Anant Radhika: মুকেশ ও নীতা আম্বানির ছোট ছেলে অনন্ত আম্বানি আর শিল্পপতি বীরেন মার্চেন্টের মেয়ে রাধিকা মার্চেন্টের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা চলছে বেশ কয়েক মাস ধরেই। এরই মধ্যে বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র অতিথিদের কাছে পৌঁছাতে শুরু করেছে। তবে এই নিমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সোনালি রঙের একটি বাক্স পাঠিয়ে। চকচকে এই বাক্সের ভেতরে ছিল শিল্প, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিকতার মিশেল। এই নিমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন, এমন একজন বাক্সটি খোলার ভিডিও করেছেন। এটি ছিল পাঁচ মিনিটের। নিমন্ত্রণপত্রের বাক্সটির ঢাকনা খোলার পর বেরিয়ে আসে কমলা রঙের আরেকটি বাক্স। এর ওপরে ছিল ভগবান বিষ্ণুর ছবি। আর চারপাশে ছোট ছোট অক্ষরে বিষ্ণুর শ্লোক লেখা ছিল। বাক্সের ঢাকনাটির উল্টা পিঠে ছিল বৈকুণ্ঠের সূচিকর্ম। বৈকুণ্ঠ হলো ভগবান বিষ্ণু ও দেবী লক্ষ্মীর বাসস্থান। আর বাক্স খুললেই বাজতে থাকে বিষ্ণুমন্ত্র। এই বাক্সের ভেতরে আরও ছিল সোনালি রঙের বই। সেই বইয়ের ভেতরে ছিল মূল নিমন্ত্রণপত্র। খুলতেই ওপরে ছিল বিষ্ণুর ছবি। বইয়ের পাতা উল্টালে ছিল ভগবান গণেশের ছবির ফ্রেম, তার পাশে লাল রঙের ভেলভেটের ওপর অনন্ত-রাধিকার বিয়ের তারিখ ও ভেন্যু লেখা। এর পরের পৃষ্ঠায় ছিল রাধা–কৃষ্ণের ছবি। পাশে সুন্দর নকশা করে লেখা ‘নিমন্ত্রণপত্র’। সেখানে একটি ফিতা ছিল, যা টান দিতেই উঠে যায় নিমন্ত্রণপত্রের পর্দা। ভেতর থেকে বের হয় অফ হোয়াইট রঙের একটি খাম, তার ভেতর থেকে বের হয় চিরকুট। সেটিই ছিল আম্বানি পরিবার থেকে দেওয়া নিমন্ত্রণপত্র, যা হাতে লেখা ছিল। এর পরের পাতায় ভগবান বিষ্ণুকে মাতা লক্ষ্মীর সঙ্গে পদ্মাসনে বসে থাকতে দেখা যায়। তার পরের দুটি পাতায় আসে যথাক্রমে মা অম্বের ছবির ফ্রেম ও শ্রীনাথের ছবি। আর বইয়ের শেষের কভার পৃষ্ঠায় ছিল ঋগ্বেদের মন্ত্র। সেই বাক্সে ছিল আরেকটি কমলা রঙের ছোট বাক্স। এটি খুলতেই মনে হবে, কোনো মন্দিরে একসঙ্গে পাশাপাশি চারজন দেব-দেবী দাঁড়িয়ে আছেন। সেগুলো ছিল রুপালি রঙের ফ্রেমে মোড়ানো। মূল বাক্সে আরও ছিল একটি কাপড়ের

ব্যাগ। এর ভেতরে ছিল কাশ্মীরি পশমিনা চাদর। আগামীকাল শনিবার ২৯ জুন আম্বানির মুম্বাইয়ের বাসভবনে পূজার মধ্য দিয়ে অনন্ত ও রাধিকার বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ১২ জুলাই চার হাত এক হবে মুম্বাইয়ের জিও ওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টারে। বিয়ের অনুষ্ঠানটি চলবে তিন দিন ধরে। বিয়ের পরদিন হবে শুভ আশীর্বাদ ও মঙ্গল উৎসব। আর এর পরদিন হবে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা। বিয়ে–পূর্ববর্তী দুটি পার্টির আয়োজন করেছিলেন অনন্ত ও রাধিকা। প্রথম অনুষ্ঠানটি ১ থেকে ৩ মার্চ ছিল ভারতের গুজরাটের জামনগরে। সেখানে দেশ-বিদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, রাজনীতি, ক্রীড়া, বিনোদনসহ নানা অঙ্গনের খ্যাতনামা এক হাজার অতিথি যোগ দিয়েছিলেন। আর গত ২৯ মে বিলাসবহুল ক্রুজে চড়ে দ্বিতীয় প্রাক্-বিবাহ অনুষ্ঠান উপভোগ করেন অনন্ত-রাধিকা। জাহাজটি ইতালি থেকে ছেড়ে ১ জুন ফ্রান্সে যায়।
অনন্ত আম্বানির বিয়ের এই বিশেষ নিমন্ত্রণপত্র নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, এই ধরনের নিমন্ত্রণপত্র কেবলমাত্র আম্বানি পরিবারের মতো ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পক্ষেই সম্ভব। কেউ কেউ আবার বলছেন, এই ধরনের ব্যয়বহুল নিমন্ত্রণপত্র সাধারণ মানুষের মধ্যে হিংসা এবং অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে। তবে অনেকে আবার মনে করছেন, এটি একটি অনন্য এবং বিশেষ উদ্যোগ, যা ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে সম্মান জানায়।
এই বিয়ের কার্ডের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনগণও বেশ উত্তেজিত। এমনকি অনেকেই তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রোফাইলে এই বিয়ের কার্ডের ছবি শেয়ার করছেন। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “এটি সত্যিই একটি অসাধারণ উদ্যোগ। আমি এমন একটি কার্ড কখনও দেখিনি।” অন্য একজন বাসিন্দা বলেন, “আমরা সবাই জানি আম্বানি পরিবার ধনী, কিন্তু এই ধরনের কার্ড তৈরি করে তারা আমাদের সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকে সম্মান জানাচ্ছেন। এটি সত্যিই প্রশংসনীয়।”
এই বিয়ের কার্ডের কারণে স্থানীয় বাজারে কাশ্মীরি পশমিনা চাদরের চাহিদাও বেড়ে গেছে। অনেক ব্যবসায়ী বলছেন, তাদের বিক্রি বেড়ে গেছে এবং অনেকেই এই চাদর কিনছেন যাতে তারা নিজেদের বিয়ের কার্ডেও এমন কিছু যোগ করতে পারেন।
বিয়ের অনুষ্ঠানটি আরও বড় মাপের এবং উৎসবমুখর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ এবং সামাজিক নেতা সবাই এই বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত। এই বিয়ের অনুষ্ঠানটি স্থানীয় অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। অনেক ব্যবসায়ী এবং হোটেল মালিকরা বলছেন, তারা ইতিমধ্যেই বিয়ের সময় অতিথিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিচ্ছেন এবং তাদের বিক্রিও বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন।
এই বিয়ের কার্ডের মাধ্যমে আম্বানি পরিবার আবারও প্রমাণ করলেন তাদের বৈভব এবং প্রভাব। এই বিয়ের অনুষ্ঠানটি কেবলমাত্র একটি ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। এর মাধ্যমে তারা আবারও প্রমাণ করলেন যে তারা কেবলমাত্র ধনী নয়, তারা তাদের সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় মূল্যবোধকেও গুরুত্ব দেন।
আরও পড়ুন : পাহাড়ে অত্যাধিক বৃষ্টি,ডুয়ার্সে বন্যা পরিস্থিতি