A woman is desperate to ‘stand around’ on the Internet near Hama : বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র দিয়ে এএফসি এশিয়ান কোয়ালিফিকেশন পর্বের যাত্রা শুরু করল সুনীল ছেত্রীর ভারতীয় দল। বহু প্রত্যাশা নিয়ে খেলা শুরু হলেও ম্যাচের শেষে ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের মনে হতাশার ছাপ পড়েছে। মালদ্বীপের বিরুদ্ধে দুরন্ত জয় পেয়েও বাংলাদেশের আক্রমণাত্মক খেলার সামনে কার্যত দিশাহারা হয়ে পড়েছিল ভারতীয় দল। বিশেষত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ খেলা বাংলাদেশি ডিফেন্ডার হামজা চৌধুরীর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সামনে কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েন ভারতীয় দলের কিংবদন্তি স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রী। বয়সের ভার এবং দীর্ঘ অবসর কাটিয়ে জাতীয় দলে ফেরা ছেত্রীর ফর্ম নিয়ে এখন ফুটবল মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
হামজা চৌধুরীর দুরন্ত ডিফেন্স আর ছেত্রীর ব্যর্থতা
ম্যাচের শুরু থেকেই বাংলাদেশের ডিফেন্সে ‘দেয়াল’ হয়ে দাঁড়ান হামজা চৌধুরী। তার উদ্দেশ্য ছিল স্পষ্ট— ভারতের সবচেয়ে অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রীকে আটকানো। খেলা যত এগিয়েছে, হামজার টাইট মার্কিং আরও স্পষ্ট হয়েছে। সুনীল বল পেলেই তার সামনে হাজির হয়ে বল কেড়ে নিচ্ছিলেন হামজা। মাঠে সেই পুরনো ছন্দটা যেন হারিয়ে ফেলেছিলেন ছেত্রী। খেলার ৮৩ মিনিটে ফাঁকা গলে গোল করার সুবর্ণ সুযোগ পেলেও তা নষ্ট করলেন তিনি। ছেত্রীর পায়ের জাদু যেন হারিয়ে গিয়েছিল এই ম্যাচে। অন্যদিকে ভারতীয় দলের অন্য তারকা খেলোয়াড় শুভাশিস বসু দুটো গোল করার সুযোগ পেলেও দুটোই মিস করেন। মাঠে ছন্নছাড়া লাগছিল গোটা ভারতীয় দলকেই।
ছেত্রীর বয়স নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
৮ মাস পর জাতীয় দলে ফিরে মালদ্বীপের বিরুদ্ধে হেড দিয়ে দুর্দান্ত গোল করায় ছেত্রীর ফর্ম নিয়ে আশাবাদী ছিলেন ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে দেখা গেল একেবারে উল্টো ছবি। সুনীলের শারীরিক সক্ষমতা আর গতি আগের মতো নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ছেত্রী যখন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে শুরু করেছিলেন, তখন তার গতি আর আক্রমণাত্মক মনোভাব দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেন। কিন্তু বয়স এখন ৪২ ছুঁইছুঁই, ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এএফসি কোয়ালিফিকেশন পর্বের পুরো লড়াইয়ে ছেত্রী সফল হতে পারবেন তো? বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে তার ফিটনেস সমস্যাই স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে।
বাংলাদেশের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং হামজার উত্থান
বাংলাদেশের ফুটবল দলকে আগের থেকে অনেক উন্নত মনে হয়েছে এই ম্যাচে। বিশেষ করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ডিফেন্ডার হামজা চৌধুরী মাঠে দুর্দান্ত খেলে ভারতীয় আক্রমণকে কার্যত স্তব্ধ করে দেন। বাংলাদেশের কোচ জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের পরিকল্পনা ছিল সুনীল ছেত্রীকে আটকানো এবং দলের ডিফেন্সকে শক্তিশালী করা। ছেলেরা সেই দায়িত্ব দারুণভাবে পালন করেছে।’’ মাঠে হামজার ফুটবল দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস দেখে বোঝাই যাচ্ছিল, বড় মঞ্চের খেলার অভিজ্ঞতা তার কাছে নতুন কিছু নয়। হামজার পাশাপাশি বাংলাদেশের গোলরক্ষকেরও পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। ভারতের আক্রমণকে তিনি একের পর এক সেভ দিয়ে রুখে দিয়েছেন।
হংকং-এর বিরুদ্ধে পরবর্তী ম্যাচ: ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই ড্র-এর ফলে ভারতের কোয়ালিফিকেশন যাত্রা বেশ কঠিন হয়ে গেল। আগামী ১০ জুন হংকং-এর বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে নামবে ভারত। তার আগে দলের ফর্ম নিয়ে চিন্তিত কোচ ইগর স্টিম্যাক। ম্যাচ শেষে তিনি জানিয়েছেন, ‘‘আমরা অনেক সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু সেগুলো কাজে লাগাতে পারিনি। এই ভুল থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে এবং পরবর্তী ম্যাচে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরতে হবে।’’
পরবর্তী চ্যালেঞ্জগুলি ও ভবিষ্যতের ভাবনা
কোয়ালিফিকেশন পর্বের বাকি ম্যাচগুলিতে ভারতের সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ৯ এবং ১৪ অক্টোবর সিঙ্গাপুরের বিরুদ্ধে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে হবে ভারতকে। তার পর ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশে গিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে আরেকটি ম্যাচ খেলতে হবে। সেই ম্যাচে ভারত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তবে সুনীল ছেত্রীর ফর্ম এবং তার শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
ছেত্রীর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন
ভারতীয় ফুটবলের ইতিহাসে সুনীল ছেত্রী একজন কিংবদন্তি, সন্দেহ নেই। তার অসংখ্য গোল এবং দেশের জন্য অবদানের কথা ভোলার নয়। কিন্তু বয়সের সঙ্গে সঙ্গে খেলোয়াড়দের ফর্ম স্বাভাবিকভাবেই কমে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতীয় দলের এখন নতুন স্ট্রাইকারদের উপর নির্ভরশীল হওয়ার সময় এসেছে। সুনীল ছেত্রী মাঠে থাকলেও তার পাশে তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী দল তৈরি করা যায়।
উপসংহার: ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের শিক্ষা
ফুটবল শুধু খেলা নয়, এটি দুই দেশের আবেগের লড়াই। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ড্র ভারতীয় দলের জন্য একটি সতর্কবার্তা। সামনে হংকং এবং সিঙ্গাপুরের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ রয়েছে। তাই ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ভারতীয় দলকে এখন আরও শক্তিশালী কৌশল তৈরি করতে হবে এবং নিজেদের ফিটনেস ও আক্রমণাত্মক মনোভাবের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। আর ছেত্রীকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে— তিনি কি এখনও সেই পুরনো ছেত্রী? না কি সময় এসে গেছে তার ফিটনেস নিয়ে নতুন করে ভাবার?