরাল ডিভাইস টেকনিশিয়ান, মাইন্ড-সিকিউরিটি এক্সপার্ট।

আমাদের স্থানীয় যুব সমাজ যারা এখন স্মার্টফোনে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটাচ্ছে, তাঁদের জন্য এটা হতে পারে একটা নতুন আশা। কারণ যাঁরা প্রযুক্তি ভালো বোঝেন, তাদের জন্য খুলে যাবে নতুন দুনিয়া। তবে যাঁরা প্রযুক্তির থেকে দূরে, তাঁদের জন্য এটা শুরুতে একটু ভয়ের বিষয়ও হতে পারে।

সবমিলিয়ে বলা যায়, ইলন মাস্ক আবার প্রমাণ করলেন যে তাঁর চিন্তাভাবনা অনেকটাই সময়ের থেকে এগিয়ে। স্মার্টফোনের সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে এবার আমাদের মাথাতেই ঢুকছে প্রযুক্তি। প্রশ্ন একটাই—আমরা কি প্রস্তুত এমন এক ভবিষ্যতের জন্য, যেখানে চিন্তাই হবে নতুন ইন্টারনেট?

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments