Devastating fire in Malda’s Kaliachak multi-storey building:মালদার কালিয়াচকের গোসাই কলোনি এলাকায় গতকাল সন্ধ্যায় এক বিধ্বংসী আগুনে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। বহুতল এক ব্যবসায়িক কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ক্রীড়া সামগ্রী দোকানে আচমকা আগুন লেগে যায়, আর তার পরেই ভয়াবহ লেলিহান শিখা ও ঘন কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় পুরো ভবন। স্থানীয়রা জানান, প্রথমে দোতলা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েন। চোখের সামনেই আগুনের শিখা যখন ভয়ঙ্কর আকার নেয়, তখন তারা বুঝতে পারেন পরিস্থিতি আর স্বাভাবিক নেই। আতঙ্কিত এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন এবং তখনই খবর দেওয়া হয় দমকল এবং স্থানীয় পুলিশকে।
কালিয়াচক থানার পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দমকল বাহিনীকে সহযোগিতা করতে থাকে। দমকলের এক কর্মী বলেন, “আগুন নেভানোর জন্য প্রাথমিকভাবে স্থানীয়দের প্রচেষ্টা ছিল প্রশংসনীয়, তবে আগুন ভয়াবহ আকার নেওয়ায় এটি সম্পূর্ণভাবে দমকল বাহিনীর তত্ত্বাবধানেই আনা সম্ভব হয়েছে।” আগুন নেভাতে মোট তিনটি ইঞ্জিন প্রয়োজন হয়েছিল এবং প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না ঠিক কীভাবে এই আগুন লেগেছিল। অনেকে মনে করছেন হয়তো শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগে থাকতে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।

এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা মহেশ মণ্ডল বলেন, “প্রতিদিন এখানে কত মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন, আর কত মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন। এই ধরনের একটি ভয়ানক দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ায় ব্যবসায়ী মহল এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।” স্থানীয় ক্রীড়া সামগ্রী ব্যবসায়ী সমিতির প্রধান বলেন, “এ ধরনের আগুনের ঘটনা আমাদের ব্যবসা এবং জীবনের জন্য ভয়ঙ্কর। এটি আমাদের জন্য একটি শিক্ষা যে আগুনের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য ভবনগুলোতে যথাযথ সতর্কতা ও প্রস্তুতি থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।”
এই ঘটনায় এলাকার ব্যবসায়ী মহল বেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যেহেতু ক্রীড়া সামগ্রী ব্যবসায়ের বেশিরভাগ সামগ্রীই দাহ্য, তাই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রচুর পরিমাণ পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে, ক্ষতির পরিমাণ কয়েক লক্ষ টাকার ওপরে। মালদার কালিয়াচকের মতো উন্নয়নশীল এলাকায় এমন ঘটনা ঘটে যাওয়া একটি বিশাল ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। শুধু ক্ষতি নয়, এর পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের মানসিক নিরাপত্তায় বড় প্রভাব ফেলেছে। অনেকেই ভেবেছেন, ভবিষ্যতে এমন কোনো ঘটনা ঘটলে কীভাবে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন।
এই ভয়াবহ ঘটনা নিয়ে কালিয়াচকের মানুষ এবং মালদা জেলার অন্য এলাকাবাসীও চিন্তিত। এখন প্রশ্ন উঠছে—স্থানীয় প্রশাসন এবং ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন। অনেকেই মনে করছেন, এলাকার সমস্ত ব্যবসায়িক ভবনগুলোতে আধুনিক অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা স্থাপন করা উচিত এবং নিয়মিত অগ্নি নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত। এছাড়া ভবিষ্যতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে দমকল বাহিনীর সুবিধা আরও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে।
একটি ব্যবসায়িক কেন্দ্র আগুনে পুড়ে গেলে তার প্রভাব কেবলমাত্র ব্যবসায়ীদের উপরই পড়ে না; আশেপাশের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা এবং মানসিক শান্তির উপরও প্রভাব ফেলে। স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দারা প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবি জানিয়েছেন যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কালিয়াচকের এই দুর্ঘটনাটি তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া ব্যবসায়িক ভবন পরিচালনা করা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
মালদার এই ঘটনাটি শুধু কালিয়াচকের নয়, পুরো জেলার জন্য একটি সতর্ক সংকেত হিসেবে ধরা হচ্ছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, সেই জন্য দমকল বিভাগের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন এবং ব্যবসায়ীদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন।