TMC Leader Death: মালদায় তৃণমূল নেতা দুলাল সরকারের হত্যাকাণ্ডে ক্রমশ উন্মোচিত হচ্ছে এক চমকপ্রদ ষড়যন্ত্র। ঘটনাটি মালদা জেলার রাজনৈতিক এবং সামাজিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বৃহস্পতিবার মহানন্দাপল্লির নিজ বাড়ি থেকে মাত্র ১৫০ মিটার দূরে প্লাইউড কারখানার সামনে দুলাল সরকারকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার সঙ্গে বিহার যোগ আরও গভীর হচ্ছে, এবং পুলিশি তদন্তে ধরা পড়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে, কীভাবে চার দুষ্কৃতী বন্দুক হাতে দুলালের দিকে তেড়ে যাচ্ছে। দুলাল পালানোর চেষ্টা করলেও, তাঁকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। এই ঘটনায় তৃণমূল কাউন্সিলরের অনুগামীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। রাজ্য সরকার এবং তৃণমূল নেতৃত্বও এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

পুলিশ ইতিমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে পাঁচ জনকে আটক করেছে। ধৃতদের মধ্যে দু’জন বিহারের কাটিহারের বাসিন্দা এবং একজন মালদার ইংরেজবাজারের গাবগাছি এলাকার। তদন্তে জানা গেছে, তারা পেশাদার খুনি। দুলাল সরকারকে হত্যার পরিকল্পনা বহুদিন ধরে করা হচ্ছিল। প্রায় ১০-১৫ দিন ধরে দুলালের গতিবিধির উপর নজর রাখছিল দুষ্কৃতীরা। তবে হত্যার পিছনে কে বা কারা মাস্টারমাইন্ড, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শুক্রবার ধৃতদের মালদা জেলা সিজিএম আদালতে পেশ করা হয়। সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, এই খুনের ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড এখনও অধরা। অভিযুক্তদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে। বিচারক অভিযুক্তদের ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এদিন অভিযুক্তদের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি, যা ঘটনা নিয়ে সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে।
মালদার রাজনীতি এই হত্যাকাণ্ডে নতুন করে উত্তপ্ত হয়েছে। একাংশ তৃণমূল নেতারা পুলিশের তদন্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, দুলাল সরকারের মতো জনপ্রিয় নেতার নিরাপত্তায় পুলিশের গাফিলতি ছিল। অন্যদিকে, স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, বিহার থেকে আসা দুষ্কৃতীদের কার্যকলাপ দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই হত্যাকাণ্ড মালদার রাজনৈতিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে। তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মালদায় এই ধরনের ঘটনা তৃণমূল নেতৃত্বের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। দুলাল সরকারের অনুগামীরা তাঁর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছেন।
এ ঘটনায় স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। মালদা জেলার আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। পাশাপাশি, বিহার থেকে আসা অপরাধীদের নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি উঠেছে।
এই হত্যাকাণ্ডে বিহার যোগ এবং পেশাদার খুনিদের সক্রিয়তা রাজ্য এবং স্থানীয় প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের তদন্ত জোরকদমে চলছে এবং মাস্টারমাইন্ডকে ধরা সময়ের অপেক্ষা।
দুলাল সরকারের শোকস্তব্ধ অনুগামীদের ভিড়ে শুক্রবার তাঁর শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। এই হত্যাকাণ্ড মালদার রাজনীতিতে এক গভীর ক্ষত রেখে গেল। আগামী দিনে এই ঘটনায় তদন্ত কোন দিকে মোড় নেবে এবং এর রাজনৈতিক প্রভাব কীভাবে পড়বে, তা দেখার বিষয়।