‘Governor at the Door’ Project: আগামী ২৩ নভেম্বর ২০২৪, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস তাঁর রাজ্যপাল হিসেবে দুই বছরের মেয়াদ পূর্ণ করছেন। এই উপলক্ষে রাজভবন থেকে একটি বিশেষ কর্মসূচি “আপনা ভারত – জাগতা বেঙ্গল” ঘোষণা করা হয়েছে, যা নভেম্বর মাস জুড়ে চলবে। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৯টি নতুন প্রকল্পের সূচনা করেছেন রাজ্যপাল, যার মাধ্যমে রাজভবন সরাসরি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। বিশেষত, রাজ্য সরকারের “দুয়ারে সরকার” প্রকল্পের ধাঁচে রাজভবনও শুরু করেছে “দুয়ারে রাজ্যপাল” নামে একটি সেবা, যার মাধ্যমে রাজ্যপাল নিজেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে জনগণের সমস্যার কথা শুনবেন এবং তা সমাধানের চেষ্টা করবেন।
“দুয়ারে রাজ্যপাল” প্রকল্পের সূচনা করে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বলেন, “জনগণের কাছে সরাসরি পৌঁছানোর এ এক অভিনব উদ্যোগ। আমরা চাই রাজভবনের থেকে সাধারণ মানুষকে সাহায্য পৌঁছাতে। তাদের সমস্যার কথা সরাসরি শুনতে চাই।” এই প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি সাধারণ মানুষের সেবা এবং তাদের অভিযোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজভবনের প্রতিশ্রুতি পুনঃস্থাপন করেছেন। এমন একটি পদক্ষেপ সাধারণ মানুষ এবং রাজনৈতিক মহলে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক মহলে একদিকে রাজ্যপালের এমন সক্রিয় ভূমিকা সাধুবাদ পেয়েছে, আবার অন্যদিকে কিছুটা বিতর্কও দেখা দিয়েছে, বিশেষত রাজ্য সরকারের দিক থেকে।
রাজ্যপালের এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে “আভয়া প্লাস” নামে একটি নতুন উদ্যোগও চালু করা হয়েছে, যা মহিলাদের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়ার উপর বিশেষ জোর দেবে। আর জি কর হাসপাতালের সাম্প্রতিক ঘটনার পর রাজ্যপাল নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই প্রকল্প চালু করেন। এর আওতায় মহিলাদের জন্য আত্মরক্ষামূলক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে। রাজ্যপাল বলেন, “নারীদের নিরাপত্তা এবং তাদের স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা চাই পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি নারী যেন তাদের নিরাপত্তা এবং স্বাধিকারের ব্যাপারে সচেতন হয়।”
এই “দুয়ারে রাজ্যপাল” প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সরাসরি রাজভবনের সঙ্গে জনগণের সংযোগ স্থাপন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ক্যাম্প, অভিযোগ গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট কেন্দ্র এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যৌথভাবে জনগণের সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা। বিভিন্ন জেলায় রাজ্যপাল নিজে উপস্থিত থেকে জনগণের অভিযোগ শুনবেন এবং তাৎক্ষণিক সমাধানের ব্যবস্থা নেবেন। এর পাশাপাশি রয়েছে শিক্ষামূলক কার্যক্রম, স্বাস্থ্যসেবা এবং কৃষকদের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচি।

এই প্রকল্প রাজ্যের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। কিছু মানুষ রাজ্যপালের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং বলেছেন, “রাজ্যপাল যদি সরাসরি জনগণের জন্য কাজ করেন, তাহলে আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান হবে। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমরা অনেক সময় সমস্যায় পড়ি, কিন্তু আমাদের কথা শুনতে কেউ থাকে না। এখন রাজ্যপাল নিজেই যদি এই দায়িত্ব নেন, তবে তা প্রশংসনীয়।” আবার অনেকেই মনে করছেন, রাজ্যপালের এই পদক্ষেপ একটি রাজনৈতিক পদক্ষেপ হতে পারে, যা রাজ্য সরকারের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে। এই বিষয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানানো হয়েছে, রাজ্যপালের এই উদ্যোগ রাজ্যের প্রশাসনিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে এবং এক ধরনের হস্তক্ষেপ বলে মনে হতে পারে।
তবে রাজনৈতিক বিতর্কের বাইরে, “দুয়ারে রাজ্যপাল” প্রকল্প সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি বিশেষ উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ, যারা প্রায়ই নানা ধরনের প্রশাসনিক সমস্যায় পড়েন, তারা সরাসরি রাজ্যপালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলে তাদের সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশা রাখেন। বিশেষত, কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নানা ধরনের সেবা এবং সুযোগ এনে দিতে পারে এই প্রকল্প। রাজ্যপালের আশা, “আপনা ভারত – জাগতা বেঙ্গল” কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করে একটি মজবুত বন্ধন গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ প্রভাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি রাজ্য সরকারের সেবা প্রদানের পরিকাঠামোর উপর একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে। সাধারণ মানুষের কাছে সেবা পৌঁছানোর জন্য রাজভবনের এমন উদ্যোগ রাজনীতির বাইরেও একটি সামাজিক পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রাখে। জনসাধারণের জন্য রাজভবনের একটি স্বাধীন উদ্যোগ হিসেবে এটি মানুষকে তাদের সমস্যার জন্য একটি বিকল্প পথ প্রদান করবে, যা আগামি দিনগুলোতে রাজ্যের প্রশাসনিক কাঠামোর উপর একটি নতুন আলো ফেলতে পারে।