Bullet train bridge collapses in gujrat: গুজরাটের আনন্দ জেলার কাছে ভারতের প্রথম বুলেট ট্রেন প্রকল্পের একটি নির্মীয়মান সেতু মঙ্গলবার বিকেলে ভেঙে পড়ে। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি মাহি নদীর উপর নির্মাণাধীন বুলেট ট্রেনের সেতুতে ঘটে, যেখানে এখনও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপের নীচে আটকে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দুর্ঘটনায় অন্তত দু’জন শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এবং আরও এক শ্রমিককে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জাতীয় হাই স্পিড রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (NHSRCL) জানিয়েছে, কংক্রিটের ব্লকের মধ্যে তিনজন শ্রমিক আটকে পড়েছিলেন, তাদের উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে এবং ঘটনাস্থলে ক্রেন ও এক্সকেভেটর দিয়ে তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
দুর্ঘটনার খবর পাওয়া মাত্রই আনন্দ জেলা প্রশাসন এবং দমকল কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। স্থানীয় বাসিন্দারাও সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন, কারণ সেতুটির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থাকা মানুষদের উদ্ধার করা অত্যন্ত জরুরি ছিল। বিকেল ৫টা নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটে, এবং যদিও সেতুটি কী কারণে ভেঙে পড়েছে তা এখনও পরিষ্কার নয়, তবে প্রযুক্তিগত ত্রুটি অথবা নির্মাণ ত্রুটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। NHSRCL জানিয়েছে যে, ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং দ্রুত এই দুর্ঘটনার কারণ স্পষ্ট হবে।

ভারতের প্রথম বুলেট ট্রেন প্রকল্পটি আহমেদাবাদ থেকে মুম্বই পর্যন্ত চলার পরিকল্পনা নিয়ে নির্মিত হচ্ছে। এই প্রকল্পটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি, যা আধুনিক প্রযুক্তি এবং দ্রুতগামী পরিবহণ ব্যবস্থার পথে এক মাইলফলক বলে মনে করা হচ্ছে। এই প্রকল্পটি, যা জাপানের সহায়তায় নির্মাণ করা হচ্ছে, সফল হলে ভারতের পরিবহণ ব্যবস্থায় বিপুল পরিবর্তন আনবে। জাপানের শিনকানসেন প্রযুক্তি অনুসরণ করে নির্মিত এই ট্রেনটি ঘণ্টায় প্রায় ৩২০ কিলোমিটার বেগে চলতে সক্ষম, যা আহমেদাবাদ থেকে মুম্বই যাত্রাকে মাত্র কয়েক ঘন্টায় সম্পন্ন করতে পারবে।
তবে এই প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের সময়ই এমন একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ ও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে এই ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে এড়াতে হলে আরও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, “আমরা শুনেছি বুলেট ট্রেন ভারতের জন্য বড় সাফল্য হবে, কিন্তু এই ধরনের নির্মাণ ত্রুটি এবং এর ফলে মানুষের মৃত্যু আমরা মেনে নিতে পারছি না। নিরাপত্তার বিষয়টি সবার আগে গুরুত্ব পাওয়া উচিত।”
দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেতুর কারণে প্রকল্পে কিছুটা দেরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ এই সেতুটি সম্পূর্ণ না হলে ট্রেনটি চালানো সম্ভব হবে না। আরও কিছু নির্মাণ প্রকল্পে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকরা জানিয়েছেন। যেহেতু এই প্রকল্পটি শুধুমাত্র দ্রুতগামী ট্রেনের জন্য নয়, বরং ভারতের পরিকাঠামোগত উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই প্রশাসন দ্রুত এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে চায়। একদিকে আধুনিক প্রযুক্তি এবং উন্নয়নের দিকে এগিয়ে চলেছে দেশ, কিন্তু এই ধরনের দুর্ঘটনা জনগণের মনে ভয় সৃষ্টি করছে এবং তাদের মনে প্রশ্ন তুলছে প্রকল্পের নিরাপত্তা নিয়ে।
উল্লেখ্য, এই বুলেট ট্রেন প্রকল্পটি দেশের জন্য একটি গর্বের বিষয় হিসাবে শুরু হয়েছিল এবং দেশের ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে পাল্টে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছিল। তবে এই দুর্ঘটনার পর এখন সরকারের ওপর নির্ভর করছে তারা কত দ্রুত এবং দক্ষতার সঙ্গে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে এবং জনগণের মধ্যে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারবে।
গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনার জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং নিহত শ্রমিকদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হয় এবং এই ধরনের বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি এড়াতে সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবারদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন এবং তাদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে।
এই ঘটনা গোটা গুজরাট এবং ভারতের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে, এবং দেশজুড়ে মানুষ বুলেট ট্রেন প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। যদিও প্রকল্পটি জনগণের স্বপ্নের প্রকল্প, এই ধরনের দুর্ঘটনা ও ত্রুটি সামগ্রিকভাবে এর প্রতি বিশ্বাসে প্রভাব ফেলতে পারে।