Friday, April 18, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যশালবনীতে রেল গেট তোলাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ 

শালবনীতে রেল গেট তোলাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ 

Protest over removal of railway gate in Shalbani: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী এলাকায় বিখ্যাত মুন্ডলকুপি রেলগেটকে কেন্দ্র করে এক উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই রেলগেটটি গ্রামবাসীদের যাতায়াতের একমাত্র প্রধান সড়ক পথ। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে এই রেলগেটটি তাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তবে সম্প্রতি রেল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে এই রেলগেটটি সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়েছে, যার ফলে গ্রামবাসীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, মুন্ডলকুপি রেলগেটটি সরিয়ে ফেলা হলে ওই এলাকায় একটি আন্ডার বাইপাস নির্মাণ করা হবে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিকল্পনা করা আন্ডার বাইপাসটি তাদের রুটিন যাতায়াতের সুবিধা দেবে না। এটি শালবনী এলাকায় তৈরি করার ফলে গ্রামের মানুষের যাতায়াতের চরম অসুবিধা হবে। রেলগেটটি সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কোনো পরামর্শ বা আলোচনা না করায় তাদের ক্ষোভ আরও বেড়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ রাতের অন্ধকারে রেলগেট সরিয়ে দেওয়ার প্রয়াস চালালে গ্রামবাসীরা প্রতিরোধে নেমে পড়ে।

IMG 20250321 WA0020

গ্রামবাসীদের দাবি অত্যন্ত সরল। তারা চায়, রেলগেটটি তাদের জন্য উন্মুক্ত থাকুক অথবা আন্ডার বাইপাসটি এমনভাবে নির্মাণ করা হোক যা তাদের প্রতিদিনের যাতায়াতের সমস্যার সমাধান করবে। এই দাবিতে তারা রেলগেটের সামনে খোল-কীর্তনের মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। দফায় দফায় বিক্ষোভ চললেও দূরপাল্লার ট্রেনগুলিকে তারা বাধা দেয়নি, যাত্রীদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে। তবে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তাদের দাবিদাওয়া পূরণ না হলে বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত হবে।

এলাকার সাধারণ মানুষের বক্তব্য, “রেলগেটটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদি এটি তুলে দেওয়া হয়, তবে আমরা যাতায়াত করতে পারব না। আন্ডার বাইপাস যদি প্রয়োজন হয়, তবে তা এই রুটেই করতে হবে।”

রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সুস্পষ্ট আশ্বাস দেওয়া হয়নি। এক স্থানীয় বাসিন্দা জানালেন, “গ্রামের লোকজন দীর্ঘদিন ধরে এই রেলগেটটি ব্যবহার করছেন। রেল কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অথচ আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। রাতের অন্ধকারে এভাবে কাজ করা উচিত নয়।”

শালবনী এলাকা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একটি ঐতিহাসিক অঞ্চল। এখানকার মানুষজন তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি অত্যন্ত সংবেদনশীল। মুন্ডলকুপি রেলগেট নিয়ে আন্দোলন শুধু তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার প্রশ্ন নয়, এটি তাদের সম্মান এবং অধিকার রক্ষার আন্দোলনও বটে। এই ঘটনার ফলে স্থানীয় রাজনীতিতেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গভীরভাবে প্রোথিত। এই জেলার বহু মানুষ গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে যুক্ত এবং রেলগেটের মতো পরিকাঠামো তাদের জন্য অপরিহার্য। এই অঞ্চলের অর্থনীতি প্রধানত কৃষি ও স্থানীয় ব্যবসার উপর নির্ভরশীল। সুতরাং, এমন একটি পরিকাঠামো সরিয়ে ফেলা গ্রামের জীবনযাত্রার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

ভবিষ্যতে এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান না হলে শালবনীর গ্রামবাসীরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে পারে। রেল কর্তৃপক্ষের উচিত গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানো। কারণ, এই ধরনের ঘটনা সরকারের প্রকল্পগুলির উপর মানুষের আস্থা কমিয়ে দিতে পারে।

গ্রামবাসীদের বক্তব্য এবং তাদের আন্দোলন যেন সরকারি কর্মকর্তারা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেন, সেই প্রত্যাশা রয়েছে। তবে এ ঘটনা আমাদের শেখায় যে, যেকোনো বড় প্রকল্প বা পরিবর্তনের আগে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে আলোচনা করা অত্যন্ত জরুরি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments