Saturday, April 12, 2025
Google search engine
HomeLiveমুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের বাংলো দেখার জন্য ভিড় পুণ্যার্থীদের

মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের বাংলো দেখার জন্য ভিড় পুণ্যার্থীদের

Pilgrims throng to see the Chief Minister’s dream bungalow : ২০২৫ সালের গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে রাজ্যে এক নতুন চমক সৃষ্টি হয়েছে, যার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বপ্নের বাংলো’। সম্প্রতি কপিলমুনি আশ্রমের কাছে একটি অত্যাধুনিক বাংলো নির্মাণের উদ্বোধন করেছেন তিনি। মেলার আগে এই বাংলোটি আলো ঝলমলে হয়ে উঠেছে, আর পুণ্যার্থীরা সেখানে ভিড় জমাতে শুরু করেছে। তবে, গঙ্গাসাগরের পুণ্য স্নানের সাথে এই বাংলো কি শুধু একটি বিলাসবহুল প্রাসাদ, নাকি এর মধ্যে রয়েছে কিছু গভীর অর্থ, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।

গঙ্গাসাগর মেলা, যা প্রতিবছর লাখো পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করে, এবার তার চিরাচরিত আকর্ষণের বাইরে গিয়ে নতুন মাত্রা পেয়েছে। গতকাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে গঙ্গাসাগর মেলার উদ্বোধন করেন। তবে উদ্বোধনের আগে থেকেই কপিলমুনি চত্বর সেজে উঠেছিল এক নতুন রূপে। রাতে সেগুন কাঠের বাংলোটি আলোকিত হয়ে উঠেছিল, যেন সেটি পরিপূর্ণতার প্রতীক।

AA1wZpkX

কিন্তু এই বাংলোটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কেউ বলছেন, এটা মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত স্বপ্নের প্রকল্প, আবার কেউ বলছেন, এটি সরকারি ব্যবহারের জন্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কখনো এই বাংলোতে রাত কাটাননি, এমনটাই জানা গেছে। তবে সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই বাংলোতে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষের থাকার ব্যবস্থাও হয়েছে। অনেকেই মন্তব্য করেছেন যে, বাংলোটি এতই বিলাসবহুল যে, সাধারণ মানুষের কাছে তা একটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

এটি শুধুমাত্র একটি বাংলো নয়, বরং এক ধরনের রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক চিহ্নও হয়ে দাঁড়িয়েছে। গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান করতে আসা হাজার হাজার মানুষের মধ্যে এই বাংলো একটি নতুন আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। একদিকে, বাংলোটি দেখতে আসা পুণ্যার্থীদের মধ্যে অনেকেই সেগুন কাঠের এই বিলাসবহুল নির্মাণকে রীতিমতো ‘রাজকীয়’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। অন্যদিকে, কিছু সমালোচকরা বলছেন, এটি সরকারের ‘অতিরিক্ত খরচ’ এবং ‘অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা’ ছাড়া কিছু নয়।

একজন স্থানীয় পুণ্যার্থী, অশোক মণ্ডল, জানান, “এত বড় বাংলো কিভাবে তৈরি হলো, তার ইতিহাস জানতে এসেছি। আমি ভাবছি, হয়তো এটি মুখ্যমন্ত্রীর কোনো বিশেষ পরিকল্পনা। বাংলোটি দেখলে মনে হয়, একদম রাজাদের মতো কোনো স্থান। গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নান করতে আসা আমাদের জন্য এটা এক নতুন অভিজ্ঞতা।”

আরেকজন, বেলুচরণ পাত্র, যিনি গঙ্গাসাগরের মূল চত্বরে বসবাস করেন, বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সারা রাজ্যের উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ করছেন, কিন্তু এই বাংলোটি শুধু বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয়। আমাদের এলাকায় লাখ লাখ মানুষ দিনদিন গৃহহীন হয়ে পড়ছে, অথচ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে এই বাংলো নির্মাণ করা হয়েছে।”

এই বিলাসবহুল বাংলোটির নির্মাণে প্রায় কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে এবং এটি সেগুন কাঠ দিয়ে তৈরি। সেগুন কাঠের ব্যবহার একদিকে যেমন তার স্থায়িত্ব এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে, তেমনি এটি পরিবেশের প্রতি সরকারের সচেতনতার প্রতীকও হতে পারে। তবে, এক্ষেত্রে জনসাধারণের মধ্যে কিছু বিভক্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও কিছু মানুষের মনে ক্ষোভ রয়েছে, কারণ তারা মনে করছেন, এই ধরনের বিশাল পরিকল্পনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না।

গঙ্গাসাগর মেলা কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানই নয়, এটি রাজ্যের পর্যটন এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইভেন্ট। প্রতিদিন এখানে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে, যারা শুধু ধর্মীয় উদ্দেশ্যে আসেন না, বরং এটি একটি বড় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবেও বিবেচিত হয়। এর ফলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যেও এক ধরনের উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। স্থানীয় হোটেল, রেস্তোরাঁ, পরিবহণ এবং অন্যান্য খাতগুলোতে এখন বেশ ভালো ব্যবসা হচ্ছে।

তবে, মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘স্বপ্নের বাংলো’ প্রাসাদ নিয়ে কিছু কড়া সমালোচনাও উঠেছে। বিশেষ করে, যারা গঙ্গাসাগরের উন্নয়নে কিছু বড় পদক্ষেপ দেখতে চেয়েছিলেন, তারা এই বাংলো নির্মাণের খরচকে তিরস্কৃত করেছেন। সামাজিক সেবার পাশাপাশি, কিছু বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে গঙ্গাসাগর অঞ্চলের উন্নতি এবং এলাকার জনগণের জন্য স্থায়ী কিছু কর্মসংস্থান তৈরি করা প্রয়োজন, এমন মন্তব্যও উঠে এসেছে।

একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী, সুপ্রকাশ মিত্র, বলেন, “এই বাংলো নির্মাণের খরচের পরিমাণের তুলনায় গঙ্গাসাগরের উন্নয়নে আরও বড় পরিকল্পনা আশা করেছিলাম। এতগুলো মানুষের জন্য যদি কিছু অবকাঠামোগত সুবিধা তৈরি করা যেত, যেমন আধুনিক শৌচালয়, হাসপাতাল, অথবা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা, তবে আরও অনেক ভালো হতো।”

1703147029 ganga sagar

এই প্রেক্ষিতে, রাজনৈতিক মহলে একদিকে যেমন প্রশংসা হচ্ছে, তেমনি বিরোধী পক্ষও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তারা বলছেন, রাজ্যের আসল উন্নয়ন হয়তো এই বাংলো নির্মাণের মাধ্যমে পূর্ণ হবে না, বরং সাধারণ মানুষের জন্য কার্যকরী পরিকল্পনা প্রয়োজন।

তবে, শেষ পর্যন্ত এটা বলা যেতে পারে যে, এই বাংলো শুধু একটি ইভেন্টের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে, পাশাপাশি এটি রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক বিতর্কেরও একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো এই বাংলোতে আরো অনেক কিছু হবে, কিন্তু সবার আগে এটি জনসাধারণের মন জয় করতে পারবে কিনা, তা এখন দেখার বিষয়।

এখনো গঙ্গাসাগর মেলা শেষ হয়নি, এবং বাংলোটি যে পর্যটকদের কাছে এক নতুন আকর্ষণ হয়ে উঠেছে, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এভাবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ‘স্বপ্নের বাংলো’ গঙ্গাসাগর মেলার একটি নতুন অধ্যায় লিখে চলেছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments