Trump’s tariff bomb targets India, China, Britain, but spares Russia: বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে ফের আলোড়ন, কারণ ফের ক্ষমতায় ফিরে এলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর ফিরে এসেই শুরু করলেন তার সেই পুরনো রণকৌশল— ‘আমেরিকা ফার্স্ট’। গত বছরের নভেম্বরে নির্বাচনে জয় লাভ করে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকেই ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছিলেন, “যে দেশ আমেরিকার পণ্যে শুল্ক বসায়, আমরা এবার তাদের পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক চাপাব।” আর সেই ঘোষণা বাস্তবে রূপ পেল ২ এপ্রিল। ভারতীয় সময় রাত দেড়টা নাগাদ, অর্থাৎ আমেরিকার বিকেল ৪টায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি প্রেস কনফারেন্সে ঘোষণা করলেন ‘পারস্পরিক শুল্ক’ নীতি। তিনি জানালেন, ভারতের পণ্যের উপর ২৬%, চিন থেকে আসা পণ্যের উপর ৩৪%, ব্রিটেনের উপর ১০% এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর ২০% শুল্ক বসানো হচ্ছে। এছাড়াও থাইল্যান্ড, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইজারল্যান্ড, এমনকি ভিয়েতনামের উপরও ২৪% থেকে ৪৬% পর্যন্ত শুল্ক চাপানো হয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, এই তালিকায় রাশিয়ার নাম নেই!
ট্রাম্পের মতে, “আমরা এই শুল্কগুলোর হার ছাড় দিয়ে ঠিক করেছি। এগুলো তাদের চাপানো শুল্কের অর্ধেক মাত্র। আমেরিকা অনেক সহনশীলতা দেখিয়েছে, এবার আমরাও আমাদের স্বার্থ রক্ষা করবো।” তার এই ঘোষণার পরপরই বিশ্ববাজারে শুরু হয়েছে চাঞ্চল্য। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, চিন, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশগুলো প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে এবং পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। চিনের কমার্স মিনিস্ট্রি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এটা একতরফা সিদ্ধান্ত। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নীতির পরিপন্থী। আমরা আমাদের দেশের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।” অন্যদিকে ভারতের অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা ব্যাপক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের অন্যতম বড় রপ্তানি বাজার। ভারত থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূলত ফার্মাসিউটিক্যাল, বস্ত্র, হীরার গহনা, তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা, কৃষিপণ্য ইত্যাদি রপ্তানি হয়। নতুন এই শুল্ক নীতির ফলে ভারতের রপ্তানি খরচ বেড়ে যাবে, যার প্রভাব সরাসরি পড়বে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের উপর। মুম্বইয়ের একজন হীরে রপ্তানিকারক বললেন, “আমরা আগেও মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতার মধ্যে ছিলাম। এখন তো পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে। আমাদের এখনই বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে।” অর্থনীতিবিদ অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম জানিয়েছেন, “এই সিদ্ধান্ত ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হারে ০.২ থেকে ০.৪ শতাংশ পর্যন্ত প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে রিজার্ভ ব্যাংককে সুদের হার কমাতে হতে পারে, যাতে ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তি পায়, কিন্তু এতে আবার মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা বেড়ে যায়।” শুধু তাই নয়, এই শুল্ক যুদ্ধের ফলে বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়িক অনিশ্চয়তা দেখা দিচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা হিমশিম খাচ্ছেন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে। এমনকি আমেরিকার অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এই নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন।
কারণ, পাল্টা শুল্কের মুখে আমেরিকার কিছু রপ্তানিকারকও ঝুঁকিতে পড়ছে। অথচ ট্রাম্পের এই নীতিতে রাশিয়া ছাড় পেয়েছে—এটাই বিশ্বরাজনীতির অন্যতম আলোচনার বিষয়। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্ক সব সময়ই অন্যরকম ছিল। এই ছাড় দেওয়া যেন তারই প্রতিচ্ছবি।” এই ঘোষণার পরে আন্তর্জাতিক মিডিয়া, রাজনৈতিক মহল ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ব এখন এক নতুন বাণিজ্য যুদ্ধের মুখে দাঁড়িয়ে। যেখানে একে অপরকে পাল্টা শুল্ক দিয়ে ঠেকাতে হবে। এতে বিশ্ব অর্থনীতির গতি কমে যাবে, বেকারত্ব বাড়তে পারে, এবং অনেক উন্নয়নশীল দেশ বিপদের মুখে পড়তে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনামের মতো রপ্তানি নির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঢাকার এক ব্যবসায়ী রিয়াজুল হক বলেন, “আমরা ভারত থেকে যেসব কাঁচামাল আমদানি করি, সেগুলোর দামও বাড়বে। এতে আমাদের উৎপাদন খরচ বাড়বে এবং রপ্তানি কমে যেতে পারে।” বিশ্বব্যাপী এই অনিশ্চয়তার মধ্যে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, এই পরিস্থিতি কতদিন চলবে? ট্রাম্প যদি এই নীতি দীর্ঘমেয়াদি করেন, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়তে বাধ্য।
একদিকে যেমন আমদানি-রপ্তানিতে ধাক্কা, অন্যদিকে মুদ্রাবাজারেও তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপি, ইউরো ও ইয়েন দুর্বল হতে শুরু করেছে, যা আবার আন্তর্জাতিক ব্যালান্স অব পেমেন্টে প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন প্রতিটি দেশের উচিত দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করা এবং নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করা। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও বিকল্প বাজার নিয়ে ভাবা জরুরি। নয়তো এই শুল্ক-বোমার ছোবল বিশ্বজুড়ে মন্দার আশঙ্কা তৈরি করতে পারে। সর্বশেষে বলা যায়, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে যেমন আমেরিকার কিছু শিল্পগোষ্ঠী খুশি, তেমনি অধিকাংশ দেশ চিন্তিত। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাও এই নীতিকে উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেছে। এখন দেখার বিষয়, ভারত, চিন, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই শুল্ক যুদ্ধের জবাব কীভাবে দেয়। তবে একথা নিশ্চিত, এই নতুন অর্থনৈতিক যুদ্ধের কেন্দ্রে এখন পুরো বিশ্ব, আর সেই যুদ্ধে রাশিয়া যেন একমাত্র ‘নিরপেক্ষ দর্শক’ হয়ে বসে আছে।