Saturday, April 12, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যজামুরিয়া বাজারে কাপড়ের দোকানে

জামুরিয়া বাজারে কাপড়ের দোকানে

Fire breaks out at Jamuria preparation cloth shop:জামুরিয়া বাজারের ভোরবেলার চেনা ছন্দ যেন হঠাৎই থমকে গেল। কাপড়ের দোকান থেকে হঠাৎ করে কালো ধোঁয়া আর আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়তে দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সকাল প্রায় সাড়ে আটটা নাগাদ, যখন দোকান খোলার প্রস্তুতি চলছিল। হঠাৎই দেখা যায় একটির পর একটি দোকান থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে, আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই গোটা এলাকা কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। “আগুন লাগার সময় আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো রান্নাঘরের কিছু ঘটনা। কিন্তু পরে দেখি কাপড়ের দোকানটাই আগুনে জ্বলছে,” জানালেন পাশের দোকানের মালিক রঞ্জিত বাবু।

sangbad bangla 1680626240

দমকল আসার আগেই স্থানীয়রা প্রাণপণে জল টানতে শুরু করেন—কেউ বাড়ির কল থেকে, কেউ বা আশেপাশের পুকুর থেকে বালতি বালতি জল এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কেউ কেউ ধুলো, বালু, পুরনো কাপড় দিয়েও আগুন চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। একপ্রকার মানুষের ঢল নেমে যায় কাপড়ের দোকানের সামনে, কেউ মোবাইলে ভিডিও তুলছে, কেউ আবার ফোনে পুলিশ-দমকলকে খবর দিচ্ছে। কিন্তু আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে মুহূর্তের মধ্যেই গোটা দোকান পুড়ে যায়। এক দোকানের আগুন থেকে আশেপাশের আরও দু-তিনটি দোকানে ছড়িয়ে পড়ে আগুন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিকাশ দত্ত বলেন, “এই বাজারে এত বড় আগুন আমরা বহু বছর পরে দেখছি। কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে একেকটা দোকানে। নতুন মাল এসেছে দোকানে—বৈশাখী সেল শুরু হতো বলে প্রস্তুতি নিচ্ছিল সবাই। এখন সব শেষ।”

দমকলের মোট তিনটি ইঞ্জিন আসে ঘটনাস্থলে। প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। জামুরিয়া থানার পুলিশ ও দমকল আধিকারিকেরা পুরো এলাকাটি ঘিরে ফেলে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান, শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লাগতে পারে। তবে কারও গাফিলতি ছিল কি না, কোনও দাহ্য বস্তু মজুত ছিল কি না, বা এটি কোনও ষড়যন্ত্র কি না—তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জানা গেছে, যেই দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত, তার মালিক শ্রীযুক্ত পরিতোষ দাস। তিনি বলেন, “কাল রাতেই দোকান বন্ধ করে গেছি, সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। সকালে এসে দেখি—দোকানটা শেষ হয়ে গেছে। সব নতুন মাল এসেছিল, এক পয়সাও উঠল না।” পরিতোষবাবুর চোখে জল, তার দোকান ছিল জামুরিয়া বাজারে বিখ্যাত সুতির শাড়ি আর বেনারসির জন্য। আশেপাশের এলাকা থেকেও ক্রেতারা আসতেন তাঁর দোকানে।

এই ঘটনার পর স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে প্রশাসনের প্রতি। বহুদিন ধরেই বাজার এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ ছিল—আগুন নেভানোর কোনও আধুনিক ব্যবস্থা নেই, দাহ্য বসুদের সংরক্ষণে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা নেই, আর অল্প বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়, যার ফলে শর্ট সার্কিটের ঘটনা ঘটে চলেছে।

বাজার কমিটির সভাপতি বলেন, “আমরা আগেই প্রশাসনকে বলেছিলাম এখানে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বসানোর জন্য। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজ যদি সেটা থাকত, তাহলে এত বড় ক্ষতি হতো না।”

8

দমকল বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এই বাজারে দোকানগুলোর ভিতর খুব ঘনিষ্ঠভাবে বসানো হয়েছে, মাঝখানে ফাঁকা জায়গা নেই। ফলে আগুন ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ বেশি। আগুন নেভানোর ব্যবস্থাও নেই দোকানগুলিতে। আমরা এবার দোকান মালিকদের নিয়ে বৈঠক করব, যাতে ভবিষ্যতে কেউ সচেতন থাকে।”

এই ঘটনায় আহতের কোনও খবর না থাকলেও, এক বৃদ্ধ ক্রেতা ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দোকানের শ্রমিকদের মধ্যে কেউ কেউ সামান্য দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে।

এই আগুন শুধু দোকান নয়, বহু মানুষের জীবনের উপর ছায়া ফেলল। জামুরিয়া বাজারের হাজার হাজার মানুষের রুজি-রুটি এই দোকানগুলির উপর নির্ভর করে। দোকান বন্ধ থাকলে তাদের খাবার জোটে না। আবার যেসব পরিবার বস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে চলত, তাদের সামনে অনিশ্চয়তা।

এই ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায়ও হইচই পড়ে যায়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments