Thursday, April 17, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসবাংলার ভূয়সী প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিহারের সাংসদ

বাংলার ভূয়সী প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিহারের সাংসদ

Ashok Kumar Yadav: বাংলার মাটিকে প্রণাম জানিয়ে এবং রাজ্যের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে মঙ্গলবার আসানসোল দক্ষিণ বিধানসভা এলাকার বানপুরে বিজেপির একটি কর্মসূচিতে অংশ নিলেন বিহারের মধুবনী লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ অশোক কুমার যাদব। ওই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিজেপি কর্মীদের মধ্যে উত্সাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হিন্দিভাষী ভোটারদের গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে এবং সেই কারণেই এই ধরনের মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

বিহারের সাংসদ অশোক কুমার যাদব বলেন, “বাংলা ও বিহার একটা সময় একই রাজ্য ছিল। বাংলার মাটিকে আমি প্রণাম জানাই। এখানে বিহারের মানুষ কাজের সুযোগ পেয়েছে এবং সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করছে। পাশাপাশি বিহারের মানুষ নিজেদের প্রতিভা ও কঠোর পরিশ্রম দিয়ে বাংলার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।” তাঁর বক্তব্যে প্রবাসী বিহারিদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও স্পষ্ট ছিল।

অশোক কুমার যাদবের এই মন্তব্য শুধু সৌজন্য নয়, বরং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বিহারের মধুবনী লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত অশোক যাদব রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে পরিচিত মুখ। তিনি জানালেন, ২০০৫ সালের পর এনডিএ সরকারের অধীনে বিহারে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি মনে করিয়ে দেন, সামনে বিহারে নির্বাচন রয়েছে এবং সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রবাসী বিহারিদের বিহারে গিয়ে ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।

এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিহার থেকে আসা হিন্দিভাষী জনগোষ্ঠীর মন জয়ে বিজেপির কৌশল যে স্পষ্ট, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিহার এবং উত্তর ভারতের বহু মানুষ কাজের সন্ধানে পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন এবং বাংলায় স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন। তাঁরা বিভিন্ন পেশায় যুক্ত, যেমন – কল-কারখানা, দোকান, ব্যবসা, পরিবহন থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেও তাঁদের অবদান রয়েছে।

এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অগ্নিমিত্রা পাল অভিযোগ করেন, “২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দিভাষীদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন।” তাঁর এই মন্তব্যের পর রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

হিন্দিভাষী ভোটারদের নিয়ে বাংলার রাজনীতিতে যে আলাদা সমীকরণ তৈরি হয়েছে, তা স্পষ্ট। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল, যেমন আসানসোল, দুর্গাপুর, হাওড়া, এবং উত্তর কলকাতায় হিন্দিভাষী ভোটাররা একটি বড় শক্তি হিসেবে গণ্য হন। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল তাঁদের পাশে টানার জন্য নানা ধরনের বার্তা দিতে শুরু করেছে।

অশোক কুমার যাদবের বক্তব্যে বাংলার প্রতি আন্তরিকতা যেমন রয়েছে, তেমনই বিহার এবং বাংলার ঐতিহাসিক সংযোগের কথাও তিনি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “বাংলা এবং বিহার একই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই সময় থেকেই দুই রাজ্যের মানুষের মধ্যে আত্মিক বন্ধন তৈরি হয়েছে। বাংলায় বিহারের মানুষের অবদান অনস্বীকার্য।”

বিহারের উন্নয়ন প্রসঙ্গেও এদিন অশোক কুমার যাদব তাঁর বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “২০০৫ সালের আগে বিহারকে অনুন্নয়নের জন্য চিহ্নিত করা হতো। কিন্তু এনডিএ সরকারের পর বিহারে নতুন রাস্তা, বিদ্যুৎ সংযোগ, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবায় উন্নয়ন হয়েছে। বিহার এখন আর পিছিয়ে নেই।” তাঁর এই বক্তব্য প্রবাসী বিহারিদের মনে প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

এই কর্মসূচি শেষে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা ছিল তুঙ্গে। এক বিজেপি কর্মী বলেন, “আমরা বাংলায় কাজ করি, কিন্তু বিহারের উন্নয়ন আমাদের গর্বিত করে। বিজেপি সরকার উন্নয়ন করেছে এবং আরও উন্নয়ন করবে।”

অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলার রাজনীতিতে হিন্দিভাষী ভোটারদের গুরুত্ব বেড়েছে এবং বিজেপি সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছে। তৃণমূল কংগ্রেসও এই ভোটব্যাঙ্কে চোখ রেখে হিন্দিভাষী মানুষের জন্য একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন হিন্দি বিদ্যালয়, রামলীলা উৎসবের সরকারি সহায়তা ইত্যাদি।

তবে ভোটের রাজনীতি ছাড়াও এই ধরনের কর্মসূচি দুই রাজ্যের মানুষের মধ্যে বন্ধন আরও মজবুত করতে পারে। প্রবাসী বিহারিরা বাংলায় কাজ করলেও তাঁদের শিকড় বিহারেই। তাই এই ধরনের উদ্যোগ তাঁদের মধ্যে নিজ রাজ্যের প্রতি দায়বদ্ধতা বাড়াতে পারে।

এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজেপি এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা করেছে – বাংলার হিন্দিভাষী ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ তৈরি এবং বিহারে বিজেপির উন্নয়নমূলক কাজের প্রচার। অশোক কুমার যাদবের বক্তব্য সেই কৌশলকেই আরও জোরালো করেছে।

শেষমেশ বলা যায়, বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে বিহারের সাংসদের এই বক্তব্য দুই রাজ্যের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দিল। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে এই ধরনের কর্মসূচি বাংলার বহুভাষিক সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করবে এবং সম্প্রীতির পরিবেশ গড়ে তুলবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments