IInternational Mother Language Day celebrated in Siliguri : ২১ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বাঙালি জাতির জন্য একটি গর্বের দিন। এই দিনটি ভাষা শহীদদের স্মরণে এবং মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার প্রতিশ্রুতি নিয়ে পালিত হয়। শিলিগুড়িতে, রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর এবং শিলিগুড়ি পুরনিগমের যৌথ উদ্যোগে বাঘাযতীন পার্কে এই দিবসটি উদযাপিত হয়। শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং বাংলা গানের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিলিগুড়ি পুরনিগমের মেয়র গৌতম দেব, ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার, চেয়ারম্যান প্রতুল চক্রবর্তীসহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। শিলিগুড়ি তথ্য-সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিকরাও এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
মেয়র গৌতম দেব বলেন, “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন। আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।” ডেপুটি মেয়র রঞ্জন সরকার উল্লেখ করেন, “শহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তাদের স্মৃতিকে সম্মান জানিয়ে আমরা আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির সুরক্ষা নিশ্চিত করব।”

স্থানীয় বাসিন্দা মীনা দাস বলেন, “প্রতিবছর এই দিনটি আমাদের জন্য বিশেষ। আমরা আমাদের সন্তানদের সাথে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তাদের আমাদের ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে জানাই।” শিক্ষার্থী রাহুল সেন বলেন, “এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে আমি গর্বিত। আমাদের ভাষার জন্য যারা জীবন দিয়েছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো আমাদের কর্তব্য।”
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের আয়োজন করা হয়, যেখানে স্থানীয় শিল্পীরা বাংলা গান, নৃত্য এবং কবিতা আবৃত্তি করেন। শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়, যেখানে তারা মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে।
শিলিগুড়ি পুরনিগমের চেয়ারম্যান প্রতুল চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। এই ধরনের অনুষ্ঠান সেই প্রচেষ্টারই অংশ।” শিলিগুড়ি তথ্য-সংস্কৃতি দপ্তরের আধিকারিকরা জানান, “আমরা আগামী বছরগুলোতেও এই ধরনের অনুষ্ঠান চালিয়ে যাব, যাতে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির সুরক্ষা নিশ্চিত হয়।”
স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। শিক্ষার্থীরা প্রভাতফেরি, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করে। শিক্ষক অরিন্দম ঘোষ বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ধরনের কর্মসূচি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা বাড়াতে সহায়তা করে।”
শিলিগুড়ির বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও এই দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তারা ভাষা শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্বলন, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করে। সংগঠনের সদস্য রীতা সেনগুপ্ত বলেন, “আমাদের সংগঠন প্রতিবছর এই দিনটি বিশেষভাবে উদযাপন করে। আমরা চাই আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হোক।”
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন শিলিগুড়ির সমাজে একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আরও বেশি সচেতন হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার্থী সুমন দত্ত বলেন, “এই ধরনের অনুষ্ঠান আমাদের মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে এবং আমাদের ভাষার সুরক্ষায় ভূমিকা রাখতে উদ্বুদ্ধ করে।”
ভবিষ্যতে, এই ধরনের উদ্যোগ শিলিগুড়ির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। স্থানীয় প্রশাসন এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর যৌথ প্রচেষ্টায় মাতৃভাষার সুরক্ষা ও প্রচার আরও জোরদার হবে। মেয়র গৌতম দেব বলেন, “আমরা আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।”
সার্বিকভাবে, শিলিগুড়িতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন একটি সফল ও অর্থবহ অনুষ্ঠান হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই দিবসটি শিলিগুড়ির সাংস্কৃতিক ক্যালেন্ডারে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের উদ্যোগ শিলিগুড়ির ভাষা ও সংস্কৃতির সুরক্ষা ও প্রচারে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।