Scattered rains likely in all districts in the north and south!: অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় মানেই বাংলায় বর্ষার বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। বছর জুড়ে তপ্ত গরম, তারপর হালকা-ভারী বৃষ্টিতে ভিজে ওঠা মাটি—এবার তারও অবসান আসন্ন। তবে বর্ষা বিদায় নেওয়ার আগে আরও এক দফা বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানালো হাওয়া অফিস। দক্ষিণ ও উত্তর—দুই বঙ্গেরই একাধিক জেলায় হালকা বৃষ্টির ইঙ্গিত মিলেছে, সঙ্গে থাকবে দমকা ঝোড়ো হাওয়া।আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শনিবার দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বিক্ষিপ্তভাবে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে বইবে দমকা হাওয়া। এই জেলাগুলির জন্য ইতিমধ্যেই জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা।
এদিকে উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রেও আগামী কয়েক দিন হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সেখানে কোনও সতর্কতা জারি করা হয়নি। আবহাওয়া দফতরের মতে, উত্তরবঙ্গে এই বৃষ্টি হবে বিক্ষিপ্ত প্রকৃতির—কোথাও হালকা, কোথাও একেবারেই শুকনো। পাহাড়ি অঞ্চলে বজ্রবিদ্যুৎসহ অল্প সময়ের জন্য হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।শনিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৪.৩° সেলসিয়াস, আর বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৭৩ থেকে ১০০ শতাংশ। আগামী ২৪ ঘণ্টায় শহরের তাপমাত্রা থাকবে ২৫° থেকে ৩২° সেলসিয়াসের মধ্যে।আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, দক্ষিণ বাংলাদেশের উপর একটি ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় রয়েছে। এর প্রভাবেই দক্ষিণবঙ্গে এই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা। অন্যদিকে, অসমের উপরও আরেকটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে, যার প্রভাবে রবিবার পর্যন্ত বৃষ্টি চলবে বলে অনুমান।

তবে কোনও ভারী বৃষ্টির সতর্কতা আপাতত নেই। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, এখন বর্ষার শেষ পর্ব চলছে। এই সময়ে এমন বিচ্ছিন্ন বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে বর্ষা বিদায় নেবে বলেই তাঁদের পূর্বাভাস।বৃষ্টির খবরে শহর ও জেলার মানুষজনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। চাষিরা যেমন আনন্দিত—বিশেষত দেরিতে রোয়া ধানের জন্য এই বৃষ্টি কাজে আসবে বলে মনে করছেন তারা—তেমনি শহুরে মানুষরা অপেক্ষায় রয়েছেন রোদেলা আকাশ আর শীতের হালকা হাওয়া আসার।হাওড়ার বাসিন্দা তপনবাবু বলেন, “বর্ষা বিদায়ের আগে সামান্য বৃষ্টি ভালোই লাগে। কিন্তু দমকা হাওয়ায় সমস্যা হয়। বিদ্যুৎ চলে যায়, গাছ ভেঙে পড়ে—এগুলোই ভয়।” অন্যদিকে কলকাতার এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী সোহিনী দে বলেন, “গত ক’দিনের গরমে হাঁসফাঁস লাগছিল। যদি একটু বৃষ্টি হয়, তাহলে হাওয়া ঠান্ডা হবে—এইটুকুই ভরসা।

”আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনকার বৃষ্টি মূলত ঘূর্ণাবর্ত ও স্থানীয় মেঘের প্রভাবে। বর্ষার মূল সিস্টেম ইতিমধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই এই বৃষ্টিগুলো সাময়িক এবং বিচ্ছিন্ন প্রকৃতির হবে।অন্যদিকে, আবহাওয়ার পরিবর্তনের ইঙ্গিতও মিলছে। বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ দ্রুত কমছে। সপ্তাহের শেষে আর্দ্রতা কমে গেলে গরমও কিছুটা কম অনুভূত হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমের জেলা—বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম বর্ধমানে মঙ্গলবার বা বুধবারের মধ্যে বর্ষা বিদায়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হতে পারে।আগামী সপ্তাহে রাজ্যজুড়ে আবহাওয়ার ধরণ বদলাবে। মেঘলা আকাশের জায়গা নেবে পরিষ্কার নীল আকাশ।
হাওয়া হবে শুষ্ক, আর্দ্রতা কমবে। তাপমাত্রা সামান্য কমে গিয়ে মনোরম আবহাওয়া ফিরবে বাংলায়। এই পরিবর্তনই আসলে আসন্ন শীতের আগমনী সুর।বর্ষার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে এই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি যেন প্রকৃতির বিদায় উপহার। কয়েকদিনের এই অল্প বৃষ্টি পার করে বাংলা প্রস্তুত হচ্ছে নতুন ঋতুর জন্য—আলো, রোদ আর হালকা ঠান্ডার ঋতু। আর তার আগেই মানুষ একটু ভিজে নেবে মেঘের শেষ ছোঁয়ায়।