Monday, April 14, 2025
Google search engine
HomeDurgapuja১২ হাজার কাচের বোতল দিয়ে তৈরী প্যান্ডেল, থিম ‘অন্তর শক্তি’

১২ হাজার কাচের বোতল দিয়ে তৈরী প্যান্ডেল, থিম ‘অন্তর শক্তি’

Pandal made of 12,000 glass bottles, theme ‘Antar Shakti’ :-দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর শহরের নাট্য সংসদ ক্লাবের দুর্গাপুজো এবছর নতুন চমকের সাথে ধরা দিচ্ছে। তাদের ৩৪তম বর্ষের পুজোতে ‘অন্তর শক্তি’ থিম নিয়ে এসেছে এক অভিনব উদাহরণ। প্রায় ১২ হাজার কাচের বোতল দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে প্যান্ডেল, যা এই পুজোর প্রধান আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুজো কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভাঙ্গা কাচের বোতল দিয়ে তৈরি এই প্যান্ডেলটির মূল উদ্দেশ্য হলো সমাজে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছে দেওয়া। কাচের ভাঙার সাথে মানুষের ভাঙা মনের তুলনা করে এই থিম তৈরি করা হয়েছে, যা আধুনিক জীবনের চাপে ভেঙে পড়া মানুষকে সাহস জোগাতে চায়।

নাট্য সংসদ ক্লাবের পুজো বরাবরই গঙ্গারামপুর শহরের অন্যতম বড় আকর্ষণ। এবারের পুজোটি আরও বিশাল আকার ধারণ করেছে, যেখানে প্যান্ডেল তৈরিতে প্রায় ১২ হাজার কাচের বোতল ব্যবহার করা হয়েছে। পুজোর বাজেটও কম নয়, প্রায় ১২ লক্ষ টাকার পরিকল্পনা নিয়ে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ক্লাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “আমরা এবারের থিমের মাধ্যমে সমাজের মানুষদের একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। মন ভেঙে গেলে অনেকেই চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, কিন্তু আমরা চাই মানুষ নিজের ভিতরের শক্তিকে খুঁজে বের করুক এবং সব প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করুক।”

থিম ‘অন্তর শক্তি’র পেছনে রয়েছে এক গভীর বার্তা। বর্তমান সময়ে ডিপ্রেশন এবং মানসিক সমস্যায় ভুগছেন অসংখ্য মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। ক্লাবের কর্মকর্তাদের মতে, এই থিমের মাধ্যমে তাঁরা সবাইকে বোঝাতে চান যে জীবনের প্রতিকূল সময়েও নিজের মনের শক্তি খুঁজে পাওয়া জরুরি। ভাঙা কাচ যেমন চুরমার হলেও, ঠিকভাবে ব্যবহার করলে তা দিয়েই তৈরি করা যায় সৌন্দর্য। ঠিক তেমনি, মানুষের ভাঙা মনও যদি সঠিক দিকনির্দেশনা পায়, তাহলে তা নতুনভাবে গড়ে উঠতে পারে।

এই থিমের মূল উপাদান হলো কাচের বোতল। পুরনো এবং ভাঙা কাচের বোতল সংগ্রহ করে তা দিয়ে পুরো প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। ভাঙা কাচের সংযোগ এবং সেটি থেকে সৌন্দর্য বের করার এই উদ্যোগ আসলেই অভিনব। প্যান্ডেলের প্রতিটি স্তর এবং কোণায় কাচের বোতলের শিল্পকর্ম এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে পড়ছেন। ক্লাবের একজন সদস্য জানিয়েছেন, “প্রতিমা থেকে শুরু করে প্যান্ডেলের পুরো ডিজাইন কাচের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। আমরা চাই আমাদের পুজোতে আসা প্রতিটি দর্শক এই প্যান্ডেলের মাধ্যমে কিছু না কিছু শিখে যাক।”

প্যান্ডেলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিমাও তৈরি করা হয়েছে অত্যন্ত যত্নসহকারে। মাটির প্রতিমায় দেবী দুর্গাকে এক শক্তিশালী রূপে দেখানো হয়েছে, যেখানে তিনি মানুষের অন্তরের শক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছেন। এই থিমের মাধ্যমে নাট্য সংসদ ক্লাব শুধু কাচের বোতল ব্যবহার করেনি, তারা একটি সামাজিক এবং মানসিক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। পুজো কমিটির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে যে তাঁরা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে চান যে জীবনের কঠিন সময়ে সাহসিকতা এবং অন্তরের শক্তি দিয়ে সব সমস্যার মোকাবিলা করা যায়।

গঙ্গারামপুরের মানুষদের জন্য এই পুজো তাদের গর্ব এবং আনন্দের উৎস। পুজোর সময়টাতে এলাকার প্রতিটি মানুষ প্যান্ডেলের চারপাশে ভিড় জমান, এবং এই থিম পুজোতে তাঁদের উৎসাহ আরও দ্বিগুণ করে তুলেছে। ক্লাবের এক প্রবীণ সদস্য জানালেন, “নাট্য সংসদের পুজো আমাদের এলাকার জন্য খুবই বিশেষ। প্রতিবছর আমরা নতুন কিছু করে দেখানোর চেষ্টা করি, আর এবারের থিম ‘অন্তর শক্তি’ সত্যিই আমাদের গর্বিত করেছে। প্যান্ডেল এবং প্রতিমা দুটোই চমৎকার, এবং এই থিম মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলবে।”

স্থানীয় বাসিন্দারা পুজোটি নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত। তাঁদের মতে, এই ধরনের থিম শুধু একটি পুজোর প্রদর্শনী নয়, বরং এটি সমাজের জন্য একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ। ক্লাবের এক তরুণ সদস্য জানান, “আমরা যখন কাচের বোতল দিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তখন সবাই অবাক হয়েছিল। কিন্তু এখন সবাই মুগ্ধ। আমরা চাই, এই পুজো মানুষের জীবনে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনুক।”

পুজোর এই থিমের সাথে পরিবেশবান্ধব বার্তাও জড়িত। কাচের বোতলগুলি পুনর্ব্যবহার করে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে, যা পরিবেশ সংরক্ষণের একটি সুন্দর উদাহরণ। এতে পরিবেশের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়েছে, এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এই উদ্যোগকে বেশ সমর্থন জানিয়েছেন। ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “আমরা চাইছি, পুজোর মাধ্যমে পরিবেশের গুরুত্বও তুলে ধরা হোক। পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপকরণ ব্যবহার করে প্যান্ডেল তৈরি করার মাধ্যমে আমরা সেই বার্তাই দিয়েছি।”

এই পুজোর প্রভাব শুধু গঙ্গারামপুর নয়, আশেপাশের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবছর এখানে পুজো দেখতে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। এই পুজোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ব্যবসায়িক কার্যকলাপেও সাড়া পড়েছে। দোকানপাট, রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে স্থানীয় পরিবহণ সব ক্ষেত্রেই চাঙ্গাভাব দেখা যাচ্ছে। এক স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “এই ধরনের বড়ো থিম পুজো হলে আমাদের ব্যবসা অনেক বাড়ে। দূরদূরান্ত থেকে লোক আসে, আর তাতে আমরা অনেক লাভ করি।”

এই পুজোর ভবিষ্যতেও একটি সুদূরপ্রসারী প্রভাব থাকতে পারে। প্রতিবারই থিম পুজো করে নাট্য সংসদ ক্লাব দর্শকদের নতুন কিছু উপহার দেয়। তাই, আগামী বছরগুলিতেও তারা নতুন নতুন থিম নিয়ে আরও বড় আকারের পুজো করার পরিকল্পনা করছে। স্থানীয় প্রশাসনও এই পুজোর সাফল্যে খুশি এবং তাঁরা ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

সামগ্রিকভাবে, গঙ্গারামপুরের নাট্য সংসদ ক্লাবের পুজো এবছর শুধু তাদের এলাকার নয়, পুরো রাজ্যের পুজোপ্রেমীদের মন জয় করেছে। থিম ‘অন্তর শক্তি’ কেবলমাত্র একটি প্যান্ডেল নয়, এটি জীবনের সংগ্রামের প্রতীক। প্রতিটি ভাঙা কাচের মতোই মানুষের মন ভাঙে, কিন্তু সেই ভাঙা মনেই লুকিয়ে থাকে অন্তরের শক্তি, যা সব প্রতিকূলতা অতিক্রম করার ক্ষমতা রাখে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments