Mamta bannerjee on digha jagannath temple: না, রথে উদ্বোধন হচ্ছে না দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের নির্মাণকাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। বেশ কিছু কাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে। তাই এই রথে উদ্বোধন হচ্ছে না দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের। এবছর দিঘায় রথযাত্রা হচ্ছে না। রথের দড়িতে টান পড়ছে না। তবে মুখ্যমন্ত্রী এও আশ্বাস দিয়েছেন যে, সামনের বছর দিঘায় রথযাত্রা হবে। আগামী বছর থেকেই দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের রথের রশিতে টান পড়বে।
মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, “আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, পুরীর ঐতিহ্যশালী জগন্নাথ মন্দিরের অনুরূপে পশ্চিমবঙ্গে দীঘায় আমরা জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার একটি গর্ব-উদ্দীপক মন্দির তৈরি করছি, যেখানে প্রতিবছর রথযাত্রাও পালিত হবে। আগামী বছর থেকেই এই মন্দিরে রথের রশিতে টান পড়বে। কিছু অন্যরকম কথা শোনা গেলেও প্রকৃত বাস্তব হল, কিছু কারিগরি কাজ ও পদ্ধতি এখনও অসম্পূর্ণ থাকায়, আমরা আগামী বছর থেকেই দিঘায় রথযাত্রা পালন করব। পুরীর মন্দিরের রথযাত্রা যেভাবে পালিত হয় সেভাবেই ভক্তি ও শ্রদ্ধায় পালিত হবে দিঘার রথযাত্রা। সবাই সেখানে আমন্ত্রিত। এই নতুন মন্দির ও উৎসব হবে সারা ভারতের নতুন সম্প্রীতি-সাধনের প্রকল্প।”

প্রসঙ্গত, দিঘার জগন্নাথ মন্দির নিয়ে দায়ের হওয়া মামলা বৃহস্পতিবার খারিজ হয়ে যায় কলকাতা হাইকোর্টে। প্রসঙ্গত, হিডকো শুধু রাজারহাটে উন্নয়নের কাজ করতে পারে। এর বাইরের কোনও জায়গায় পরিকাঠামো উন্নয়ন করার ক্ষমতা হিডকোর নেই। এই আবেদনে মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলা খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ স্পষ্ট জানায়, রাজ্যের বিভিন্ন বিভাগ বিভিন্ন কাজ করতেই পারে। এতে ভুল কী আছে? পরিকাঠামো উন্নয়নের সিদ্ধান্ত রাজ্যের। তারা যে কোনও বিভাগকে দায়িত্ব দিতে পারে। সেক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। আদালতের এই রায়ের পরই দিঘায় জগন্নাথের মন্দির নির্মাণ নিয়ে আইনি জট কেটে যায়।
বাঙালির অন্যতম পছন্দের সৈকত শহর দিঘা। ২০১৮ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সেই সৈকত শহরেই এই মন্দির তৈরির কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। বরাদ্দ করা হয় ২০০ কোটি টাকা। নিউ দিঘা স্টেশন সংলগ্ন নন্দকুমার-দিঘা ১১৬বি জাতীয় সড়কের পাশে ২২ একর জমির উপর তৈরি হচ্ছে এই জগন্নাথ মন্দির। যা পুরোপুরি বাঙালির আরেক জনপ্রিয় তীর্থস্থান পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে তৈরি। উচ্চতায় পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মতোই, সেইসঙ্গে দিঘা জগন্নাথ মন্দিরের পারিপার্শ্বিক নকশাও কিছুটা এক থাকছে পুরীর মন্দিরের সঙ্গে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “দিঘার জগন্নাথ মন্দির পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে। এটি শুধু একটি ধর্মীয় কেন্দ্র নয়, বরং এটি সারা দেশের জন্য একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসবে।”
এই মন্দিরের নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হলে, এটি দিঘার পর্যটন শিল্পে একটি বড় অবদান রাখবে। মন্দিরটি শুধু ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য একটি গন্তব্য হবে না, বরং পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুও হবে। এতে দিঘার স্থানীয় ব্যবসা ও অর্থনীতিতে একটি বড় প্রভাব পড়বে। নতুন ব্যবসা শুরু হবে, পর্যটকদের জন্য হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যেও এই মন্দির নির্মাণ নিয়ে প্রচুর আশা ও উত্তেজনা রয়েছে। একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, “এই মন্দিরটি দিঘার জন্য একটি আশীর্বাদ হবে। আমরা আশা করছি, এতে আমাদের ব্যবসায় নতুন মাত্রা যোগ হবে এবং পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে।”
তবে নির্মাণকাজের দেরি হওয়ায় কিছু হতাশাও রয়েছে। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা অনেক দিন ধরেই এই মন্দিরের জন্য অপেক্ষা করছি। আশা করছি, খুব শীঘ্রই এটি সম্পূর্ণ হবে এবং আমরা রথযাত্রা পালন করতে পারব।”
দিঘার এই জগন্নাথ মন্দির নির্মাণের পেছনে রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। তবে নির্মাণকাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আরও উদ্যোগ প্রয়োজন। নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর, এটি শুধু দিঘার নয়, বরং সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের গর্ব হবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার এই মন্দির নির্মাণের জন্য যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এটি শুধু একটি ধর্মীয় কেন্দ্র নয়, বরং সারা দেশের মানুষের জন্য একটি সম্প্রীতি-সাধনের কেন্দ্র হবে। দিঘার এই নতুন মন্দির এবং রথযাত্রা পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাবে এবং মানুষের মধ্যে নতুন আশা ও উত্তেজনা সৃষ্টি করবে।