Lakhs of devotees take a dip in the Ganges on Maghi Purnima: গঙ্গাসাগর – যেখানে ধর্ম, বিশ্বাস আর আধ্যাত্মিকতার এক মহামিলন ঘটে। প্রতিবছরের মতো এবছরও মাঘী পূর্ণিমায় গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নানের জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নেমেছে। বুধবার ভোর থেকেই গঙ্গার জলে পুণ্যস্নান করেন ভক্তরা। রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে মানুষ ছুটে এসেছেন, তবে এবারে ভিন রাজ্যের তীর্থযাত্রীদের ভিড় তুলনামূলকভাবে কম ছিল। যদিও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ও মেলা ঘিরে উৎসাহের কোনো অভাব ছিল না
ভারতের অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান গঙ্গাসাগর, যেখানে গঙ্গা মিলিত হয়েছে বঙ্গোপসাগরের বুকে। কথিত আছে, এই স্থানে কপিল মুনির আশ্রম ছিল, যেখানে ভগীরথের তপস্যায় মা গঙ্গা নেমে এসে সাগরে বিলীন হয়েছিলেন। আর সেই থেকেই প্রতি বছর মকর সংক্রান্তি এবং মাঘী পূর্ণিমায় লক্ষ লক্ষ মানুষ এই পবিত্র স্থানে এসে গঙ্গাস্নান করেন।মাঘী পূর্ণিমার পুণ্যতিথি উপলক্ষে বুধবার ভোর থেকেই শুরু হয়েছে গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান। অনেকেই রাত থেকেই জেগে ছিলেন, আর ভোরের প্রথম আলো ফুটতেই তারা ছুটে গেছেন গঙ্গার পবিত্র জলে ডুব দিতে। বয়স্ক থেকে তরুণ, পুরুষ থেকে মহিলা, সবাই একই বিশ্বাস নিয়ে নেমে পড়েছেন জলে।
হুগলি থেকে আসা এক বৃদ্ধা সরস্বতী দেবী বললেন, “প্রতিবছর আসি, কিন্তু এবার বিশেষ আনন্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে, গঙ্গা মা আমাদের আশীর্বাদ দিচ্ছেন।”প্রতিবছর গঙ্গাসাগরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ আসেন। তবে এবছর লক্ষ্য করা গেছে যে ভিন রাজ্যের তীর্থযাত্রীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম। করোনা-পরবর্তী সময়ে ভ্রমণের কিছু সীমাবদ্ধতা এবং পরিবহন সমস্যাই এর মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে স্থানীয় এবং রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ভক্তদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো।এত সংখ্যক মানুষ যখন একসঙ্গে জড়ো হন, তখন প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এবারের মাঘী পূর্ণিমার স্নানকে ঘিরে প্রশাসনের তরফ থেকে নেওয়া হয়েছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি এনডিআরএফ, সিভিল ডিফেন্স এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিও সক্রিয় ছিল।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এই বিশাল জমায়েত সামলানো চ্যালেঞ্জের, তবে আমরা যথেষ্ট প্রস্তুত। নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন জায়গায় ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়েছে, পাশাপাশি পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”বাংলার অন্যতম বৃহত্তম উৎসব দুর্গাপূজা। তখন যেমন রাজ্যজুড়ে সাজো সাজো রব থাকে, তেমনই মাঘী পূর্ণিমার সময় গঙ্গাসাগরে আসে এক অন্যরকম উৎসবের আবহ। এ যেন ধর্ম, সংস্কৃতি আর মানুষের আবেগের এক অনন্য মেলবন্ধন। যেমন দুর্গাপূজায় কলকাতার কুমোরটুলির প্রতিমা বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়, ঠিক তেমনই গঙ্গাসাগরের মেলা বাংলার অন্যতম বড় ধর্মীয় পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
গঙ্গাসাগর মেলা কেবলমাত্র ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি স্থানীয় অর্থনীতির উপরও বিশাল প্রভাব ফেলে। এই সময় ছোট দোকানদার, হোটেল মালিক, নৌকার মাঝি, এমনকি স্থানীয় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের উপার্জন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।সাগরদ্বীপের এক দোকানদার বিপ্লব মণ্ডল বললেন, “এই ক’দিনে যে ব্যবসা হয়, সেটাই সারাবছর টেনে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। ভক্তদের জন্য নানা প্রসাদ, পুজোর সামগ্রী, এমনকি খাবারদাবার বিক্রি খুব ভালো হয়।”প্তিবছরই গঙ্গাসাগর মেলায় নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যাতে আরও বেশি মানুষ এই পুণ্যতীর্থে আসতে পারেন। এবারও প্রশাসন ও রাজ্য সরকার মিলিতভাবে বিভিন্ন পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করেছে, যাতে পূণ্যার্থীদের আরও সুবিধা হয়। ভবিষ্যতে আরও বড় আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।পর্যটন দফতরের এক কর্তা বলেন, “গঙ্গাসাগর শুধু ধর্মীয় তীর্থ নয়, এটিকে পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু করাই আমাদের লক্ষ্য। সরকার ইতিমধ্যেই পরিকাঠামো উন্নয়নে মন দিয়েছে।”