DURGA PUJA 2024:ভোর চারটে বাজলেই রেডিয়োতে কান। ওপার থেকে ভেসে আসছে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের উদার সেই কণ্ঠ। কানে আসছে “আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর; ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা; প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা।” মহালয়ার বাকি আর মাত্র 93 দিন। তারপরেই মা আসছেন। এখন থেকেই শুরু দিন গোনা। কাউন্টটাউন শুরু। মায়ের মর্ত্যে আগমনের দিন গুনতে শুরু করেছে রাজ্যবাসী। হাতে আর মাত্র 100 দিন। তারপরেই শোনা যাবে, ‘আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জরী’। নীল আকাশে খেলা করবে সাদা মেঘের ভেলা। কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণে শুরু হয়ে যাবে সাবেকি বনাম থিমের লড়াই। ইতিমধ্যেই কুমোরটুলিতে জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রতিমা তৈরি।

DURGA PUJA 2024: এই বছর মহালয়া পড়েছে 2 অক্টোবর (15 আশ্বিন) বুধবার। মহাষষ্ঠী পড়েছে 9 অক্টোবর (22 আশ্বিন) বুধবার। মহাসপ্তমী পড়েছে 10 অক্টোবর (23 আশ্বিন) বৃহস্পতিবার। মহাষ্টমী পড়েছে – 11 অক্টোবর (24 আশ্বিন) শুক্রবার। মহানবমী ও দশমী পড়েছে 12 অক্টোবর (25 আশ্বিন) শনিবার। (উল্লেখ্য বেণীমাধব শীলের ফুল পঞ্জিকা অনুযায়ী এই বছর মহানবমী এবং দশমী পড়েছে একই দিনে)। এবার দেবীর আগমন দোলায়। ফল মড়ক। দেবীর গমন ঘোটকে। এর ফল ছত্রভঙ্গ। রাজ্যের পাশাপাশি দেশ ও বিদেশের মাটিতে পূজিতা হন মা দুর্গা। ফলে অনেক ঠাকুর তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে পাড়ি জমায় বিদেশে। অন্যদিকে, রথযাত্রার দিন থেকেই কলকাতায় বেশ কিছু জায়গায় হয়ে গিয়েছে খুঁটি পুজো। প্রতি বছর বাঙালি থেকে অবাঙালি, সকলেই এই চারটে দিন অপেক্ষায় থাকেন। পুজোর কেনাকাটি থেকে শুরু করে রাত জেগে প্যান্ডেল হপিং, উত্তর থেকে দক্ষিণ সাবেকি ও থিমের বাহার দেখায় মেতে ওঠেন আট থেকে আশি সকলে। এমনকী, বিদেশ থেকেই পুজোর এই চারটে দিন দেবী দর্শনে উপস্থিত হন অনেকেই।
অন্যদিকে, কুমোরটুলিতে এখন ব্যস্ততা তুঙ্গে। শিল্পীরা ব্যস্ত প্রতিমা তৈরিতে। অনেক জায়গা থেকে অর্ডার এসে গিয়েছে। এখন সঠিক সময়ে মূর্তি তৈরির কাজ শেষ করার প্রস্তুতি শুরু। কাঠামো তৈরি থেকে মণ্ডপে দেবী বরণ, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাৎসব শুরু হতে বাকি আর মাত্র 100 দিন।
এ বছর কুমোরটুলির শিল্পীদের মধ্যে বিশেষ উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে, কারণ তারা নতুন ধরনের পরিবেশ-বান্ধব রঙ ব্যবহার করছেন, যা সীসামুক্ত। এই রঙ ব্যবহারে তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে না এবং বিসর্জনের পর নদীর জল দূষিত হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং গঙ্গা অ্যাকশন কমিটি এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছে। মৃৎশিল্পী শ্রী শ্যামল পাল বলেন, “এটা আমাদের জন্য একটা বড় পরিবর্তন। সীসামুক্ত রঙ ব্যবহারে আমরা যেমন সুস্থ থাকবো, তেমনই নদীর জলও দূষণমুক্ত হবে।” আরেকজন মৃৎশিল্পী শ্রীমতী গৌরী দাস বলেন, “এই উদ্যোগটি আমাদের কাজের মানকে আরও বাড়িয়ে দেবে। আমরা চাই যে আমাদের প্রতিমা শুধু সুন্দর হোক না, পাশাপাশি নিরাপদও হোক।”

দুর্গাপুজো নিয়ে মানুষের উৎসাহ চিরকালীন। পুজোর এই কয়েকটা দিন সারা রাজ্যের মানুষ আনন্দে মেতে ওঠেন। পুজোর কেনাকাটা, সাজগোজ, প্যান্ডেল হপিং, প্রতিমা দর্শন – সবকিছু মিলিয়ে এই সময়টা হয়ে ওঠে বিশেষ। দুর্গাপুজো শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং আবেগের প্রতীক। প্রতিবারের মতো এবারের পুজোও এক নতুন রঙ এবং নতুন উত্তেজনা নিয়ে আসছে।
আরও পড়ুন: রানীগঞ্জের পুরপিতার অকাল প্রয়াণে শোকাহত রাজনৈতিক মহল