Friday, April 18, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য সুবন্দোবস্ত নতুন দিগন্ত ক্লাবের

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য সুবন্দোবস্ত নতুন দিগন্ত ক্লাবের

New Diganta Club provides facilities for secondary school students and their parents:প্রতিবছর মাধ্যমিক পরীক্ষা মানেই পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁদের অভিভাবকদের উৎকণ্ঠার দিনরাত্রি। দীর্ঘ সময় স্কুলের সামনে অপেক্ষা করা, রোদের তাপে নাজেহাল হওয়া, কোথাও বসার জায়গা না পাওয়া—এই সমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় অভিভাবকদের। কিন্তু এই বছর, কাকদ্বীপের গণেশপুর তৃতীয় ঘেরির নতুন দিগন্ত ক্লাব এক নজিরবিহীন উদ্যোগ নিয়েছে, যা পরীক্ষার্থী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য সত্যিই প্রশংসনীয়। গত আট বছর ধরে কেবলমাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের পানীয় জলের ব্যবস্থা করত এই ক্লাব, কিন্তু এবছর তারা উদ্যোগকে আরও প্রসারিত করে অভিভাবকদের জন্যও সুবন্দোবস্ত করেছে।পরীক্ষার প্রথম দিন থেকেই সুন্দরবন বালিকা বিদ্যানিকেতনে পরীক্ষা দিতে আসা ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিনামূল্যে পানীয় জলের বোতল ও প্রয়োজনীয় লেখার সামগ্রী, যেমন পেন, বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, স্কুলের ঠিক বিপরীত দিকে এক খোলা মাঠে অভিভাবকদের জন্য একটি অস্থায়ী বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাধারণত, অভিভাবকরা দীর্ঘ তিন ঘণ্টা রোদে-ঝড়বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা শেষ হওয়ার অপেক্ষা করেন। এবার তাঁদের সেই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে নতুন দিগন্ত ক্লাব বিশ্রামের জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা করেছে, যেখানে তাঁরা বসে অপেক্ষা করতে পারেন। শুধু তাই নয়, তাঁদের জন্য বিনামূল্যে চা ও বিস্কুটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।ক্লাবের এক সদস্য জানান, “অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে আসেন, কোথাও বসার জায়গা থাকে না। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, শুধু পরীক্ষার্থীদের জন্য নয়, তাঁদের অভিভাবকদেরও কিছুটা স্বস্তি দেওয়া দরকার।” ক্লাবের সভাপতি সমীরণ দাস বলেন, “গত কয়েক বছর ধরেই আমরা দেখছিলাম, অভিভাবকদের অবস্থা খুবই কষ্টের। তাই আমরা সবাই মিলে ঠিক করলাম, এবার তাঁদের জন্যও কিছু করব।”এই বিশ্রামাগারে শুধু বসার ব্যবস্থা নয়, অভিভাবকদের জন্য হালকা খাবারেরও আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিন দুপুর ১২টা বাজলে চাউমিন, সিঙ্গারা, ফুচকা ইত্যাদি দেওয়া হচ্ছে, যা পরীক্ষার সময় দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করা অভিভাবকদের জন্য বেশ স্বস্তির বিষয়। মঙ্গলবার বিশেষভাবে ছিল ফুচকার আয়োজন।এছাড়া, বিশ্রামাগারের ভেতরে একটি বড় টিভি লাগানো হয়েছে, যাতে অভিভাবকরা অপেক্ষার সময় কিছু বিনোদন উপভোগ করতে পারেন। অনেক মা-বাবাই বলেন, “আগে পরীক্ষার সময় আমরা রোদে দাঁড়িয়ে থাকতাম, খুব কষ্ট হতো। এবার অন্তত একটা ঠিকানা পেলাম যেখানে বসতে পারছি, জল পাচ্ছি, কিছুটা আরাম হচ্ছে।”

নতুন দিগন্ত ক্লাব শুধু অভিভাবকদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা করেই থেমে থাকেনি, বরং পরীক্ষার্থীদের জন্যও অনেক কিছু করছে। ক্লাব সদস্যরা জানান, “পরীক্ষার আগে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করা হয়, যাতে তারা স্বাভাবিকভাবে পরীক্ষা দিতে পারে।” ক্লাবের আরও এক সদস্য যোগ করেন, “পরীক্ষার দিন সকালে যেসব পরীক্ষার্থীরা দেরিতে পৌঁছায় বা কোনো জরুরি প্রয়োজনে আটকে পড়ে, তাঁদেরও সহায়তা করা হয়।”এই উদ্যোগের ফলে স্থানীয় বাসিন্দারাও অত্যন্ত খুশি। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা হরিদাস মণ্ডল বলেন, “আগে যখন আমার ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিত, তখন আমরা এই সমস্যার মধ্য দিয়ে গেছি। এখনকার অভিভাবকরা ভাগ্যবান যে তাঁরা বসার জায়গা পাচ্ছেন, জল পাচ্ছেন, এমনকি খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে। নতুন দিগন্ত ক্লাবের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।”তবে ক্লাবের এই উদ্যোগ শুধু এক বছরের জন্য সীমাবদ্ধ থাকবে না। ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এই পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ক্লাব সম্পাদক বলেন, “এবার শুধু একটি পরীক্ষাকেন্দ্রের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে, কিন্তু আগামী বছর আমরা চেষ্টা করব আরও কয়েকটি কেন্দ্রে একই পরিষেবা দিতে। আমাদের লক্ষ্য হলো, প্রতিটি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক যাতে এই সুবিধা পান।”এছাড়া, এই ক্লাব পরীক্ষার্থীদের জন্য এক বিশেষ সাহায্য কেন্দ্র চালু করেছে, যেখানে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনে অতিরিক্ত কলম, পরীক্ষার প্রবেশপত্রের ফটোকপি, অথবা অন্যান্য দরকারি জিনিস দেওয়া হয়। এক পরীক্ষার্থীর মা বলেন, “আমার ছেলের পেন শেষ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ক্লাবের এক দাদা সঙ্গে সঙ্গে একটা নতুন পেন দিয়ে দিলেন। এই উদ্যোগ সত্যিই দরকারি।”

2c91d5a0 07d8 11ef b9d8 4f52aebe147d.jpg

কিন্তু এই বিশাল আয়োজনের খরচ কীভাবে মেটানো হচ্ছে? ক্লাব সদস্যরা জানাচ্ছেন, স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বেচ্ছায় দেওয়া অনুদান ও ক্লাবের নিজস্ব তহবিলের মাধ্যমেই এই আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। ক্লাব সভাপতি বলেন, “আমরা কেউ বড়লোক নই, কিন্তু সবাই মিলে চেষ্টা করলে এমন অনেক ভালো কাজ করা সম্ভব। স্থানীয় মানুষের সহযোগিতাই আমাদের এই উদ্যোগের প্রাণশক্তি।”এখন প্রশ্ন হলো, এই ধরনের উদ্যোগ রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় নেওয়া সম্ভব কি না? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্থানীয় ক্লাব বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো যদি এগিয়ে আসে, তবে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার সময় এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব। কলকাতা, হাওড়া, বর্ধমান বা অন্যান্য শহরেও যদি এমন বিশ্রামাগার, পানীয় জল, বসার জায়গা ও বিনোদনের ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে বহু অভিভাবকের সমস্যা দূর হতে পারে।সাধারণত, পরীক্ষার সময় অনেক অভিভাবকই তাঁদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পরীক্ষাকেন্দ্রে আসেন। কেউ আসেন দূরদূরান্ত থেকে, কেউ বা কাছাকাছি থাকেন। কিন্তু তাঁদের জন্য কোনো বসার জায়গা বা বিশ্রামের ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরা বাধ্য হন রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে বা রাস্তার পাশে অপেক্ষা করতে। নতুন দিগন্ত ক্লাবের এই উদ্যোগ সেই সমস্যার অনেকটাই সমাধান করেছে এবং এটি অন্যান্য জায়গার ক্লাবগুলোর জন্যও একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments