Wednesday, April 16, 2025
Google search engine
Homeঅন্যান্যকাঁথিতে মহাসমারোহে পালিত হল ছট পুজো

কাঁথিতে মহাসমারোহে পালিত হল ছট পুজো

Chhata Puja was celebrated in Mahasamrohe in Kanthi : কাঁথি শহরের সাধু জানা পুকুর পাড়ে মহাসমারোহে পালিত হল ছট পুজো। প্রতিবারের মতো এই বছরও কাঁথির জনগণ বিশেষ উৎসাহে এই চার দিনের উৎসবে মেতে উঠেছেন। ছট পূজা, যা মূলত দেবী প্রকৃতির ষষ্ঠ রূপে ভগবান সূর্য এবং তাঁর বোন ছাঠি মাইয়ার উপাসনার জন্য নিবেদিত, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিশেষ করে বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে ছট পূজা অত্যন্ত আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে দীপাবলির ছয় দিন পরে কার্তিক মাসের ষষ্ঠ দিনে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়, এবং সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় এর গুরুত্ব বিশেষ ভাবে মানা হয়।

এ বছরের ছট পুজো উপলক্ষে কাঁথি পৌরসভার পৌর পিতা সুপ্রকাশ গিরি নিজে উপস্থিত ছিলেন এবং এই উৎসবে তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও শেয়ার করেন। কাঁথির এই উৎসবটি বেশিরভাগ স্থানীয় বাসিন্দার জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সুপ্রকাশ গিরি জানান, “কাঁথি শহরের এই ছট পূজার ঐতিহ্য আমাদের এক সামাজিক বন্ধনে বেঁধে রাখে। এই পূজা শুধুমাত্র ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের এলাকার সংস্কৃতিরও একটি প্রধান অংশ।” এই অনুষ্ঠানে কাঁথি থানার পুলিশ আধিকারিকগণও উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ এবং জনসাধারণের সহায়তায় নিজেদের ভূমিকা পালন করেছেন।

ezgif 7 16081b6af5

উৎসবের আয়োজনে স্থানীয় কমিটি এবং প্রচুর স্বেচ্ছাসেবকের অক্লান্ত পরিশ্রমও চোখে পড়ার মতো। তাঁরা শৃঙ্খলা রক্ষার্থে এবং যাতে কোনো রকম অঘটন না ঘটে সেই বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখেন। সাধু জানা পুকুর পাড়ে এই পূজা উদযাপনের জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা বিশেষভাবে এগিয়ে আসেন এবং নিজেদের মধ্যে এক সামাজিক সহযোগিতার দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই বিশেষ চার দিনের পূজা একদিকে যেমন মানুষকে ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত করে, অন্যদিকে এটি কাঁথির সামগ্রিক সামাজিক চিত্রকেও আলাদা মাত্রা দেয়।

ছট পুজোর এই চার দিন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথম দিনে ‘নহায়-খায়’ এর মাধ্যমে এই উৎসবের সূচনা হয়, যেখানে উপবাসীরা নিরামিষ আহার গ্রহণ করে। দ্বিতীয় দিনে ‘খর্ণা’ অনুষ্ঠিত হয় এবং উপবাসীরা সেদিন সারাদিন উপবাস থেকে সন্ধ্যায় বিশেষ রান্না করা ভোগ গ্রহণ করেন। তৃতীয় দিনে পুণ্যব্রতীরা সূর্যোদয়ের আগে গঙ্গা বা নদী তীরে গিয়ে সূর্যের প্রার্থনা করেন। চতুর্থ দিনে সূর্যোদয়ের সময় আবারও অর্ঘ্য প্রদান করা হয় এবং উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।

প্রতি বছর কাঁথিতে এই পুজোর আয়োজনের মাধ্যমে এলাকাবাসী পরস্পরের মধ্যে সহযোগিতার বন্ধন গড়ে তুলছেন। এক্ষেত্রে ছট পুজোর মাধ্যমে এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটেছে, যেমন মিষ্টি, ফুল, ফল এবং পূজা সামগ্রীর ব্যবসায়িক চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ছট পূজার সময় প্রচুর ক্রেতা সমাগমের কারণে তাদের আয়ের পরিমাণে বৃদ্ধি লক্ষ্য করেন। এই বছর কাঁথি শহরে বেশ কয়েকটি ছোট বড় দোকান এবং স্টল বসেছিল, যেখানে বিভিন্ন রকমের প্রসাধন সামগ্রী, পুজার উপকরণ এবং প্রসাদ সামগ্রী বিক্রি করা হয়েছিল।

এই উৎসবের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ একত্রিত হয়ে নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ হন। ছট পুজোতে ভগবান সূর্যের উপাসনার মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সূর্যের অর্ঘ্য প্রদান ছাড়া, এই পুজোর মাধ্যমে মানুষ আত্মসংযম এবং সহনশীলতার পথ গ্রহণ করেন, যা সামগ্রিক জীবনে এক ধরনের সামঞ্জস্য এবং শৃঙ্খলা নিয়ে আসে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, কাঁথির এই ধরনের উৎসব শুধু ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন কাঁথির স্থানীয় সম্প্রদায় একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে সম্প্রীতির বার্তা প্রদান করে এবং উৎসবের দিনগুলোতে শহরে বিভিন্ন রকম সংস্কৃতিক কার্যক্রম ও মেলার আয়োজন হয়।

IMG 20221031 WA0074

ছট পুজো কাঁথি শহরের মানুষের জীবনে এক ভিন্ন রকম অনুভূতির সঞ্চার করে। এটি প্রকৃতি ও ধর্মের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, উৎসর্গ এবং দায়িত্ববোধকে একত্রে গেঁথে দেয়। স্থানীয় সমাজকর্মী স্বপন কুমার বলেন, “ছট পূজা আমাদের ঐক্য ও সম্প্রীতির প্রতীক। আমরা এই পূজার মাধ্যমে শুধু প্রার্থনা করি না, বরং একে অপরের সাফল্য ও সুখের জন্য দোয়া করি।”

আশা করা যায়, ভবিষ্যতে কাঁথির এই পুজো আরও বড় পরিসরে উদযাপন করা হবে এবং এটি এক মহান সামাজিক উদ্যোগ হিসেবে গড়ে উঠবে। ছট পুজো শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি কাঁথি শহরের মানুষের ভালোবাসা, একতার প্রতীক যা ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছেও প্রেরণা হিসেবে থাকবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments