The youth threatened to leave Bangladesh if he spoke Bengali:সম্প্রতি একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে যেখানে এক যুবক, যিনি নিজেকে ইয়াশ যাদব বলে পরিচয় দিয়েছেন, বাংলা ভাষা বললে বাংলাদেশ চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের সালানপুর ব্লকের রূপনারায়ণপুর এলাকার একটি মেলা ময়দানের বাইরের মোটরবাইক পার্কিং স্থলে। ভিডিওটি দ্রুতই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ঘটনাটি শুধু সামাজিক স্তরে নয়, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক স্তরেও আলোড়ন তুলেছে।
ঘটনাটি জানার পর, বাংলা ভাষাভাষীদের সংগঠন “বাংলাপক্ষ” এর পক্ষ থেকে শুক্রবার প্রতিবাদ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তারা রূপনারায়ণপুর ডাবর মোড় বাসস্ট্যান্ডের সামনে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন এবং এই ঘটনার নিন্দা জানান। বাংলাপক্ষের পক্ষ থেকে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির অফিসারদের সঙ্গে দেখা করে যুবকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। পরিস্থিতি এতটাই তীব্র হয় যে, চাপের মুখে যুবক ইয়াশ যাদব কান ধরে ক্ষমা চান এবং বলেন, তিনি ভুল করে বাংলাভাষীদের বাংলাদেশি বলে মন্তব্য করেছেন।

এই ঘটনা বাংলা ভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা নিয়ে এক নতুন বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে বসে বাংলা ভাষাকে অপমান করার অধিকার কারো নেই। এই ধরনের মন্তব্য আমাদের সংস্কৃতির উপর সরাসরি আঘাত।” অন্যদিকে, বাংলাপক্ষের নেতা জানান, “আমরা বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। এই ধরনের ঘটনা আর মেনে নেওয়া হবে না।”
ভিডিওটির সত্যতা এখনো যাচাই করেনি “খবর বাংলা”, তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে যে এটি স্থানীয় মেলা ময়দান সংলগ্ন একটি ছোট ঘটনার পরিণতি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বেশ কয়েকজন জানান যে যুবকটি একটি পার্কিং সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কি করার সময় এই বিতর্কিত মন্তব্য করেন। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা তাকে বারবার বলেছিলাম এমন কথা বলা ঠিক নয়, তবুও সে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।”
ঘটনাটি স্থানীয় সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছে। পশ্চিমবঙ্গের মতো একটি রাজ্যে, যেখানে বাংলা ভাষা কেবলমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচায়ক, সেখানে এমন মন্তব্য কেবলমাত্র ভাষাগত বিভাজনই নয়, বরং সামাজিক বিভেদেরও সূচনা করতে পারে। বিশেষত, বাঙালির আবেগপূর্ণ সংযোগ থাকা ভাষার প্রতি এই ধরনের অসম্মান স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বাড়িয়ে তুলেছে। এই ঘটনার ফলে বাংলাভাষী সম্প্রদায় নিজেদের মর্যাদার প্রশ্নে আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠছে।
এই ধরনের ঘটনা রাজ্যের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি অসম্মানজনক মন্তব্য পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। একজন স্থানীয় নেতা বলেন, “বাংলা ভাষার প্রতি এমন বিদ্বেষমূলক আচরণ আমরা বরদাস্ত করব না। সরকারকে এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এছাড়া, এমন মন্তব্য ভবিষ্যতে ভাষাগত বিভাজনকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী অ-বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে ইতিমধ্যেই একটি ভ্রান্ত ধারণার জন্ম হয়েছে যে তারা সাংস্কৃতিকভাবে বাঙালিদের থেকে পৃথক। এই ধরনের ঘটনা সেই বিভেদকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
রূপনারায়ণপুর পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা গেছে যে ঘটনার বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে এবং পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। যদিও ইয়াশ যাদব প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন, স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে চান। অনেকেই বলছেন, “ক্ষমা চাইলেই হবে না। এর বিরুদ্ধে উদাহরণস্বরূপ ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে কেউ ভবিষ্যতে এমন মন্তব্য করার সাহস না পায়।”
এই ঘটনাটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে বাঙালির কাছে তাদের ভাষা শুধু কথা বলার একটি মাধ্যম নয়, এটি তাদের পরিচয়, গর্ব এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। ভাষার প্রতি বাঙালির এই আবেগ নতুন নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে কাজী নজরুল ইসলাম, বাংলা ভাষার মর্যাদা নিয়ে বারবার কাজ করেছেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এক প্রবীণ নাগরিক বলেন, “বাংলা আমাদের অস্তিত্ব। এর মর্যাদা রক্ষার জন্য আমরা প্রয়োজনে রাস্তায় নামব।”
রূপনারায়ণপুরের এই ঘটনা কেবলমাত্র একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি ভাষাগত সম্প্রীতির গুরুত্ব নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। বাংলা ভাষা পশ্চিমবঙ্গের মাটি ও মানুষের আত্মার সাথে গভীরভাবে যুক্ত। এই ভাষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। ইয়াশ যাদবের মতো ঘটনা যদি আমরা শক্ত হাতে মোকাবিলা না করি, তবে তা ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ঘটনার সত্যতা যাচাই করা এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা আমাদের সবার দায়িত্ব। বাংলা ভাষার গৌরব রক্ষা করতে আমরা সকলে একসঙ্গে কাজ করি।