Big deal in Modi-Starmar meeting, opens doors to new possibilities:আন্তর্জাতিক কূটনীতির দিগন্তে ভারত ও যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে বাণিজ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ছিল নিবিড়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রেও সম্পর্কের গভীরতা বেড়েছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির যুগে ভারত ও ব্রিটেনের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা আগের তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।এমনই প্রেক্ষাপটে লন্ডনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের বৈঠকটি আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর ২০২৫ — লন্ডনের ঐতিহাসিক ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে অনুষ্ঠিত হয় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক। দীর্ঘ আলোচনার পর স্বাক্ষরিত হয় ৩৫০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের এক নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি। এই চুক্তির আওতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য উন্নত প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হবে।এছাড়াও নৌবাহিনীর শক্তি বাড়াতে দুই দেশ যৌথভাবে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রকল্পে প্রাথমিক বিনিয়োগ হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন পাউন্ড। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ শুধু প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেই নয়, প্রযুক্তিগত গবেষণা ও উৎপাদন খাতেও দুই দেশের মধ্যে নতুন সহযোগিতার অধ্যায় খুলে দেবে।
ব্রিটিশ সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “ভারত এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে এই সহযোগিতা ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির দিক নির্দেশ করবে। দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন নিরাপত্তা স্বার্থ এবং উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের আরও কাছাকাছি আনবে।”ভারতের পক্ষ থেকেও এই চুক্তিকে “ঐতিহাসিক পদক্ষেপ” বলে বর্ণনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “ভারত-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক এখন নতুন যুগে প্রবেশ করছে। এই সহযোগিতা আমাদের প্রতিরক্ষা ক্ষমতাকে যেমন মজবুত করবে, তেমনই অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নেও অবদান রাখবে।”অন্যদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এক টুইট বার্তায় লেখেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেবল বাণিজ্যের নয়, এটি এক বিশ্বস্ত অংশীদারিত্বের প্রতীক। আমরা একসঙ্গে নিরাপত্তা, উদ্ভাবন এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তে পৌঁছব।”এই চুক্তিকে ঘিরে দুই দেশের ব্যবসায়িক মহল, প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং শিক্ষাবিদরা আশাবাদী। লন্ডনে বসবাসরত ভারতীয় উদ্যোক্তাদের মতে, এটি দুই দেশের অর্থনীতির জন্য এক ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’। তারা মনে করছেন, ব্রিটেনে ভারতীয় সংস্থাগুলির বাড়তি বিনিয়োগ কর্মসংস্থান এবং উদ্ভাবনের নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে।ভারতে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অরূপ চক্রবর্তী বলেন, “ভারতের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর হচ্ছে, এবং ব্রিটিশ সহায়তা সেই রূপান্তরকে আরও দ্রুত করবে।
এটি আত্মনির্ভর ভারতের ধারণাকেও সমর্থন করেবর্তমানে যুক্তরাজ্যে ভারতের ৬৪টি সংস্থা প্রায় ১.৩ বিলিয়ন পাউন্ড, অর্থাৎ প্রায় ১৫,৪৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এটি ভারতীয় কর্পোরেট দুনিয়ার ব্রিটেনে আস্থার এক বড় প্রমাণ। অর্থনীতিবিদদের মতে, দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য চুক্তি এই বিনিয়োগের গতি আরও বাড়াবে।অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগের ফলে ভারত তার প্রযুক্তিগত নির্ভরতা কমাতে পারবে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আত্মনির্ভরতার বার্তা বহন করবে।শিক্ষাক্ষেত্রে সহযোগিতার দিকেও নজর কেড়েছে এই বৈঠক। ব্রিটেনের ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয় ও সারে বিশ্ববিদ্যালয়কে ভারতে নতুন ক্যাম্পাস খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ফলে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা এখন আরও সুলভ হবে। শিক্ষাবিদদের মতে, এটি ‘গ্লোবাল এডুকেশন এক্সচেঞ্জ’-এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।চুক্তির বাস্তবায়ন আগামী বছর থেকেই শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি বিনিময়, যৌথ গবেষণা এবং শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারত ও যুক্তরাজ্য নিজেদের কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করতে চলেছে।এছাড়া, নতুন নিম্নচাপের মতোই পরিবর্তন আসবে কূটনীতির মানচিত্রেও — ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ক শুধু সামরিক বা অর্থনৈতিক নয়, এখন তা রূপ নিচ্ছে এক গভীর কৌশলগত বন্ধনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সম্পর্ক ভবিষ্যতের ভূরাজনৈতিক সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।