Saturday, April 12, 2025
Google search engine
Homeটপ 10 নিউসভারী বর্ষণে জলমগ্ন দুর্গাপুর, বিপাকে এলাকাবাসী

ভারী বর্ষণে জলমগ্ন দুর্গাপুর, বিপাকে এলাকাবাসী

Durgapur flooded due to heavy rains, residents in trouble: চারিদিকে শুধু জল আর জল ৷ খেলার মাঠ যেন বিরাট পুকুর ৷ বাড়ির ভেতরে জমা জলে মাছ খেলে বেড়াচ্ছে ৷ জল থৈ থৈ করছে স্কুলে ৷ নাগাড়ে 12 ঘণ্টার বৃষ্টির জেরে এই জলছবি দুর্গাপুরে ৷ বিভিন্ন ওয়ার্ডে জলবন্দি কয়েক হাজার মানুষ । ভেঙেছে গাছ, কাঁচা বাড়ি ৷ নদী বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে ৷ দুর্গাপুর নগর নিগমের রাতুড়িয়া, অঙ্গদপুর, কাদারোড, 54 ফুট, তপোবন সিটি, শ্রীনগর পল্লি-সহ বিভিন্ন এলাকায় বাড়িতে বাড়িতে ঢুকেছে জল । রাস্তাঘাট ডুবে গিয়েছে । জলবন্দি মানুষকে উদ্ধার করা হচ্ছে বলে জানালেন দুর্গাপুর নগর নিগমের মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় । বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর গাছ পড়েছে, প্রাচীর এবং কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে ৷ হতাহতের কোনও খবর নেই । তবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে দুর্গাপুরের নিকাশি ব্যবস্থা । দুর্গাপুরের 13 নম্বর ওয়ার্ডের কাদা রোডে জলে ডুবে গিয়েছে গোটা এলাকা । কুনুর নদ-সহ অন্যান্য নদীগুলির জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে । জলবন্দি মানুষেরা আতঙ্কিত । দুর্গাপুর নগর নিগমের 24 ও 25 নম্বর ওয়ার্ডেও জলবন্দি দশায় আতঙ্কের প্রহর গুনছেন মানুষ ৷ প্রবল বৃষ্টিতে জল বাড়ছে সমস্ত নদীতে । ফুঁসছে কুনুর নদও । কুনুরের জলে জলমগ্ন কাঁকসার কুলডিহার শ্মশান-সহ আশপাশের একাধিক জমি । বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সমানে চলছে বৃষ্টি । এই বৃষ্টিতে ক্রমশ বাড়ছে কুনুর নদের জলের স্তর ।

WhatsApp Image 2024 08 02 at 08.59.17

কুলডিহার কুনুর নদের ব্রিজের এবং ধবনীর ব্রিজের সমান উচ্চতায় বইছে জল । ধবনী, আকন্দারা, মলানদিঘি-সহ কাঁকসা এবং পূর্ব বর্ধমানের বহু এলাকার চাষের জমিও এখন কুনুর নদের জলের তলায় ৷ দুর্গাপুরে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা 13 নম্বর ওয়ার্ডের মেনগেট এলাকার ৷ এই এলাকার তামলা নালা একসময় দুর্গাপুরের একটি বড় অংশের জল নিকাশি নালা হিসাবে ব্যবহার হয়ে এসেছে ৷ বর্ষার সময় দুর্গাপুরের বহু অংশের জল এই নালায় এসে পড়ে এবং তারপর সেই জল গিয়ে মেশে দামোদর নদে ৷ তার জন্য তামলা নালার সঙ্গে দামোদরের মিলনস্থলে গেট করা আছে ৷ অভিযোগ, সেই গেট খোলা হয়নি সেচ দফতরের পক্ষ থেকে ৷ যে কারণে তামলা নালার জল উপচে কয়েকশো বাড়িতে ঢুকে পড়েছে ৷ এদিন ঘটনাস্থলে আসেন আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (দুর্গাপুর) সুবীর রায়, দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্যা রাখি তিওয়ারি এবং সকাল থেকেই এই ওয়ার্ডে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা বর্তমান দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসক মণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ধর্মেন্দ্র যাদব ৷ জলমগ্ন এলাকা নিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে ধর্মেন্দ্র যাদব এই বন্যা পরিস্থিতিকে ম্যানমেড বলে সমালোচনা করেন ৷

দুর্গাপুর নগর নিগমের পক্ষ থেকে দুটি স্পিডবোট নামানো হয় উদ্ধারকাজের জন্য ৷ জলবন্দি মানুষদের উদ্ধার করে একটি স্কুলে রাখা হয় ৷ দুর্গাপুর নগর নিগমের পক্ষ থেকে শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা ছাড়াও স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে জরুরি ওষুধপত্র এবং পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয় ৷ জলবন্দি এলাকার বাসিন্দারা দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ৷ তাঁদের অভিযোগ, জলযন্ত্রণায় তাঁরা জেরবার হলেও পুর প্রতিনিধিদের এখনও দেখা মেলেনি ৷ তবে ইটিভি ভারতকে দুর্গাপুর নগর নিগমের মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের ফোনে জানালেন, “আমি সমস্ত এলাকায় যাব ৷ জলবন্দি মানুষদের উদ্ধার করে অন্যত্র সরানো হবে ৷ তাঁদের আগে এই বিপদ থেকে বাঁচাতে হবে ৷” তিনি আশ্বাস দিলেও, এইভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলে বহু চাষের জমি প্লাবিত হতে পারে এবং বহু এলাকায় জল ঢুকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ৷ সকাল থেকেই নদীর তীরবর্তী এলাকায় বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর, পুলিশ ও জেলা প্রশাসন ৷

দুর্গাপুর পশ্চিমবঙ্গের একটি অন্যতম শিল্পাঞ্চল। এখানে প্রধানত ইস্পাত শিল্প ও রাসায়নিক শিল্প কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু, এই অতি বৃষ্টির ফলে এখন পুরো এলাকা এক জলের তলায় ডুবে আছে। এই পরিস্থিতি শুধু মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলছে না, এর অর্থনীতিতেও বিশাল প্রভাব ফেলছে। কৃষিজমি জলে ডুবে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়েছে, যা আগামী দিনে খাদ্য সংকট তৈরি করতে পারে। এছাড়া রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় পরিবহন ব্যবস্থাও বন্ধ হয়ে গেছে, ফলে শ্রমিকরা কাজে যেতে পারছেন না।

এই বিপর্যয়ের মাঝেও কিছু সাহসী কাহিনি সামনে এসেছে। স্থানীয় যুবকদের একটি দল নৌকা নিয়ে মানুষকে উদ্ধার করতে এগিয়ে এসেছে। এই যুবকরা জানিয়েছেন, “আমরা দেখেছি মানুষ বিপদে পড়েছে। আমরা চুপ করে থাকতে পারিনি।” এই উদ্ধারের কাজে সাহায্য করতে দুর্গাপুরের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এগিয়ে এসেছে।

দুর্গাপুরের এই জলবন্দি অবস্থা আগামী দিনে কতটা উন্নতি হবে তা নির্ভর করছে বৃষ্টির উপর। বৃষ্টি যদি এভাবে চলতে থাকে তবে আরো অনেক এলাকা জলমগ্ন হতে পারে। দুর্গাপুর নগর নিগমের মুখ্য প্রশাসক অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “আমরা সবরকমভাবে চেষ্টা করছি যাতে মানুষ নিরাপদে থাকতে পারেন।” কিন্তু, পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি এবং মানুষ আতঙ্কিত হয়ে রয়েছেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments