Bomb blast in Raninagar, tension: মুর্শিদাবাদের রানীনগর, এক সময় শান্তিপূর্ণ গ্রামীণ জনপদ হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চল হঠাৎই কেঁপে উঠল গভীর রাতের বোমা বিস্ফোরণে। রবিবার রাত ছিল চারদিকে অন্ধকারে মোড়া, হঠাৎই প্রবল শব্দে কেঁপে ওঠে নজরানা এলাকা। ঘুম ভেঙে চমকে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়—“হঠাৎই কানে এলো প্রচণ্ড আওয়াজ, মনে হচ্ছিল যেন ভূমিকম্প হলো। জানালা কেঁপে উঠল, শিশুরা আতঙ্কে কেঁদে উঠল।” পরে জানা যায়, চার দুষ্কৃতী নাকি বোমা বাঁধার কাজ করছিল রাতের অন্ধকারে। সেই সময় আচমকাই ঘটে বিস্ফোরণ। ঘটনাস্থলেই এক দুষ্কৃতী গুরুতর জখম হয় এবং তাকে দ্রুত মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সূত্রের খবর অনুযায়ী, আহত ব্যক্তির অবস্থা আশঙ্কাজনক। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিন দুষ্কৃতীকে আটক করেছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে—“আমরা খতিয়ে দেখছি কী কারণে বোমা বাঁধা হচ্ছিল। শুধু তাই নয়, কারা এর পিছনে আছে, তাদের উদ্দেশ্য কী—সব দিকই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” স্থানীয় মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রানীনগরের বাসিন্দা সঞ্জয় মণ্ডল বলেন—“আমাদের গ্রাম তো শান্ত এলাকা ছিল। হঠাৎ এভাবে বোমা বিস্ফোরণ হলে আমরা কীভাবে নিরাপদে থাকব? শিশুদের স্কুলে পাঠাতে ভয় করছে।” অপর এক বাসিন্দা মায়া দেবী চোখে জল নিয়ে বলেন—“আমাদের ছেলেমেয়েরা যদি রাস্তায় খেলত, আর তখন যদি বিস্ফোরণ হতো? প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে সবসময়।” গ্রামীণ জনজীবনে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
আতঙ্কে অনেক দোকান সময়ের আগেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মানুষ রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ঢুকে যাচ্ছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী এলাকায় প্রভাব বিস্তার করার জন্য এই বোমা মজুত করছিল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরেই এই বিস্ফোরণ ঘটতে পারে বলেও অনুমান তদন্তকারীদের। যদিও পুলিশ এখনও চূড়ান্ত কিছু জানায়নি। রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। বিরোধীরা অভিযোগ তুলছে, প্রশাসনের শিথিলতার কারণেই এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। স্থানীয় এক বিরোধী নেতা বলেন—“রাতের অন্ধকারে বোমা বাঁধা হচ্ছে, আর প্রশাসন জানতেও পারছে না—এটা সত্যিই উদ্বেগজনক। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।” শাসকদল অবশ্য পাল্টা যুক্তি দিয়েছে। তাঁদের মতে, বিরোধীরা অযথা ঘটনাটিকে রাজনৈতিক রঙ দিতে চাইছে। d

শাসক দলের এক স্থানীয় নেতা বলেন—“পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে তিনজনকে আটক করেছে। খুব দ্রুতই মূল চক্র ধরা পড়বে। রাজনীতির সঙ্গে এই ঘটনার কোনও যোগ নেই।” আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রানীনগরের বিভিন্ন সংবেদনশীল এলাকায় চলছে তল্লাশি। গ্রামে গ্রামে চলছে পুলিশি নজরদারি। মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন—“এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করতে আমরা বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করেছি। কেউ ধরা পড়া থেকে বাঁচতে পারবে না।” নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের বোমা বিস্ফোরণ কেবল সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্কই বাড়ায় না, বরং ভবিষ্যতে বড়সড় অশান্তির ইঙ্গিত দেয়। তাঁদের কথায়, “যেখানে দুষ্কৃতীরা এত সহজে বোমা তৈরি করতে পারছে, সেখানে আইন-শৃঙ্খলার ফাঁকফোকর স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।” তাঁরা আরও বলেন, প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে, না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। এই ঘটনার ছায়া পড়েছে এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও। স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল আতঙ্কে আছেন। বাজারের এক ব্যবসায়ী রতন দত্ত বলেন—“এই ধরণের ঘটনা চলতে থাকলে বাইরের লোকজন আমাদের এলাকায় ব্যবসা করতে আসবে না। আমাদের উপার্জনে ভাটা পড়বে।” শিক্ষকদেরও চিন্তা বাড়ছে। এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বললেন—“শিশুরা ভয়ে স্কুলে আসতে চাইছে না। বাবা-মায়েরা ওদের বাইরে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন।” এভাবেই বিস্ফোরণ যেন গোটা সামাজিক পরিমণ্ডলকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ঘটনাটির ভবিষ্যৎ প্রভাবও ভয়াবহ হতে পারে। যদি প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তবে দুষ্কৃতীরা আরও সাহসী হয়ে উঠতে পারে। রাজনৈতিক সংঘর্ষ, সামাজিক অশান্তি এমনকি প্রাণহানির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাই সাধারণ মানুষের একটাই দাবি—দোষীদের যেন দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয় এবং কড়া শাস্তি দেওয়া হয়। মুর্শিদাবাদের মতো ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জেলায় শান্তি বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয়রা মনে করছেন, পুলিশ-প্রশাসন যদি এখনই শক্ত হাতে লাগাম টেনে ধরে, তবে আবারও রানীনগর তার স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ চেহারা ফিরে পাবে।