Saturday, April 19, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যপ্রবল তুষারপাত, বরফের চাদরে ঢাকল উত্তর সিকিম

প্রবল তুষারপাত, বরফের চাদরে ঢাকল উত্তর সিকিম

NORTH SIKKIM SNOWFALL: উত্তর সিকিমে বছরের শুরুতেই প্রকৃতির এক অপূর্ব উপহার—প্রবল তুষারপাত। মোটা বরফের চাদরে ঢেকে গেছে পাহাড়, রাস্তাঘাট, এবং বিস্তীর্ণ এলাকা। যা এই মরশুমে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্য বাড়তি পাওয়া। এই মনোরম দৃশ্য দেখে উত্তর সিকিমে থাকা পর্যটকদের খুশির ঠিকানা নেই। কেউ বরফে খেলায় মেতেছেন, তো কেউ মোবাইল ফোনে মুহূর্তগুলো বন্দি করছেন।

মঙ্গলবার বিকেল থেকেই তাপমাত্রার পারদ দ্রুত নামতে শুরু করে, এবং শীত জাঁকিয়ে বসে। এর পরপরই লাচুং, লাচেন, এবং ছাঙ্গু লেক এলাকায় শুরু হয় প্রবল তুষারপাত। বরফ পড়তে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যায়। কেউ স্নোফল উপভোগ করতে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন, আবার কেউ মোবাইলের ভিডিয়ো কলে এই অপূর্ব দৃশ্য দেখান প্রিয়জনদের। প্রকৃতির এই অপূর্ব সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকদের ভিড় ক্রমশ বেড়েই চলেছে।

wb slg 01 snowfall 7209673 08012025002423 0801f 1736276063 346

উত্তর সিকিম, সিকিম রাজ্যের অন্যতম সুন্দর এবং পর্যটনপ্রিয় অঞ্চল। এখানকার পাহাড়ি দৃশ্য, বরফে মোড়া প্রকৃতি, এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। লাচুং এবং লাচেন হল উত্তর সিকিমের দুটি জনপ্রিয় গ্রাম। লাচুং থেকে ইয়ুমথাং ভ্যালি এবং লাচেন থেকে গুরুদোংমার লেক যাওয়ার পথটি শীতকালে ভীষণ জনপ্রিয়। এই সময় পুরো অঞ্চলটি বরফে ঢাকা পড়ে এবং চারদিকে শুধুই সাদা শীতের সৌন্দর্য।

ছাঙ্গু লেক, যা ত্সোমগো লেক নামেও পরিচিত, শীতকালে এক ভিন্ন রূপ ধারণ করে। এই হিমবাহ-খাদ্যাভূত লেকটি বরফে জমে যায় এবং তার আশপাশের পাহাড়গুলোও সাদা চাদরে মোড়া থাকে। এটি পর্যটকদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ এবং শীতে তুষারপাতের কারণে এখানকার সৌন্দর্য আরও বেড়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তুষারপাতের ফলে স্থানীয় জীবনযাত্রায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে। রাস্তাঘাট বরফে ঢেকে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। তবে প্রশাসন দ্রুত বরফ পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেছে যাতে পর্যটকদের ভ্রমণে কোনো বিঘ্ন না ঘটে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও খুব খুশি কারণ এই মরশুমে পর্যটকদের ভিড় তাদের আয়ের পথ সুগম করেছে।

উত্তর সিকিমের স্থানীয় বাসিন্দারা তুষারপাতকে প্রকৃতির আশীর্বাদ হিসেবে দেখেন। তাঁদের মতে, এটি যেমন পর্যটন শিল্পকে বাড়িয়ে তোলে, তেমনই এই বরফাবৃত পরিবেশ স্থানীয় কৃষিক্ষেত্র এবং জলসঞ্চয়ের জন্য উপকারী। লাচেন গ্রামের এক বাসিন্দা তেনজিং ভুটিয়া বলেন, “আমরা প্রতি বছর শীতকালে তুষারপাতের জন্য অপেক্ষা করি। এটি আমাদের গ্রামকে নতুন জীবনের দান করে। পর্যটকরা এসে আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করেন।”

অন্যদিকে, দার্জিলিংয়েও শীতের প্রকোপ বেড়েছে। মঙ্গলবার রাতে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রিতে নেমে আসে এবং আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে যে দার্জিলিং, সুখিয়াপোখরি, মানেভঞ্জন, এবং সান্দাকফু এলাকায় তুষারপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটকদের জন্য এটি আরও একটি আনন্দের খবর।

তুষারপাতের এই মরশুমে প্রশাসন পর্যটকদের জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে। রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ার কারণে চালকদের ধীর গতিতে গাড়ি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, পর্যটকদের উষ্ণ পোশাক এবং জুতোর ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। লাচেন এবং লাচুংয়ের হোটেলগুলো পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পর্যটকদের আরামদায়ক থাকার ব্যবস্থা করছে।

এই সময় সিকিম ভ্রমণের পরিকল্পনা করে অনেকেই বিশেষ স্মৃতির সাক্ষী হতে চান। স্নোফল উপভোগের পাশাপাশি স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেওয়া, স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া, এবং প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া পর্যটকদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা।

উত্তর সিকিমের তুষারপাত শুধু পর্যটকদের নয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের মনেও এক নতুন আশা জাগিয়েছে। বছরের শুরুতেই এমন মনোরম দৃশ্য এবং পর্যটনের উন্নতি দেখে সিকিমবাসীরা খুবই খুশি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments