Raniganj Cloth Merchants New Committee Reception : ৩ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার, রানীগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের অডিটোরিয়ামে ছিল একেবারে উৎসবের আবহ। কারণ এই দিনটি শুধুমাত্র একটা সাধারণ সভা ছিল না, ছিল রানীগঞ্জ ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পুরাতন কমিটিকে বিদায় জানানোর এবং নতুন কমিটিকে বরণ করে নেওয়ার এক অসাধারণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিশিষ্ট বস্ত্র ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে জমে ওঠে এই অনুষ্ঠান। নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানাতে এবং পুরোনো নেতৃত্বকে সম্মান জানাতে গোটা হলভর্তি মানুষের মধ্যে ছিল এক আবেগঘন পরিবেশ। পুরোনো কমিটির সভাপতি প্রদীপ গোয়েল, সম্পাদক পঙ্কজ সোমানি ও কোষাধ্যক্ষ রবি সোমানিকে হাতে গোলাপ তুলে বিদায় জানানো হয়, আর সেই মুহূর্তে গোটা চেম্বারে হাততালির শব্দে ছেয়ে যায়, যেন রানীগঞ্জের কাপড় ব্যবসার একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটছে। অনুষ্ঠান শুরু হয় প্রথাগত পদ্ধতিতে, প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং অতিথিদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়ার মধ্য দিয়ে। উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে ছিলেন এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজসেবী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। নতুন কমিটির সভাপতি হিসেবে সন্দীপ সোমানির নাম ঘোষিত হতেই গোটা মঞ্চে উচ্ছ্বাসের ঝড় ওঠে। সম্পাদক হিসেবে রবি সোমানি আবার নতুন দায়িত্বে ফিরে এলেন, আর কোষাধ্যক্ষের গুরুদায়িত্ব উঠল জয়দীপ দত্তের কাঁধে। সন্দীপ সোমানি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “এই দায়িত্ব শুধু একটা পদের নয়, এটা একটা বিশ্বাসের প্রতীক। আমি আমার দল এবং রানীগঞ্জের প্রত্যেক কাপড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করব।”

রবি সোমানি জানান, “আগামী তিন বছর অ্যাসোসিয়েশনের উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য। সদস্যদের স্বার্থরক্ষা, ব্যবসার প্রসার এবং আধুনিকীকরণের দিকে আমরা জোর দেব।” অন্যদিকে নতুন কোষাধ্যক্ষ জয়দীপ দত্ত বলেন, “আমি শুধু হিসাব রাখব না, আমি প্রত্যেক সদস্যের পাশে থাকব, তাঁদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত পুরাতন সভাপতি প্রদীপ গোয়েল চোখে জল নিয়ে বলেন, “আমরা অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছি, কিছু হয়েছি, কিছু হয়নি। কিন্তু আমি নিশ্চিত নতুন নেতৃত্ব আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে অ্যাসোসিয়েশনকে।”
এই অনুষ্ঠান শুধু একটি সংগঠনের নেতৃত্ব বদলের জন্য ছিল না, এটা ছিল নতুন ভাবনা, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর দিন। রানীগঞ্জ ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন শুধু একটি বাণিজ্যিক সংগঠন নয়, এটি গোটা এলাকার বস্ত্র ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র। এই সংগঠনের কাজ শুধু সদস্যদের ব্যবসা পরিচালনায় সাহায্য করা নয়, তারা সামাজিক দায়িত্ব পালনেও সমানভাবে সচেষ্ট। পূর্ববর্তী কমিটির সময়কালে কোভিড পরিস্থিতিতে খাদ্য, ওষুধ এবং অর্থসাহায্য দেওয়া হয়েছিল শতাধিক পরিবারকে। বিভিন্ন সময়ে ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প, স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবির, ট্রেনিং সেশনের আয়োজন করে এই সংগঠন সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছে।
নতুন কমিটির কাছে প্রত্যাশা অনেক বেশি। সদস্যরা আশা করছেন— রেগুলার ওয়ার্কশপ, ডিজিটাল মার্কেটিং ট্রেনিং, ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানিং-এর মত আধুনিক উদ্যোগ নেওয়া হবে, যা আগামী দিনে কাপড় ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের আরও সচেতন করে তুলবে। এক সদস্য বলেন, “আজকে শুধু দোকান খুলে বসে থাকলে হবে না। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, GST জ্ঞান, কাস্টমার হ্যান্ডলিং— এই সব কিছুতেই পারদর্শী হতে হবে। আমাদের নতুন নেতৃত্ব এই দিকগুলো নিয়ে এগোলে ভালো হবে।”
রানীগঞ্জ অঞ্চলের কাপড় ব্যবসা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম পুরনো এবং শক্তিশালী ব্যবসাগুলির মধ্যে পড়ে। বহু পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তাই এই সংগঠনের নেতৃত্ব কেবল ব্যক্তি নয়, এটি গোটা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের আত্মার প্রতিনিধিত্ব করে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের একটি বিশেষ অংশ ছিল পুরোনো ও নতুন নেতৃত্বকে নিয়ে স্মৃতিচারণ পর্ব। পুরাতন সদস্যরা তাঁদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার সময় বলেন, “আগে শুধু কনসাইনমেন্ট নিয়ে ভাবতাম, এখন ভাবি পরিবেশ দূষণ, কাস্টমার রিলেশন, ট্যাক্স ফাইলিং, সবকিছুই শেখা জরুরি।”
এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বোঝা গেল, রানীগঞ্জ ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন এখন শুধুই একটা সংগঠন নয়, এটি একটা চলমান পরিবার, যেখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য কাজ করেন। আগামী দিনে এই সংগঠন শুধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখবে না, তারা হবে এলাকার সামাজিক উন্নয়নের এক বড় শক্তি।
অনুষ্ঠানের শেষে সদস্যদের জন্য ছিল হালকা আপ্যায়ন এবং একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রানীগঞ্জের এক তরুণ শিল্পী মঞ্চে গান পরিবেশন করেন, সাথে স্থানীয় এক নৃত্যগোষ্ঠীর পরিবেশনা ছিল চোখধাঁধানো। সব মিলিয়ে একটি রঙিন সন্ধ্যা, যা রানীগঞ্জের স্মৃতিতে থেকে যাবে অনেকদিন।
এই নতুন কমিটির সংবর্ধনার মাধ্যমে আবারও প্রমাণ হয়ে গেল— পরিবর্তন মানেই শেষ নয়, এটি একটি নতুন সূচনা। এখন দেখার, নতুন নেতৃত্ব তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে কতটা সফল হয়। আপাতত রানীগঞ্জ ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা আশাবাদী, এবং অপেক্ষায়— একটি নতুন, উন্নত, দিশাময় পথচলার জন্য।