Digha Unrest: দীঘা, পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র, যা তার সমুদ্রতট এবং সুদৃশ্য সৈকতের জন্য বিখ্যাত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নিউ দিঘার ক্ষণিকা মার্কেটের দোকান তৈরিকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একটি নতুন দোকান তৈরিকে কেন্দ্র করে ক্ষণিকা মার্কেটে যে হট্টগোল শুরু হয়েছে, তা শেষমেশ রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছে। স্থানীয় দোকানদারদের এবং একটি ব্যবসায়ী কমিটির পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে, ডলি দাস মহাপাত্র নামে এক মহিলা বেআইনিভাবে তার স্বামী জগদীশ দাস মহাপাত্রের জন্য একটি দোকান তৈরি করছেন। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই সোমবার সকালে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়।
সকালে যখন ডলি দাস মহাপাত্র তার কর্মীদের নিয়ে দোকান তৈরির কাজে মগ্ন ছিলেন, ঠিক সেই সময় ব্যবসায়ী কমিটি ও স্থানীয় দোকানদার সন্ধ্যারানি চন্দ্রের পক্ষ থেকে এই দোকান বন্ধ করার দাবি জানানো হয়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয় এবং শেষমেশ পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে দোকানদারদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি এবং পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায়। স্থানীয়রা জানান, এই সময় ক্ষণিকা মার্কেট রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়, যেখানে দোকান ভাঙচুর এবং কিছু জায়গায় অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।

এই হট্টগোলের মধ্যে দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পরিষদের সদস্যরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। তবে স্থানীয় দোকানদারদের অভিযোগ, নতুন দোকান তৈরি হলে তাদের ব্যবসায় ক্ষতি হবে এবং এই ধরনের বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ জানাতেই এই সংঘর্ষ বাধে। একজন দোকানদার বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে ব্যবসা করছি, কিন্তু হঠাৎ করেই আমাদের ব্যবসার জায়গা নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। আমরা চাই, প্রশাসন এই বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নিক।”
এদিকে, ডলি দাস মহাপাত্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাকে দীর্ঘদিন ধরেই হুমকি দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, “আমার স্বামী জগদীশ দাস মহাপাত্র একটি বৈধ দোকান তৈরি করছিলেন, কিন্তু ব্যবসায়ী কমিটি এবং কিছু স্থানীয় দোকানদার আমাদের বিরোধিতা করে আমাদের কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করছেন।”
পুলিশের উপস্থিতিতে এই সংঘর্ষ আরও তীব্র আকার নেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় উত্তেজনা প্রশমিত করার চেষ্টা চলে। তবে দোকানদারদের মধ্যে বিভাজন এবং উত্তেজনার প্রভাব শুধু এই দোকানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং গোটা নিউ দিঘার ক্ষণিকা মার্কেট এলাকার ব্যবসায় পরিবেশের ওপরেও পড়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই ধরনের বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ তারা তদন্ত করছেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
দীঘার মতো একটি পর্যটনকেন্দ্রে এই ধরনের অস্থিরতা শুধু স্থানীয় ব্যবসার ওপর নয়, বরং পর্যটকদের ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দীঘায় এসে পর্যটকরা সাধারণত স্থানীয় দোকানগুলি থেকে নানা ধরনের সামগ্রী কিনে থাকেন, যা এখানকার স্থানীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিন্তু এই ধরনের সংঘর্ষ পর্যটকদের মনে এক ধরনের ভীতি সৃষ্টি করতে পারে এবং এর ফলে তাদের দীঘায় আসার প্রতি আগ্রহ কমে যেতে পারে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের একাংশ মনে করেন, এই ধরনের ঘটনা দীঘার ব্যবসায়িক পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। দিঘার এক প্রবীণ ব্যবসায়ী বলেন, “আমাদের এখানে স্থানীয় দোকানদারদের সাথে এমন সংঘর্ষের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের একে অপরের ব্যবসার উন্নয়ন এবং সুরক্ষায় সহযোগিতা করা উচিত, কিন্তু এর পরিবর্তে আমরা নিজেদের মধ্যে বিভাজন বাড়াচ্ছি।”
এদিকে, দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ধরনের বিরোধের স্থায়ী সমাধানের জন্য তারা স্থানীয় ব্যবসায়ী কমিটির সঙ্গে আলোচনা করবেন। একটি সমাধান খুঁজে বের করার জন্য তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণ এবং দোকানদারদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকেই স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে এড়াতে তাদের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি অবৈধ দোকান নির্মাণ এবং বেআইনি কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সামগ্রিকভাবে, দীঘার ক্ষণিকা মার্কেটে এই দোকান নির্মাণ কেন্দ্রিক সংঘর্ষ যে পরিমাণ উত্তেজনা তৈরি করেছে, তা দ্রুত মিটিয়ে না ফেলা গেলে এর প্রভাব দীঘার সামগ্রিক পর্যটন এবং অর্থনীতির ওপর পড়তে পারে। এখন স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং ব্যবসায়ী কমিটির সমন্বয়ে একটি সুষ্ঠু সমাধানের দিকে এগোনো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।