Saturday, April 12, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসশিশু দিবসে মোবাইল আসক্তি নিয়ে সচেতনতার বার্তা

শিশু দিবসে মোবাইল আসক্তি নিয়ে সচেতনতার বার্তা

Childrens Day: রানিগঞ্জের শ্রী দুর্গা বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিভাগে শিশু দিবস উপলক্ষে মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে এক সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের সৃজনশীল উপস্থাপনায় ছিল একটি আবেগঘন নাটক এবং গানের আসর। শিশুদের মধ্যে মোবাইল ফোনের আসক্তির ক্ষতিকর প্রভাব বোঝাতে এক মনোমুগ্ধকর নাটক মঞ্চস্থ হয়, যেখানে তুলে ধরা হয় মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে শিশুদের চোখে যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে, তা নিয়ে বিশদ আলোচনা।

নাটকটির মূল বার্তা ছিল, মোবাইলের অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম কীভাবে শিশুরা দৃষ্টিশক্তি হারানোর মতো গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। শিশুদের চোখের উপর মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার কী ক্ষতি ডেকে আনতে পারে, তা নাটকের মাধ্যমে সহজ ভাষায় দেখানো হয়। এই নাটকটি দেখে অনেক শিশু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে, এবং তাদের চোখে জল আসে। শিশুদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতেই ছিল এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। শিক্ষকদের মতে, বর্তমান যুগে মোবাইল ফোন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং অনেক শিশুদের জন্য অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম একটি বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

1118378 untitled design 36

এই অনুষ্ঠানে এক শিক্ষক বলেন, “আমরা চাই শিশুরা তাদের সময় মোবাইলের বাইরে পড়াশোনা, খেলাধুলা এবং প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটাক। মোবাইল তাদের জীবনকে সীমাবদ্ধ করে ফেলছে। যদি এই অভ্যাস তাদের ছোটবেলায়ই তৈরি হয়, তবে তারা ভবিষ্যতে আরও বড় সমস্যায় পড়তে পারে।” শিক্ষকরা এই নাটকটির মাধ্যমে শিশুদের বোঝাতে চেষ্টা করেন, মোবাইলের ব্যবহার কীভাবে তাদের পড়াশোনা এবং দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করছে। তারা বলেন, “আমরা চাই শিশুরা জীবনের মজার দিকগুলি উপভোগ করুক এবং সেটি স্ক্রিনের বাইরের জগতে।”

শিশু দিবসে মোবাইল আসক্তির মতো বিষয়টি নিয়ে এভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করা সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। আজকের দিনে প্রতিটি পরিবারেই শিশুদের মধ্যে মোবাইল আসক্তি একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুর মনোযোগ শক্তি কমিয়ে দেয় এবং তাদের সামাজিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। একজন মনোবিজ্ঞানী এই বিষয়ে বলেন, “শিশুরা স্ক্রিনে সময় কাটাতে এতটাই ব্যস্ত থাকে যে, তারা আর খেলার মাঠে যেতে বা প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে চায় না। এর ফলে তাদের মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটে।”

এই অনুষ্ঠানের পর অনেক অভিভাবক তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। এক মা বলেন, “আমি প্রতিদিনই আমার সন্তানের হাতে মোবাইল দিয়ে রাখি যাতে সে শান্ত থাকে, কিন্তু এই নাটকটি দেখে আমি বুঝতে পেরেছি যে, এটি তার জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে।” মোবাইলের প্রতি শিশুদের আসক্তি কাটাতে অভিভাবকদেরও এই অনুষ্ঠানে পরামর্শ দেওয়া হয় যে, তারা যেন তাদের সন্তানদের খেলার জন্য বাইরের জগতে নিয়ে যান এবং তাদের সাথে মানসম্পন্ন সময় কাটান।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, শিশুদের মধ্যে মোবাইল আসক্তি কমাতে প্রাথমিকভাবে তাদের অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসা জরুরি। মনোবিদরা বলছেন, শিশুরা প্রায়শই মোবাইল ব্যবহারকে বিনোদনের মাধ্যম মনে করে, এবং অভিভাবকরা তাদের হাতের কাছে মোবাইল দিয়ে শিশুকে শান্ত রাখতে চান। এতে শিশুরা স্ক্রিন টাইমে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে যে, পরে তারা মোবাইল ছাড়া অন্য কোনো কাজেই মনোযোগ দিতে পারে না। এই ধরনের সচেতনতার বার্তা শিশু দিবসের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিনে খুবই প্রাসঙ্গিক।

শিশু দিবসকে উপলক্ষ করে এই ধরনের সচেতনতামূলক নাটক শিশুদের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তেমনই সমাজের প্রতিটি সদস্যের জন্যও ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। রানিগঞ্জের এই বিদ্যালয়ের উদ্যোগ একটি বড় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এবং এই ধরনের সচেতনতা সমাজে আরও বেশি প্রয়োজন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments