India’s campaign in Women’s T20 World Cup begins : ২০২৪ সালের মহিলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আজ শুরু হতে চলেছে ভারতের অভিযান, যার দিকে তাকিয়ে আছে গোটা দেশ। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল, যাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হরমনপ্রীত কৌর, এই প্রতিযোগিতায় নিজেদের দক্ষতা এবং সাহসিকতার প্রমাণ দিতে প্রস্তুত। ভারতীয় পুরুষ দল ২০২৪ সালে আমেরিকায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে যে উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছে, এবার সেই আলোর দিকে হেঁটে চলেছে মহিলা দল। আজকের দিনটি ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য বিশেষ, কারণ ভারত তাদের প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হতে চলেছে, আর কাল পাকিস্তানের বিপক্ষে হাই ভোল্টেজ ম্যাচ।
ভারতীয় দলের প্রধান কোচ ঋষিকা পান্ডে জানিয়েছেন, “আমরা আমাদের প্রস্তুতিতে পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী। দলের প্রতিটি খেলোয়াড় তাদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত। আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র জয় নয়, বরং দেশের জন্য গর্ব অর্জন করা।” কোচের এই বক্তব্যে দলের আত্মবিশ্বাস স্পষ্ট। ভারতীয় মহিলা দল আগেও অনেক সাফল্য অর্জন করেছে, কিন্তু বিশ্বকাপের শিরোপা তাদের কাছে এখনও অধরা। এ বছর সেই ইতিহাস বদলে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে শেফালি ভার্মা, স্মৃতি মন্ধনা, জেমিমাহ রডরিগেজের মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা।
ভারতীয় দলের প্রধান শক্তি তাদের ব্যাটিং লাইনআপ। শেফালি ভার্মা এবং স্মৃতি মন্ধনা, দুই ওপেনারই গত কয়েক বছরে অসাধারণ পারফর্ম করে এসেছেন। শেফালি তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জন্য বিখ্যাত, আর স্মৃতি তার ধীর-স্থির এবং কৌশলগত ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত। এই দুইজন ব্যাটার যদি ভালো শুরু দিতে পারেন, তাহলে ভারতের জয় সহজতর হয়ে উঠবে। এছাড়া মিডল অর্ডারে রয়েছেন ক্যাপ্টেন হরমনপ্রীত কৌর এবং জেমিমাহ রডরিগেজ, যারা দলের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করবেন।
ভারতের বোলিং লাইনআপও কম শক্তিশালী নয়। পুনম যাদবের স্পিন বলিং এবং রেনুকা সিংয়ের পেস বোলিং যেকোনো প্রতিপক্ষের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। রেনুকা বলেন, “আমাদের দলে একজন থেকে আরেকজনের ওপর পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আমরা জানি, প্রত্যেকে নিজের ভূমিকা খুব ভালোভাবে পালন করবে।”
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম ম্যাচটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিউজিল্যান্ডের দল বরাবরই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং কঠিন প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত। তবে ভারতীয় দল তাদের নিজস্ব খেলায় বিশ্বাসী এবং প্রথম ম্যাচটি জিতে একটি শক্তিশালী সূচনা করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে।
ভারতীয় দলের অন্যতম ওপেনার স্মৃতি মন্ধনা বলেছেন, “প্রথম ম্যাচে ভালো পারফর্ম করতে পারলে দলের মনোবল অনেকটাই বেড়ে যাবে। আমরা জানি, নিউজিল্যান্ড কঠিন প্রতিপক্ষ, কিন্তু আমাদের নিজেদের শক্তির ওপর আস্থা রয়েছে।”

নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচের পরেই ভারতের পরবর্তী প্রতিপক্ষ হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচটি সবসময়ই উত্তেজনাপূর্ণ এবং আবেগপ্রবণ হয়ে থাকে। এই ম্যাচ ঘিরে ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা আকাশছোঁয়া।
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ সম্পর্কে ক্যাপ্টেন হরমনপ্রীত কৌর বলেন, “পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলাটা সবসময়ই আলাদা চাপের হয়। কিন্তু আমরা সব ম্যাচকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। আমাদের মনোযোগ এখন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতীয় মহিলা দল এ বছর বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট। দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এবং শক্তিশালী ব্যাটিং-বোলিং লাইনআপ ভারতকে এই প্রতিযোগিতায় অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে। ক্রিকেট বিশ্লেষক সঞ্জয় মঞ্জরেকার বলেছেন, “ভারতীয় দলের শক্তিশালী পারফরম্যান্সের কারণে তারা অবশ্যই ফেভারিট। তবে নিউজিল্যান্ড এবং পাকিস্তানের মতো দলকে ছোট করে দেখা উচিত হবে না।”
ভারতীয় মহিলাদের এই বিশ্বকাপ যাত্রা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ করা যাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে সমর্থকদের কাছ থেকে শুভেচ্ছা এবং উৎসাহমূলক বার্তা আসছে। কলকাতার বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা সেন বলেন, “আমাদের মহিলা দলকে নিয়ে আমরা খুব গর্বিত। তারা সবসময়ই নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে, এবং এবারও আমরা তাদের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখছি।”
এছাড়াও, মহিলাদের এই অর্জন দেশজুড়ে নারী ক্ষমতায়নের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলের এই সাফল্য যুব প্রজন্মের মেয়েদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করছে। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের এক কিশোরী ক্রিকেটার বলছে, “হরমনপ্রীত দিদির খেলা দেখে আমাদের অনেক অনুপ্রেরণা পাই। আমাদের স্বপ্ন, একদিন আমরাও ভারতের জার্সি গায়ে চাপিয়ে বিশ্বকাপ খেলবো।”

ভারতীয় মহিলা দল তাদের প্রথম ম্যাচে জয়ী হলে তা দেশের খেলাধুলার ইতিহাসে নতুন অধ্যায় শুরু করতে পারে। দলটির আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক দৃঢ়তা তাদেরকে বিশ্বকাপের ট্রফি জয়ের পথে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু ক্রিকেটের ময়দানে কোনো কিছুই নিশ্চিত নয়, প্রতিটি ম্যাচেই নিজেদের সেরাটা দিতে হবে ভারতীয় দলকে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি ভারতীয় দল প্রথম কয়েকটি ম্যাচে ভালো পারফর্ম করে, তবে তাদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়বে এবং তারা ফাইনালের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। হরমনপ্রীত কৌরের নেতৃত্বে এই দলটি অতীতে বহুবার প্রমাণ করেছে যে, তারা চাপের মুখেও শান্ত থাকতে পারে এবং সাফল্যের পথে এগিয়ে যেতে পারে।
ভারতীয় মহিলা দলের এই অভিযান শুধু একটি টুর্নামেন্ট নয়, এটি দেশের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত। এই বিশ্বকাপে তাদের সাফল্য দেশজুড়ে নারী ক্রিকেট এবং নারী ক্ষমতায়নের জন্য একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয়ী হলে ভারতীয় দল একটি দুর্দান্ত শুরু করবে এবং তাদের যাত্রা আরও মসৃণ হয়ে উঠবে। এবার দেখার পালা, ভারতীয় দল কতটা সফলভাবে এই বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করতে পারে।