In Tollywood Uttarena, Srijit Roy’s shooting has stopped! : টলিউডে এখন উত্তেজনা তুঙ্গে। পরিচালক শ্রীজিৎ রায়ের নতুন ধারাবাহিকের শ্যুটিং হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইন্ডাস্ট্রিতে তৈরি হয়েছে তীব্র চাঞ্চল্য। এই শ্যুটিং বন্ধের নেপথ্যে রয়েছে আর্ট সেটিং গিল্ডের টেকনিশিয়ানদের অসহযোগিতা, যা পরিচালকের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভের প্রকাশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, শ্রীজিৎ রায় নাকি পূর্বে কিছু মন্তব্য করেছিলেন যা টেকনিশিয়ানদের অপমানিত করেছে। সেই মন্তব্যের জেরেই তারা একজোট হয়ে তাঁর ধারাবাহিকের শ্যুটিং বন্ধ করে দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার দাসানি ওয়ান স্টুডিওতে, যেখানে শ্রীজিতের নতুন ধারাবাহিকের সেট তৈরির কাজ চলছিল। কিন্তু শ্যুটিং শুরু হওয়ার দিনই সেট তৈরির কাজ হঠাৎ থমকে যায়। পরিচালক এবং প্রযোজক দল হতবাক হয়ে যান এমন আচরণে।
পরিচালক শ্রীজিৎ রায় এই প্রসঙ্গে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, “আমি একজন সৃজনশীল মানুষ, রাজনীতি আমার কাজের মধ্যে আসুক, তা চাই না। টেকনিশিয়ানদের আমি সবসময়ই শ্রদ্ধা করেছি। তবুও এমন আচরণ দুঃখজনক।” অন্যদিকে টেকনিশিয়ানদের দাবি, “শ্রদ্ধা শুধু কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করতে হয়। আমাদের শ্রমের যথাযথ মূল্য এবং মর্যাদা চাই।” এই অবস্থায় পরিচালকদের সংগঠনও ফেডারেশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ফেডারেশন বারবার একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিচালকদের উপর চাপ সৃষ্টি করছে, যা সৃজনশীলতার পরিপন্থী।
/anm-bengali/media/media_files/2025/02/04/RC46OOIsdbpxPf29erwa.jpg)
এর আগেও পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল ফেডারেশন, যা ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। তখনও পরিচালকদের সংগঠন সরব হয়েছিল। তবে এবার পরিস্থিতি আরও জটিল, কারণ সমস্যার সমাধানে যে কমিটি গঠনের কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে, সেটি কার্যকর হয়নি। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব, পরিচালক গৌতম ঘোষ এবং দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ইন্দ্রনীল সেন এই কমিটির অংশ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো রিপোর্ট জমা পড়েনি।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পরিচালকদের সংগঠন আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবছে। তারা ‘কম্পিটিশন কমিশন অফ ইন্ডিয়া’-তে অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক পরিচালকের কথায়, “এই ইন্ডাস্ট্রিতে সৃজনশীলতা এবং শ্রমের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। কিন্তু ফেডারেশনের একপেশে আচরণে সেই ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।”
এই ঘটনার প্রভাব টলিউডের বাইরেও পড়তে শুরু করেছে। সাধারণ দর্শকদের মধ্যেও এই বিতর্ক নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। শ্যুটিং বন্ধের কারণে ধারাবাহিকের প্রচার ও মুক্তি পিছিয়ে যেতে পারে, যা প্রযোজনা সংস্থার আর্থিক ক্ষতির কারণ হবে। একইসাথে, টেকনিশিয়ানদের কাজের সুযোগও কমে যাবে, যা ইন্ডাস্ট্রির সামগ্রিক পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এই বিতর্কের মধ্যে টলিউডের অনেক বিশিষ্ট অভিনেতা-অভিনেত্রীও মুখ খুলেছেন। অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থে সবার আগে বসে আলোচনা করা দরকার। অহং নয়, সহযোগিতা দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব।” অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “শিল্পের জগতে সৃজনশীল স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ। তবে টিমওয়ার্কের মূল্য বোঝা উচিত সবার।”
ইন্ডাস্ট্রির এই পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক মহলও সতর্ক। রাজ্যের দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও ইন্দ্রনীল সেন জানিয়েছেন, “আমরা দ্রুত কমিটি গঠন করে বিষয়টি খতিয়ে দেখব। শিল্পীদের সমস্যার সমাধানে সরকার সবসময় পাশে রয়েছে।”
বর্তমানে টলিউডে এই ঘটনার ফলে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। শ্যুটিং বন্ধের জেরে অনেক টেকনিশিয়ান, স্পট বয়, মেকআপ আর্টিস্টের রুজিরোজগার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রযোজক সংস্থারাও অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়ছে। বিশ্লেষকদের মতে, যদি দ্রুত এই সমস্যা সমাধান না করা যায়, তবে টলিউডের ভবিষ্যত প্রজেক্টগুলির উপরও এর প্রভাব পড়তে পারে।
এই পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে, ইন্ডাস্ট্রিতে সুস্থ ও সহযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সৃজনশীল মানুষদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং বোঝাপড়া থাকলে এমন সমস্যা সহজেই এড়ানো যেত। এখন দেখার বিষয়, কত দ্রুত এই জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারে টলিউড।