New enthusiasm in organizing Paush Mela of Visva Bharati:পাঁচ বছর পর পূর্বপল্লির মাঠে আবারও শুরু হতে চলেছে বিশ্বভারতীর পৌষ মেলা। ২০১৯ সালের পরে এ বছরই প্রথম বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সরাসরি মেলার আয়োজন করছে, যা ঘিরে স্থানীয় মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে। ২২ ডিসেম্বর, রবিবার ৭ পৌষের সকালে ছাতিমতলায় ঐতিহ্য মেনে মেলার সূচনা হবে। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীক্ষার স্মরণে পালিত এই দিন শান্তিনিকেতনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।এবার মেলার স্টল বুকিং অনলাইনে করা হচ্ছে, যা কিছুটা ধীরগতি সৃষ্টি করেছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে এই বিলম্ব হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, স্টল বরাদ্দ প্রক্রিয়াটি আরও স্বচ্ছ এবং নির্ভুল করতে অনলাইন ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ ঘিরে বোলপুর এবং শান্তিনিকেতনের মানুষের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, “এবার মেলায় ভিড় বাড়বে এবং আমাদের ব্যবসাও ভাল হবে। অতিমারির কারণে কয়েক বছর ধরে মেলা বন্ধ থাকায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে এ বছর মেলার আয়োজন দেখে আমরা আশাবাদী।”পৌষ মেলার ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গে এবার থাকছে উন্নত নিরাপত্তার ব্যবস্থাও। মাঠজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে এবং একটি বিশেষ নিরাপত্তা দল গঠন করা হয়েছে। জেলা এবং পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, মেলার প্রতিটি অংশে নজরদারি থাকবে এবং কোনো অভিযোগ এলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দর্শকদের জন্য মাঠে একটি মানচিত্র রাখা হবে, যা পথনির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে।

পুলিশ সূত্রে খবর, মেলা চলাকালীন দর্শকদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এতে ভিড়ের কারণে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে। মেলার পরিবেশ যাতে সুশৃঙ্খল থাকে, তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।বিশ্বভারতীর পৌষ মেলা শুধুমাত্র একটি মেলা নয়; এটি শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির একটি অংশ। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দীক্ষার স্মরণে শুরু হওয়া এই মেলা বিশ্বভারতীর আত্মার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। অতিমারির কারণে কয়েক বছর বন্ধ থাকার পরে, এ বছর মেলা নতুনভাবে শুরু হচ্ছে, যা এই অঞ্চলের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে।২০১৯ সালে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট এবং বিশ্বভারতীর উদ্যোগে পূর্বপল্লির মাঠে শেষবার পৌষ মেলা হয়েছিল। এরপর ২০২০ সালে অতিমারির কারণে মেলা বন্ধ থাকে। ২০২১ এবং ২০২২ সালে বিকল্প মেলা বোলপুর ডাকবাংলো এবং স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তবে এই বিকল্প আয়োজন মেলার মূল চেতনা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়েছিল। এ বছর আবার পূর্বপল্লির মাঠে বিশ্বভারতীর নিজস্ব উদ্যোগে মেলা ফিরে আসায় সকলের প্রত্যাশা আরও বেশি।
বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মেলার আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবারের মেলায় স্থানীয় শিল্পী এবং সাংস্কৃতিক কর্মীদের জন্য বিশেষ সুযোগ রাখা হয়েছে। মেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী গান ও নৃত্যের পরিবেশনা হবে।স্থানীয় ব্যবসায়ী অমল বিশ্বাস বলেন, “পৌষ মেলা আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। মেলা বন্ধ থাকায় আমরা শুধু আর্থিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তবে এ বছর মেলার আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে, আমাদের সেই হারানো আনন্দ আবার ফিরে আসবে।”বোলপুরের এক স্থানীয় বাসিন্দা জ্যোতিষ্কা সেন বলেন, “এই মেলা শুধু বাণিজ্যিক নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্যের একটি অংশ। মেলার মাধ্যমে আমরা আমাদের সংস্কৃতি এবং ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারি।”বিশ্বভারতীর পৌষ মেলা শুধুমাত্র স্থানীয় মানুষের জন্য নয়, বরং সমগ্র বাংলার জন্য একটি গর্বের বিষয়। এটি পর্যটন শিল্পকেও বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। মেলা নতুনভাবে আয়োজিত হওয়ার ফলে বোলপুর এবং আশেপাশের এলাকায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।এই মেলা শান্তিনিকেতনের একটি চিরন্তন প্রতীক। এটি শুধুমাত্র একটি ঐতিহ্য নয়, বরং স্থানীয় মানুষের জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। এ বছর মেলার সুষ্ঠু আয়োজন ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন পথ দেখাতে পারে।