Manmohan Singh: একজন সাধারণ অথচ অনন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিংহের জীবন ছিল অনুপ্রেরণাময়। দেশের শীর্ষ পদে থেকেও তাঁর সরল জীবনযাপন মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, যিনি তার কর্মজীবনের জন্য ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন, বৃহস্পতিবার দিল্লির এমসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সাত দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে কেন্দ্র।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের জীবন নিয়ে তাঁর একসময়ের দেহরক্ষী অসীম অরুণ সম্প্রতি একটি স্মৃতিচারণমূলক পোস্ট করেছেন। অসীম, যিনি ২০০৪ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মনমোহনের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ জীবনযাপন ও বিনম্রতার কথা তুলে ধরেছেন। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন আইপিএস এবং বর্তমানে যোগী আদিত্যনাথ মন্ত্রিসভার সদস্য অসীম অরুণ, তার পোস্টে মনমোহনের মারুতি ৮০০ গাড়ির প্রতি ভালোবাসার কথা উল্লেখ করেছেন।

অসীম লিখেছেন, “ড. সিংহের নিজের একটি মাত্র গাড়ি ছিল—একটি মারুতি ৮০০। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে তাঁর বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ গাড়ির পাশে সেই মারুতি রাখা থাকত। প্রতিবার যখন কনভয় বের হতো, তিনি অপলক দৃষ্টিতে তাঁর মারুতি গাড়িটির দিকে তাকিয়ে থাকতেন। তিনি বারবার বলতেন, এই বিলাসবহুল গাড়িতে চড়া তাঁর পছন্দ নয়। তবে আমি তাঁকে বোঝাতাম যে, নিরাপত্তার স্বার্থেই তাঁকে এই গাড়িতে চড়তে হবে।”
মনমোহন সিংহের এই সরলতা এবং সাধারণ জীবনযাপন শুধু তাঁর দেহরক্ষীদের নয়, বরং তাঁর আশপাশের মানুষদেরও মুগ্ধ করেছিল। দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিলাসবহুল জীবনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তাঁর মনে ছিল তাঁর পুরোনো মারুতি গাড়ির জন্য বিশেষ টান। এই ঘটনা শুধু তাঁর বিনম্রতার উদাহরণ নয়, বরং তাঁর অতীতের প্রতি ভালোবাসারও পরিচায়ক।
মনমোহন সিংহ শুধু একজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না; তিনি ছিলেন একজন পণ্ডিত, একজন অর্থনীতিবিদ, এবং সর্বোপরি একজন অনুপ্রেরণাদায়ক নেতা। তাঁর নেতৃত্বে ভারত ১৯৯১ সালের অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠেছিল। তিনি ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন। তাঁর শাসনকাল শান্তিপূর্ণ এবং স্থিতিশীল ছিল, যা তাঁকে একটি সৎ এবং নীরব নেতা হিসেবে পরিচিতি এনে দেয়।
তাঁর মৃত্যুর পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীসহ বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা তাঁর বাসভবনে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান। মনমোহনের মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাঁর সরলতা এবং নেতৃত্ব মানুষকে আজও মুগ্ধ করে।
মনমোহন সিংহের এই কাহিনি শুধু একটি স্মৃতিচারণা নয়, বরং এটি আমাদের শেখায় যে, মহান নেতারা শুধু তাঁদের কাজ দিয়েই নয়, তাঁদের বিনম্রতা দিয়েও মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেন। তাঁর স্মৃতিচারণা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, এক জন সৎ এবং সরল জীবনের মূল্য সর্বদা অনন্য।