Raghav Juwal’s inspiring Bollywood journey: এক সময় রিয়েলিটি শো-এর নাচের মঞ্চে যিনি নিজের ছন্দে মাতিয়েছিলেন গোটা দেশকে, আজ তিনিই বলিউডে নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। নাম রাঘব জুয়াল— ‘স্লো মোশন বয়’ হিসেবে যিনি একসময় কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন, সেই রাঘব আজ বলিউডের নতুন প্রজন্মের অনুপ্রেরণা। তাঁর যাত্রাপথ যেন এক বাস্তব জীবনের সিনেমা— যেখানে নেই কোন শর্টকাট, আছে শুধুই পরিশ্রম, অধ্যবসায় আর ইতিবাচক মনোভাব।রাঘবের বলিউডে প্রবেশ কোনও হঠাৎ ঘটনা নয়। নাচের প্রতি ভালোবাসা থেকেই তাঁর প্রথম পদক্ষেপ রিয়েলিটি শো ‘ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স’-এর মঞ্চে। সেখানে নিজের অনন্য স্টাইল ও বিনোদনের ভঙ্গিতে তিনি শুধু বিচারকদের নয়, দর্শকদেরও মন জয় করেছিলেন। তারপর ধীরে ধীরে তিনি উঠে এসেছেন উপস্থাপক, পারফর্মার, অভিনেতা— একাধিক ভূমিকায়।
সম্প্রতি তিনি অভিনয় করেছেন শাহরুখ খানের পুত্র আরিয়ান খানের পরিচালনায় তৈরি সিনেমা ‘দ্য ব্যাডআস অফ বলিউড’-এ। এই ছবির মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন, শুধুমাত্র নাচ নয়, অভিনয়েও তিনি সমান দক্ষ। ছবির স্ক্রিনিং চলাকালীন ইমরান হাশমির সামনে তাঁর গাওয়া ‘কাহো না কাহো’ গানটির মজার মুহূর্তটি ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।এক সাক্ষাৎকারে রাঘব শেয়ার করেছেন তাঁর জীবনের প্রথম দিকের দিনগুলোর কথা— “যখন আমি মুম্বইয়ে এসেছিলাম, আমার হাতে কিছুই ছিল না। আমরা দশজন এক ঘরে থাকতাম, বরা পাউ খেয়ে দিন কাটাতাম। তবু সেই সময়টাই ছিল জীবনের সেরা দিন। ফ্রিজ খারাপ থাকায় সেটাকে আমরা কাপবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করতাম, সেখানে অন্তর্বাস রাখতাম। কেউ ভুল করে খুলে দিলে সে ভয় পেত,”— রসিকতার ছলে বলেন রাঘব।
এই কথাগুলো শুধু হাসির নয়, বরং প্রতিটি সংগ্রামী শিল্পীর জীবনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি। সীমিত সম্পদেও স্বপ্ন দেখার সাহস আর তা পূরণের জেদই তাঁকে এনে দিয়েছে আজকের সাফল্য।যদিও রাঘবের এই যাত্রা মূলত ব্যক্তিগত পরিশ্রমের ফল, তবে বিভিন্ন রাজ্য সরকারের তরফে তাঁকে ‘ইউথ ইনস্পিরেশন’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে একাধিক যুব অনুষ্ঠানে। নৃত্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাঘবের মতো শিল্পীরা যুবসমাজকে নিজের আবেগ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করেন, যা দেশের সাংস্কৃতিক ঐক্য ও স্বপ্ন দেখার মানসিকতাকে আরও দৃঢ় করে।রাঘবের নিজের শহর দেরাদুনে তাঁর এই সাফল্যে আনন্দের জোয়ার। এক সময় যাঁরা তাঁর সঙ্গে নাচের ক্লাসে যেতেন, তাঁদের মুখেও গর্বের সুর— “রাঘব সবসময় অন্যরকম ছিল। ওর ভেতর একটা অন্য এনার্জি ছিল, যা ওকে আলাদা করে দিয়েছে,” বলেন এক পুরনো সহপাঠী।

সোশ্যাল মিডিয়াতেও রাঘবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভক্তরা। কেউ লিখেছেন, “ওর যাত্রা আমাদের শেখায়— সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আলো খুঁজে পাওয়া যায়।” কেউ আবার বলেছেন, “রাঘব প্রমাণ করেছে, ট্যালেন্ট থাকলে বড় হতে ডিগ্রি নয়, দরকার নিষ্ঠা।”রাঘব জুয়ালের গল্প আসলে নতুন প্রজন্মের স্বপ্নের প্রতীক। একদিকে নাচের রিয়েলিটি শো থেকে উঠে এসে বলিউডে নিজের জায়গা করে নেওয়া— অন্যদিকে সেই পথের প্রতিটি ধাপে নিজের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখা— দুটোই সহজ নয়।ভারতের বিনোদন জগতে যেখানে প্রতিযোগিতা প্রবল, সেখানে রাঘবের মতো শিল্পীরা প্রমাণ করছেন, আসল শক্তি লুকিয়ে থাকে আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায়ে। তাঁর এই সাফল্য শুধুমাত্র এক ব্যক্তির নয়, বরং সেই সমস্ত যুবক-যুবতীদের প্রেরণা, যারা ছোট শহর থেকে বড় স্বপ্ন নিয়ে মুম্বইয়ের মতো শহরে পা রাখেন।

‘দ্য ব্যাডআস অফ বলিউড’-এর পর রাঘবের হাতে আরও কিছু প্রজেক্ট আসছে বলে জানা গেছে। তিনি নিজেও জানিয়েছেন, অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনার দিকেও ভবিষ্যতে কাজ করতে চান। নাচ, সঙ্গীত, অভিনয়— তিন ক্ষেত্রেই নিজের সেরাটা দেওয়ার পরিকল্পনা তাঁর।রাঘবের যাত্রা বলিউডে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে কঠোর পরিশ্রম ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সফলতার নতুন সংজ্ঞা লিখছে।রাঘব জুয়ালের জীবন কাহিনি শেখায়— সাফল্যের কোনো শর্টকাট নেই। বরং অজস্র বাধা, ব্যর্থতা আর সীমাবদ্ধতার মাঝেও যিনি নিজের স্বপ্ন আঁকড়ে থাকতে জানেন, তিনিই একদিন পৌঁছতে পারেন শীর্ষে। আজকের রাঘব তারই জীবন্ত উদাহরণ— এক সাধারণ ছেলেকে অসাধারণ করে তুলেছে তাঁর অদম্য স্পিরিট।