Candidates go by boat to take the big test of life: দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর বিধানসভার অন্তর্গত মৌসুনি দ্বীপ—একটি মনোরম অথচ প্রতিকূল পরিবেশে অবস্থিত গ্রাম। যেখানে জীবনযাত্রার সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় এখানকার মানুষদের। আর সেই লড়াইয়ের অন্যতম উদাহরণ হল এই দ্বীপের পরীক্ষার্থীরা, যারা জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রতিদিন নৌকায় পাড়ি দিচ্ছে। মৌসুনি দ্বীপের শতাধিক মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য চিনাই নদী পেরোতে বাধ্য হচ্ছে, কারণ দ্বীপের মধ্যেই কোনো পরীক্ষাকেন্দ্র নেই।
সকাল হতেই অভিভাবকদের চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা, হাতে ব্যাগ, মনভর্তি স্বপ্ন নিয়ে পরীক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে। কিন্তু অন্যান্য শহর কিংবা মফস্বলের পড়ুয়াদের মতো তারা সরাসরি পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে পারে না। তাদের প্রথম যাত্রা শুরু হয় গ্রামের ঘাট থেকে। নির্দিষ্ট সময়ে হাজির হতে হয়, কারণ নৌকা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। প্রবল ঠান্ডা হোক কিংবা তীব্র গরম—এদের পথচলা কখনোই থেমে থাকে না।এই বছরও মৌসুনি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে পরীক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে নৌকা পরিষেবা চালু করা হয়েছে। প্রতিদিন পরীক্ষার সময়ের আগে ও পরে এই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে, যাতে পড়ুয়ারা কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হয়। অভিভাবকরাও এতে খানিকটা স্বস্তি পাচ্ছেন। তবে প্রশ্ন উঠছে, এখনো কেন মৌসুনির মতো এত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে একটি পরীক্ষাকেন্দ্র তৈরি করা গেল না?
মৌসুনি দ্বীপের এক পরীক্ষার্থী, অঙ্কিতা দাস বলছে, “পরীক্ষার দিনটিতে আমাদের অন্যদের মতো সহজ যাত্রা হয় না। আমরা ঘুম থেকে অনেক ভোরে উঠে রওনা দিই। কখনো কখনো নদী উত্তাল থাকে, কখনো প্রবল ঠান্ডা, বৃষ্টি বা কুয়াশায় কিছুই দেখা যায় না। কিন্তু পড়াশোনার জন্য লড়াই করতেই হবে, তাই আমরা সবাই অভ্যস্ত হয়ে গেছি।”
অন্য এক পরীক্ষার্থী, সায়ন মণ্ডল জানায়, “পরীক্ষার দিন আমাদের টেনশন দ্বিগুণ হয়। একদিকে পরীক্ষার চাপে মাথা গরম, অন্যদিকে যদি মাঝনদীতে নৌকা খারাপ হয়, তাহলেই সর্বনাশ। কোনোভাবে দেরি হলে, পুরো এক বছর নষ্ট হয়ে যাবে!”স্থানীয় প্রশাসন এই সমস্যা সম্পর্কে অবগত এবং এবার নৌকা পরিষেবা বাড়ানো হয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান মধুমিতা মণ্ডল বলেন, “প্রতিবছর এই দ্বীপের পরীক্ষার্থীদের কষ্ট হয়, তাই আমরা বিনামূল্যে নৌকা পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। যদিও স্থায়ী সমাধান দরকার, তবুও আপাতত এই পরিষেবা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে কোনো পরীক্ষার্থী সমস্যায় না পড়ে।”
কিন্তু মৌসুনির বাসিন্দারা চান, তাদের সন্তানদের যেন আর এই দুর্ভোগ পোহাতে না হয়। বহু বছর ধরে দাবি উঠছে, দ্বীপের মধ্যেই একটি পরীক্ষাকেন্দ্র তৈরি করা হোক। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি মিলেছে, কিন্তু এখনো সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হয়নি।
এই ঘটনাটি শুধুমাত্র মৌসুনি দ্বীপের চিত্র নয়, বরং বাংলার আরও অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাস্তবতা। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু অবকাঠামো এখনো পিছিয়ে। পড়ুয়াদের পরীক্ষা দেওয়ার মতো ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা যদি এখনো নিশ্চিত না করা যায়, তবে শিক্ষার অগ্রগতিতে বড় প্রশ্ন থেকেই যায়।