Advaita Acharya’s Ras Yatra is still being celebrated in Sarambara today:-সকাল ছটা বেজে গেছে, কিন্তু শান্তিপুর শহর যেন ঠিক যেন নতুন করে জেগে উঠেছে — রাস পূর্ণিমার সকালে ঘুরে বেড়াতে পাওয়া যায় আলোর ঝাঁকে ঝাঁকে মণ্ডপ, ফুল ও রাধা-কৃষ্ণের যুগল বিগ্রহের উজ্জ্বল ছায়া আর হৃদের গভীরে ছড়িয়ে পড়া এক গভীর অনাবিল ভক্তি। প্রায় ৫৫০ বছর আগের সেই দিনের কথা মনে পরে যায়, যখন অদ্বৈত আচার্য এই রাস উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছিলেন। তখন থেকেই শান্তিপুরের মানুষ এই উৎসবকে জীবন্ত রেখেছে, গত পাঁচশো বছরের ধারাবাহিকতায়। দেখতে পাওয়া যায়, স্থানীয় গোস্বামী বাড়ি এবং বিগ্রহ বাড়িগুলি বছরের পর বছর ধরে নিয়ম মেনে এই রাসযাত্রা আয়োজন করে আসছে।লোক চলাচল বাড়ে উৎসব শুরুর আগে থেকেই। বিভিন্ন বারোয়ারি দল — ছোট বড় সবাই — এখন একে শুধু গোস্বামী বাড়িরই উৎসব মনে করে না; তারা আলাদা আলাদা থিম নিয়ে মণ্ডপ সাজায়। উদাহরণস্বরূপ, “শ্যামবাজার রাস উৎসব কমিটি” এই বছর কেরালার পদ্মানাভ স্বামী মন্দিরের আদলে মণ্ডপ করেছে, অপরদিকে “থানার মাঠ রাস উৎসব কমিটি” রাশিয়ান ইসকন মন্দিরের আদলে মণ্ডপ উপস্থাপন করেছে। শান্তিপুর লিডার্স ক্লাব তাদের থিম রেখেছে ‘বাঁচবো আমি, বাজবে তুমি, বাঁচলে জল আর বনভূমি’, আর “লক্ষিতলা বারোয়ারি” তাদের থিম করেছে ‘এয়ার স্ট্রাইক’, পঞ্চানন তলা যুব সংঘ করেছে ‘দুর্গার পরিবার’, আর রামকৃষ্ণ কলোনী ক্লাব নিয়ে এসেছে ‘অপারেশন সিঁন্দুর’ থিম। এসব থিম আর মণ্ডপের আলোক শয্যা মিলে পুরো শান্তিপুর যেন এক মোহনীয় পটে রূপ নিচ্ছে — আলোর ছটা, থিম অনুযায়ী সাজানো মঞ্চ, ভক্তদের উৎসাহ, পর্যটক ও ক্ষণস্থায়ী দর্শনার্থীর ভিড় — এক হয়ে যাচ্ছে উৎসবের আনন্দ।

স্থানীয় এক বারোয়ারি সভাপতি বললেন, “আমাদের বর্ষাপর্বেই এই রাসযাত্রা, আমরা চাই দর্শকের মনে থেকে যাক একটা স্মরণীয় ছবি; তাই থিম ও মণ্ডপ পরিকল্পনায় একটু নতুন ভাব আনছি, পাশাপাশি পুরনো ঐতিহ্যের ছোঁয়া রাখা হচ্ছে।” আর এক তরুণ ভক্ত বললেন, “এই রাসযাত্রায় আমার শৈশব, বড় হওয়া, পরিক্রমা — সব মিলায়। প্রতিটি থিম আমাদের নতুন কিছু ভাব দেয়, কিন্তু তা আমাদের পুরনো ঐতিহ্যকে বড় করে তোলে।”এই উৎসবের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাবও যথেষ্ট বড়। উৎসবের সময় শান্তিপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা জুড়ে ব্যস্ততা বাড়ে — দোকান, খাবারের স্টল, হোটেল, পরিবহন — সবকিছুকে এক নতুন জীবনের রং এনে দেয়। অনেক হস্তশিল্পীর জন্য এটি উৎসব মৌসুম, কারণ তারা মণ্ডপ সাজানোর আলঙ্কারিক সামগ্রী, আলোকসজ্জার জিনিসপত্র বিক্রি করতে পারে। পরিমিত পর্যটক ও দর্শনার্থী আগমন ঘটে, যারা দু-তিন দিন বিশ্রাম নিয়ে উৎসব উপভোগ করে।
এই উৎসবের একটা গভীর সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মর্ম রয়েছে। পুরাণ অনুসারে, মহাদেব (শিব) নারীর রূপে প্রবেশ করেছিলেন রাসলীলার মধ্যে কারণ পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। সেই প্রশ্ন থেকেই শুরু হয় মহাদেবের ক্ষোভ ও যুক্তি, এবং পরবর্তীতে বাৎসল্য ও যোগমায়ার আবেগের ব্যাখ্যা। তখন মহাদেব বলেছিলেন, “দাপরে আমার রাস নীলা দেখার সৌভাগ্য না হলেও আমি অন্য যুগে রাস নীলা দেখব এবং প্রসার ঘটাবো।” এরপর এই রীতিতে, শান্তিপুরে অদ্বৈত আচার্য প্রথম নারায়ণ পুজো ও রাসযাত্রার শুরু ঘটিয়েছিলেন। ভবিষ্যতে এই উৎসব আরও এক নতুন মাত্রা পেতে পারে — ডিজিটাল মাধ্যম ও সামাজিক মিডিয়ায় প্রচার বাড়তে পারে, থিম আরও উদ্ভাবনী হতে পারে, এবং পর্যটন দৃষ্টিকোণ থেকেও এই শহর পরিচিতি পেতে পারে। তবে যদি পর্যাপ্ত পরিকাঠামো ও দর্শনার্থীর ভিড় ব্যবস্থাপনা না করা হয়, তাহলে সমস্যা হতে পারে — রাস পথে ভিড়, যানজট, পরিবহন সমস্যা। তাই স্থানীয় প্রশাসন ও কমিটি দ্বারা পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা জরুরি।

উৎসবের প্রতিটি থিম ও মণ্ডপ দেখে স্পষ্ট যে, মানুষ শুধু এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে নয়, এক প্রতিযোগিতা হিসেবে এই রাসযাত্রাকে উপভোগ করছে — কে সেরা মণ্ডপ, কে থিমে নতুন ভাব আনতে পারে। এই প্রতিযোগিতা উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে এবং নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্য সঙ্গে যুক্ত করে।এইভাবে আজও শান্তিপুরে পালিত হচ্ছে অদ্বৈত আচার্যর প্রতিষ্ঠিত রাস যাত্রা — পুরানো রীতি মানা, নতুন থিমে সাজানো মণ্ডপ, ভক্তদের উদ্দীপনা আর দর্শনার্থীর ভিড় — সব মিলিয়ে এক মনোরম উৎসব, যা ভবিষ্যতে পুরো শান্তিপুর ও আশপাশের অঞ্চলকে সাংস্কৃতিক পরিচিতি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি দিতে সক্ষম।



