Follow these 4 rules of Vastu Shastra to bring happiness and prosperity in life:ভারতের প্রাচীন জ্ঞানভাণ্ডারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল বাস্তু শাস্ত্র। আয়ুর্বেদ যেমন আমাদের শরীর সুস্থ রাখার নিয়ম শেখায়, তেমনি বাস্তু শাস্ত্র আমাদের ঘরবাড়ি, জীবনযাপন ও পরিবেশকে কেমনভাবে সাজালে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আসবে তার দিকনির্দেশ দেয়। প্রাচীন ঋষিরা বিশ্বাস করতেন, আমাদের চারপাশে অদৃশ্য এক শক্তি প্রবাহিত হয়। সেই শক্তির সঠিক ব্যবহার হলে জীবনে ইতিবাচকতা আসে, আর ভুল ব্যবহার হলে জীবনে নেমে আসে দুর্ভাগ্য। তাই আজও বহু পরিবার তাদের ঘরবাড়ি বা দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো নিয়মে বাস্তু মেনে চলেন।সম্প্রতি বাস্তু শাস্ত্র বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জীবনে সমৃদ্ধি আনতে গেলে কয়েকটি সাধারণ নিয়ম মানা অত্যন্ত জরুরি। এগুলো হয়তো আমাদের কাছে তুচ্ছ মনে হতে পারে, কিন্তু এগুলোর প্রভাব জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়। বিশেষত চারটি সহজ নিয়ম মানলেই সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তির পরিবেশ তৈরি হয় বলে দাবি করা হয়েছে।প্রথমত, বাড়ির প্রবেশদ্বারের কাছে কোনোভাবেই ডাস্টবিন রাখা উচিত নয়। এটি নেগেটিভ শক্তিকে আমন্ত্রণ জানায়। শুধু তাই নয়, শাস্ত্র মতে এতে লক্ষ্মী দেবী রুষ্ট হন এবং অর্থনৈতিক সমস্যার সূত্রপাত হয়।দ্বিতীয়ত, খাবার খাওয়ার আগে সবসময় হাত-পা ধুয়ে খাওয়া দরকার। এটি শুধু স্বাস্থ্যগত কারণেই নয়, মানসিক শান্তি ও আর্থিক স্থিতিশীলতার সঙ্গেও জড়িত বলে বাস্তু শাস্ত্রের দাবি।তৃতীয়ত, রাতে রান্নাঘরে এঁটো বাসন কখনোই ফেলে রাখা উচিত নয়। এভাবে রাখলে বাস্তু দোষ তৈরি হয়, যা সংসারের সুখ-শান্তি কমিয়ে দিতে পারে।
চতুর্থত, সন্ধ্যাবেলায় দুধ, দই বা নুন দান একেবারেই বর্জনীয়। এই সময়ে এগুলো দান করলে আর্থিক ক্ষতি ও মানসিক অশান্তি বাড়তে পারে। তার পরিবর্তে সকালে দান করাই উত্তম বলে শাস্ত্রে উল্লেখ আছে।সরকারিভাবে বাস্তু শাস্ত্র কোনো আইন বা নির্দেশিকা নয়, তবে ভারতে বিভিন্ন প্রান্তে গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচি কিংবা নতুন আবাসন প্রকল্পে বাস্তু শাস্ত্রের পরামর্শককে রাখা হয়ে থাকে। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটকের মতো রাজ্যে বাস্তু বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা এখনো গুরুত্ব পায়। অনেক সময় সরকারি ভবন নির্মাণেও বাস্তু শাস্ত্রের নীতি মেনে চলা হয়।কলকাতার এক বাসিন্দা শ্রীমতী মৌমিতা দত্ত বলেন, “আগে এসব বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু কয়েক বছর ধরে নিয়ম মেনে চলার পর দেখছি সত্যিই পরিবেশটা বদলে গেছে। সংসারে শান্তি বেড়েছে।” অন্যদিকে, নিউটাউনের বাসিন্দা সঞ্জয় সেনের বক্তব্য, “আমি মনে করি এগুলো মানসিক দিক থেকেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ঘর যদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, মনও ভালো থাকে।”তবে সবাই যে এ বিষয়ে একমত, তা নয়। তরুণ প্রজন্মের অনেকেই একে কুসংস্কার বলে মনে করেন। তাদের মতে, জীবনের উন্নতি আসে পরিশ্রম ও পরিকল্পনার মাধ্যমে, বাস্তু মানলে নয়।বাস্তু শাস্ত্রের প্রভাবকে অনেকেই বিজ্ঞানের সঙ্গে মেলাতে চান না।

কিন্তু মনস্তাত্ত্বিকভাবে দেখলে, নিয়মগুলো খারাপ নয়। যেমন—প্রবেশদ্বারে ডাস্টবিন না রাখলে বাড়ি পরিষ্কার থাকে, হাত-পা ধুয়ে খেলে স্বাস্থ্য ভালো হয়, রাতে এঁটো বাসন না রাখলে রান্নাঘর পরিচ্ছন্ন থাকে—এসব আসলে শৃঙ্খলিত জীবনযাপনের অঙ্গ। ফলে এগুলো মেনে চললে ব্যক্তি ও পরিবার স্বাভাবিকভাবেই ইতিবাচক প্রভাব পেতে পারে।আধুনিক যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের মাঝেও বাস্তু শাস্ত্রের গুরুত্ব একেবারেই হারিয়ে যায়নি। বরং, নতুন প্রজন্মের মধ্যেও অনেকে এটিকে জীবনযাপনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করছেন। আগামী দিনে হয়তো আরও গবেষণা হবে এই শাস্ত্রকে কেন্দ্র করে, যাতে এর বৈজ্ঞানিক দিকগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।বাস্তু শাস্ত্রের নিয়মগুলো শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, বরং একটি শৃঙ্খলিত জীবনযাপনের পরামর্শও বটে। প্রবেশদ্বারে ডাস্টবিন না রাখা, খাবারের আগে হাত-পা ধোওয়া, রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা, সঠিক সময়ে দান করার মতো সহজ নিয়ম আসলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শৃঙ্খলা আনে। আর শৃঙ্খলাই সুখ-সমৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি। তাই বিশ্বাস করুন বা না-করুন, এই নিয়মগুলো মানলে জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলেই মনে করেন অনেকেই।