Bloody Gurdwara University, knife wound on student’s throat: মালদহের গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার এক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস চলাকালীন, এক প্রাক্তনী ছাত্র ছাত্রীকে ছুরির কোপ মারে এবং পরে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করে। দু’জনকেই রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত ছাত্রটি পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তনী এবং আক্রান্ত ছাত্রীটি গণিত বিভাগের। ঘটনার সময় বিজ্ঞান বিভাগের বিল্ডিংয়ে ক্লাস চলছিল। করিডোরে আচমকা ছুরির কোপের আওয়াজে চমকে ওঠে সবাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার গণিত বিভাগের পরীক্ষা চলছিল। তখনই এই ঘটনা ঘটে। তিনি জানিয়েছেন, আক্রান্ত ছাত্রী অসম থেকে এসেছিলেন। ছাত্রীর চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান লতিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, “চিৎকার শুনতে পেলাম। আমরা অনেকেই ছুটে গিয়ে দেখি ছেলেটি মেয়েটির উপর বসে কোপ দিচ্ছেন এবং নিজের গলাতেও কোপ বসাচ্ছেন। আমরা বারবার ছাড়তে বলি, কিন্তু ছেলেটির হাতে ছুরি থাকায় এগোতে পারিনি।”

লতিফুল জানিয়েছেন, এরপর এক ব্যক্তি বাঁশ হাতে ঢুকে দূর থেকেই ছেলেটিকে আঘাত করেন। ছেলেটি মেয়েটিকে ছেড়ে দোতলায় চলে যায় এবং সেখানে নিজেকে আবার কোপ দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল দলের সদস্য সুমিতা সরকার। তিনি বলেন, “খবর পেয়ে এসে দেখি, ওই ছাত্রী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। তার গলায় তুলো চেপে ধরে রক্ত বন্ধের চেষ্টা করি। এর পর নিজের ওড়না ছেলেটির গলায় বেঁধে দিই, যাতে রক্ত বন্ধ হয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্বে) তথা ডেভলপমেন্ট অফিসার রাজীব পুততুণ্ড জানিয়েছেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের বিল্ডিংয়ে ঘটেছে এই ঘটনা। অভিযুক্ত যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। তাঁর হাতে একটি ছুরি ছিল বলে শোনা গিয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আক্রান্ত ছাত্রী এবং অভিযুক্ত ছাত্র, দু’জনেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের। এখন কীভাবে ওঁদের জীবন বাঁচানো যায়, সেই বিষয়টাই দেখছি। উপাচার্যও এই বিষয়টি দেখছেন। হঠাৎ করে এই কাণ্ড ঘটে গিয়েছে। আগে দু’জনের জীবনসংশয় কাটুক, তার পর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
এই ঘটনার ফলে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কীভাবে একজন প্রাক্তনী ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে এমন ঘটনা ঘটাতে পারল, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নিরাপত্তাহীনতা খুবই উদ্বেগজনক। আমরা চাই, প্রশাসন দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিক।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র বলেন, “এমন ঘটনা আমাদের সবার জন্য ভয়ঙ্কর। আমরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করবে।” অন্য একজন ছাত্র যোগ করেন, “আমাদের পড়াশোনার জন্য সুরক্ষিত পরিবেশ প্রয়োজন। আমরা চাই, এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে।”
এই ঘটনাটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি বড় আঘাত দিয়েছে। স্থানীয় নেতারা ঘটনাটির দ্রুত তদন্ত ও সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। এক স্থানীয় নেতা বলেন, “আমরা চাই, প্রশাসন দ্রুত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করুক এবং দোষীদের শাস্তি প্রদান করুক।”
এই ঘটনার পর গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আরও সতর্ক হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার রাজীব পুততুণ্ড বলেন, “আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করার পরিকল্পনা করছি। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর যাতে না ঘটে, সেজন্য সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
এই ঘটনার ফলে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তারা আশা করছেন, প্রশাসন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে সুরক্ষিত রাখবে।