Madhyamik examinees are determined to overcome obstacles and reach their goals: ইচ্ছাই পরমশক্তি। কথাটির মর্মার্থ আমরা সমাজের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন সময় সত্যি হতে দেখেছি। আর সেই দৃঢ় ইচ্ছার উদাহরণ হয়ে উঠেছে নামখানার তমশ্রী মন্ডল। এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় সে বসেছে এক অনন্য প্রত্যয়ে, সমস্ত প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে। ফ্রেজারগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতের অমরাবতী গ্রামের বাসিন্দা তমশ্রী, যার উচ্চতা মাত্র আড়াই ফুট! ১০০% শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে হাঁটাচলা তো দূরের কথা, সঠিকভাবে দাঁড়াতেও পারে না সে। কিন্তু শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে সে কখনও তার স্বপ্নের পথে বাধা হতে দেয়নি।পরীক্ষার দিন ভোর থেকেই একটা আলাদা উত্তেজনা ছিল তমশ্রীর বাড়িতে। সাদা শার্ট, নীল স্কার্ট, স্কুলব্যাগ, আর নতুন খাতা-পেনসিল হাতে নিয়ে তৈরি সে। কিন্তু বাকি বন্ধুদের মতো নিজের পায়ে হেঁটে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই বাবার কোলে চেপেই সে পৌঁছল পরীক্ষাকেন্দ্র – রাজনগর বিশ্বম্ভরপুর হাই স্কুল। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, মা গৃহবধূ, অভাবের সংসারে প্রতিদিনের সংগ্রাম লেগেই থাকে। কিন্তু মেয়ের পড়াশোনায় কোনো খামতি রাখেননি তাঁরা।
তমশ্রী যখন ছোট ছিল, তখন থেকেই তার এই শারীরিক সমস্যার কথা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, হাড়ের একটি বিরল সমস্যা তার শরীরে বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াকে আটকে দিয়েছে। ফলে সে সাধারণ শিশুদের মতো বেড়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু বাড়ির লোকজন কখনও তাকে দমিয়ে রাখেননি। স্কুলের প্রথম দিন থেকে আজ মাধ্যমিক পরীক্ষার বেঞ্চ— প্রতিটা ধাপে তার পাশে থেকেছেন বাবা-মা ও স্কুলের শিক্ষকরা।তমশ্রী বলে, “আমি জানি আমার শরীরটা অন্যদের মতো নয়, কিন্তু আমার মনটা অনেক বড়। আমি নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা চালিয়ে গেছি, মাধ্যমিক পরীক্ষা দেব ঠিক করেছিলাম, আর সেটাই করছি। আমার স্বপ্ন একদিন বড় হয়ে শিক্ষক হব, যাতে আমার মতো আরও যারা আছে, তাদের সাহায্য করতে পারি।”
তমশ্রীর এই সাহসিকতার কথা জানতে পেরে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। রাজনগর বিশ্বম্ভরপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান,
“তমশ্রী আমাদের স্কুলের গর্ব। সে কখনও তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে দুর্বলতা মনে করেনি। আমরা চাই ও ভালোভাবে পরীক্ষা দিক, ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু করুক। আমরা ওর জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা করেছি, যাতে ও স্বাচ্ছন্দ্যে লিখতে পারে।”তমশ্রীর পরিবার স্বচ্ছল নয়। বাবা রাজমিস্ত্রি, মা গৃহবধূ। দিনে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে সংসার। তবু মেয়ের পড়াশোনায় কোনো খামতি রাখেননি তাঁরা। তমশ্রীর মা বলেন,
“আমরা চেয়েছি ও নিজের পায়ে দাঁড়াক, ওর স্বপ্নপূরণ হোক। প্রতিবন্ধী বলেই যদি ওকে বাড়িতে বসিয়ে রাখতাম, তাহলে ওর ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যেত।”
তমশ্রী নিজের লড়াইয়ে অটল ছিল বলেই মাধ্যমিক পর্যন্ত আসতে পেরেছে। পরীক্ষার জন্য সে খুবই পরিশ্রম করেছে, রাতে অনেকটা সময় ধরে পড়াশোনা করেছে। বাবা-মার মতোই তমশ্রীর শিক্ষকরাও ওর এই অধ্যবসায় দেখে বিস্মিত।মশ্রীর এই লড়াই শুধুমাত্র তার ব্যক্তিগত নয়, এটি সমাজের জন্যও এক শিক্ষা। সমাজের বহু মানুষ এখনো মনে করেন, প্রতিবন্ধী মানেই সে পড়াশোনা বা জীবনে কিছু করতে পারবে না। কিন্তু তমশ্রীর মতো মানুষরা এই ধারণাকে বারবার ভুল প্রমাণ করেছেন।স্থানীয় এক সমাজকর্মী বলেন, “তমশ্রীর মতো লড়াকু মেয়েরা আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারে। ওর গল্প আরও অনেক প্রতিবন্ধী শিশুকে সাহস দেবে, তাদের পরিবারের লোকজনকেও শিক্ষা দেবে যে প্রতিবন্ধকতা মানেই জীবন শেষ নয়।”
তমশ্রীর মতো হাজারো শিশু আছে, যারা প্রতিদিন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে লড়ছে। সরকারের তরফ থেকে এদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকা উচিত। বিদ্যালয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার। সরকারি বৃত্তি, বিশেষ স্কুল বা অতিরিক্ত সহায়তার ব্যবস্থা থাকলে অনেক শিশু এগিয়ে যেতে পারবেতমশ্রী ভবিষ্যতে আরও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায়। মাধ্যমিকের পর উচ্চমাধ্যমিক, তারপর কলেজের স্বপ্ন দেখে সে। কিন্তু একটাই শর্ত— পড়াশোনা চালিয়ে যেতে গেলে তাকে আর্থিক সহায়তা লাগবে। তার শিক্ষকরা ইতিমধ্যেই সরকারি সাহায্যের জন্য আবেদন করেছেন।তমশ্রী বলে, *“আমি শুধু চাই, সমাজের সবাই বুঝুক— আমাদের মতো মানুষেরও স্বপ্ন থাকে। আমাদেরও বাঁচার অধিকার আছে।”