Governor inaugurate the puja of Kanthi Nandnik Club : পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি শহরে, গত শুক্রবার এক উজ্জ্বল এবং আনন্দময় অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ‘নান্দনিক’ ক্লাবের দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করেন। এই পুজোটি এবারে ৪৫ বছরে পা দিয়েছে এবং এটি অঞ্চলের বড় বাজেটের পুজো কমিটির মধ্যে অন্যতম। অধিকারী পরিবার, যারা এই ক্লাবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত, তাঁদের আমন্ত্রণেই রাজ্যপাল বোস এই পুজোর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কাঁথির প্রাক্তন সাংসদ শিশির অধিকারী, যিনি পুজোর উদ্বোধনীমঞ্চ থেকে একটি গুরুতর দাবি তুললেন। তিনি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের বিচারের দাবি করেন, যা উপস্থিত জনগণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করে।
রাজ্যপালের বক্তব্য ছিল, “ভগবান রাজ্যের জনগণের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রীরও মঙ্গল করুন।” এই মন্তব্যটি শুধুমাত্র পুজোর ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়, বরং রাজনৈতিক প্রসঙ্গেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে রাজ্যপাল রাজ্যের উন্নতি এবং শাসক দলের সুস্বাস্থ্য কামনা করেছেন। ক্লাবের পুজোর থিম, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যের নাগেশ্বরী মন্দির, স্থানীয় জনগণের মধ্যে গর্ব এবং উৎসাহের সৃষ্টি করেছে। প্যান্ডেলটি ওই মন্দিরের আদলে সাজানো হয়েছে, যা দেখার মতো এবং সত্যিই চিত্তাকর্ষক।

শিশির অধিকারী, যিনি একাধারে প্রবীণ রাজনীতিক এবং জনপ্রতিনিধি, তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে দুর্গাপুজো শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি একটি সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মও। তাঁর এই মন্তব্যে পুজোর পরিবেশে একটি গম্ভীরতা যুক্ত হয়েছে, যা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত জরুরি। অধিকারী পরিবারের সদস্য সৌমেন্দু অধিকারী, যিনি বর্তমানে কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ, তিনি এই পুজোর অর্থায়নে এবং সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
নান্দনিক ক্লাবের ইতিহাসে এই পুজোটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। গত ৪৫ বছরে এই পুজোটি একাধিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে, কিন্তু স্থানীয় সমাজের জন্য এর গুরুত্ব অপরিবর্তিত রয়েছে। ক্লাবের সদস্যরা পুজোর প্রস্তুতির জন্য পরিশ্রম করেছেন এবং এটি তাদের জন্য একসঙ্গে কাজ করার একটি সুযোগও। পুজোর সময়কালীন কার্যক্রম যেমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মহাসম্মেলন, এবং বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রমের আয়োজন করে থাকে। এতে করে শুধু পুজোর ধর্মীয় দিক নয়, বরং সামাজিক দিকও সামনে আসে।
এখন, চলুন দেখি, এই পুজোর উদ্বোধনের ফলে স্থানীয় সম্প্রদায়ের উপর কী প্রভাব পড়বে। রাজ্যপালের উপস্থিতি একটি সংকেত যে রাজ্য সরকার এই পুজোকে সমর্থন করে এবং এটি স্থানীয় জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। পুজোর মাধ্যমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংহতি এবং মিলন ঘটানোর সুযোগ তৈরি হয়। এটি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্যও একটি বড় সুযোগ, কারণ পুজোর সময় মানুষ ব্যাপকভাবে বাজারে আসে, যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জোয়ার আনে।
পুজোর উদ্বোধন এবং স্থানীয় রাজনৈতিক প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনার ফলে, এটি স্পষ্ট যে রাজনীতি ও ধর্মীয় উৎসবগুলি একে অপরের সাথে সংযুক্ত। রাজ্যপালের উপস্থিতি এবং শিশির অধিকারীর বক্তব্য স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। ফলে, আগামীদিনগুলোতে রাজনৈতিক আলোচনাগুলি এবং সামাজিক সমস্যাগুলির উপর মনোযোগ বৃদ্ধি পেতে পারে। এ ছাড়া, ভবিষ্যতে এই ধরনের ধর্মীয় উৎসবগুলোকে রাজনৈতিক কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত করে দেখানো হবে, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে আরও বেশি আগ্রহ ও অংশগ্রহণের সৃষ্টি করবে।

সর্বশেষে, ‘নান্দনিক’ ক্লাবের পুজোর উদ্বোধন কেবল একটি ধর্মীয় উৎসবের শুরু নয়, বরং এটি পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই পুজো শহরের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত, যা স্থানীয় জনগণের মননে এক নতুন মাত্রা যোগ করবে। আসুন, আমরা সবাই এই পুজোতে অংশগ্রহণ করে আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে সশক্ত করে তুলি এবং একটি সুন্দর সমাজ গড়ে তুলি।