Mahaloy women’s freedom-protection message of Ramnagar Elite Youth: মহালয়া, পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের সূচনা লগ্নে, রামনগরের এলিট ইউথ সংস্থা নারী স্বাধীনতা ও সুরক্ষার বার্তা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। প্রতিটি বছর তারা পূজোর আগে এক বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে, যার লক্ষ্য সমাজে নারী স্বাধীনতা ও সুরক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এই বছর, তারা মহিলাদের সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। এলিট ইউথ সংস্থা গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মহিলাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সচেতন করার পাশাপাশি বিশেষ উপহারসামগ্রীও প্রদান করেছে। সমাজের নানান স্তরের মানুষের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিয়ে, তারা সমাজের পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে।
এবারের মহালয়ার দেবীপক্ষে সংস্থার প্রধান লক্ষ্য ছিল নারীর সুরক্ষা এবং স্বাধীনতার বিষয়ে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন পোস্টার, ব্যানার এবং স্লোগানের মাধ্যমে তারা প্রচার চালায়। “সচেতন নারী নিরাপদ সমাজ”, “শিক্ষিত নারী উন্নত দেশ”, “নারীকে সুরক্ষা দিন সমাজকে আলোকিত করুন”—এই ধরনের স্লোগান সংস্থার সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে বিশেষত নজর কেড়েছে সংস্থার মহিলা সদস্যদের উদ্যোগ। তারা প্রতিনিয়ত নারীদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন এবং এবারের মহালয়াতে এই সংগ্রাম আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলো।

অভয়ার বিচার চেয়ে যেমন তারা রাস্তায় নেমেছেন, ঠিক তেমনই মহালয়ায় মহিলাদের হাতে এক বিশেষ স্বাস্থ্য সচেতনতার কিট তুলে দিয়েছেন। এই কিটের মধ্যে রয়েছে মাস্ক, স্যানিটারি ন্যাপকিন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং আরও অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার সামগ্রী। সংস্থার মতে, নারীদের শারীরিক এবং মানসিক সুরক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সচেতনতার বার্তা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি, কারণ একজন সচেতন নারীই তার পরিবার এবং সমাজকে সঠিক পথে চালিত করতে পারেন।
এলিট ইউথ সংস্থা প্রায় আড়াইশো জন মহিলার হাতে এই কিট তুলে দিয়েছে। গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় নারীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে তারা কঠোর পরিশ্রম করছে। এর মধ্যে অনেক নারী এমনও রয়েছেন যারা আগে কখনও স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেননি বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলি সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেন না। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে তারা নারীদের সঠিক স্বাস্থ্য চর্চার দিকে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
একই সাথে, সংস্থার সদস্যরা আরজি কর হাসপাতালে নারীদের উপর ঘটে যাওয়া দুর্ব্যবহারের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা রাস্তায় নেমে এই ঘটনার বিচার চেয়েছেন এবং এর মধ্য দিয়ে সমাজে নারীদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীকে সুরক্ষিত এবং সম্মানিত করার প্রয়োজনীয়তার বার্তা তারা দিয়েছেন।
এই কর্মসূচিতে সংস্থার অন্যতম সদস্য রীতা সেনগুপ্ত বলেন, “আমরা নারী স্বাধীনতা এবং সুরক্ষার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া আমাদের প্রধান লক্ষ্য। মহালয়ার দেবীপক্ষে নারীদের সুরক্ষার বার্তা পৌঁছে দিতে পেরে আমরা গর্বিত।”
এদিকে, গ্রামবাসীরাও এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন। গ্রামের মহিলা সুচিত্রা দাস বলেন, “আমাদের কখনও এসব কিট পাওয়ার সুযোগ হয়নি। এই কিটগুলো আমাদের অনেক সাহায্য করবে। স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা রামনগর এলিট ইউথ সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাই।”

এই ধরনের উদ্যোগ শুধুমাত্র রামনগর নয়, পুরো রাজ্যের জন্য এক উদাহরণ হতে পারে। নারীদের সুরক্ষা এবং স্বাধীনতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সংস্থাটি সমাজে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিয়েছে। বিশেষ করে পূজোর সময়, যখন নারীরা নানা ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হন, তখন এই ধরনের কর্মসূচি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এলিট ইউথ সংস্থা তাদের আগামী বছরের পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করেছে। তারা জানিয়েছে, মহালয়ার পরও তাদের সচেতনতা মূলক কর্মসূচি চলতে থাকবে এবং তারা মহিলাদের আরও বেশি করে এই ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষার সামগ্রী প্রদান করবে।
এই উদ্যোগের একটি বড় প্রভাব পড়েছে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে। নারীরা এখন নিজেদের অধিকারের বিষয়ে আরও সচেতন হচ্ছেন এবং তারা নিজেদের সুরক্ষার জন্য নিজে থেকে পদক্ষেপ নিচ্ছেন। অন্যদিকে, পুরুষরাও এই বার্তায় অনুপ্রাণিত হয়ে নারীদের সম্মান ও সুরক্ষার গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেছেন। মহালয়ার দেবীপক্ষে শুরু হওয়া এই উদ্যোগ আগামী দিনে সমাজে নারীদের জন্য আরও বেশি সুরক্ষিত পরিবেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
এই ধরনের পদক্ষেপ শুধুমাত্র নারীর স্বাধীনতা নয়, বরং পুরো সমাজের উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নারী স্বাধীনতা এবং সুরক্ষার সাথে সাথে, সমাজের প্রত্যেক সদস্যকে এই বার্তা গ্রহণ করতে হবে যে, নারীদের সম্মান করা মানে সমাজের অগ্রগতির পথ সুগম করা। রামনগর এলিট ইউথ সংস্থার এই উদ্যোগ সেই পথেই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করছে। ভবিষ্যতে, আরও এমন অনেক কর্মসূচি নিয়ে তারা সমাজের প্রত্যেক স্তরে নারীর সুরক্ষার বার্তা পৌঁছে দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।