Another train accident in Bengal, Shalimar Secunderabad Express derailed: ডাউন শালিমার-সেকেন্দ্রাবাদ উইকলি এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। তবে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এই ঘটনার ফলে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। দ্রুত শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ, কিন্তু পরিষেবা স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে বলে রেল সূত্রে জানা গেছে। শনিবার ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে এই দুর্ঘটনা ঘটে, যখন পরপর তিনটি কামরা লাইনচ্যুত হয়। যাত্রীরা আপাতত সুরক্ষিত রয়েছেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ইঞ্জিনিয়াররা। পরপর রেল দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এদিন ট্রেনের গতি কম থাকায় বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পেয়েছেন যাত্রীরা।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনের সময় ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি একাধিক প্রশ্ন তুলেছিলেন। আবারও রাজ্যে এই দুর্ঘটনা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে রেলকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। ঠিক কী কারণে পরপর দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে? রেল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ওমপ্রকাশ চরণ বলেন, “শনিবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ সেকেন্দ্রাবাদ-শালিমার সাপ্তাহিক এক্সপ্রেসের দু’টি কামরা এবং একটি পার্সেল ভ্যান খড়্গপুর ডিভিশনে নলপুরের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় লাইনচ্যুত হয়েছে। যাত্রীরা কেউ আহত হননি। সাঁতরাগাছি এবং খড়্গপুর থেকে একটি সহায়ক ট্রেন ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। যাত্রীদের গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১০টি বাসের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।”
যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এক যাত্রী সুমন দত্ত বলেন, “আমরা হঠাৎ করে একটি ঝাঁকুনি অনুভব করি, তারপর দেখি ট্রেন থেমে গেছে। বাইরে এসে দেখি তিনটি কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে। ঈশ্বরের কৃপায় আমরা বড় দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেছি। কিন্তু এমন ঘটনা বারবার ঘটলে আমরা কীভাবে নিরাপদে ভ্রমণ করব?”সাধারণ মানুষের মধ্যে রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পরপর রেল দুর্ঘটনায় যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রেলের রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা এবং পুরনো যন্ত্রাংশ ব্যবহার এর প্রধান কারণ হতে পারে। রেল কর্তৃপক্ষকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “রেলের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা বারবার প্রশ্ন তুলেছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যাত্রীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করতে হবে। রেলের উচিত দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।”
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ঘটনাটির তদন্ত করছি। যাত্রীদের নিরাপত্তা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। যাত্রীরা যাতে সুরক্ষিতভাবে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন, সে বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”স্থানীয় বাসিন্দারাও এই ঘটনায় চিন্তিত। নলপুরের এক বাসিন্দা রমেশ পাল জানান, “এলাকার পাশ দিয়ে রেললাইন গেছে। আমরা প্রতিদিনই ট্রেন চলাচল দেখি। কিন্তু এমন দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদেরও ভয় হয়। রেলের উচিত যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা।”
শালিমার-সেকেন্দ্রাবাদ এক্সপ্রেস একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রেন যা পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। এই ট্রেনের মাধ্যমে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। এমন একটি ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়া রেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেয়।বিশেষজ্ঞদের মতে, রেলের আধুনিকীকরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। নতুন প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে রেলের নিরাপত্তা বাড়ানো সম্ভব। এছাড়া রেলকর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং দায়িত্ববোধ বাড়ানোও জরুরি।এদিকে, যাত্রীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে রেল কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। বিকল্প পরিবহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে যাতে যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে রেলের উচিত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা।