How do you know the Durga Puja schedule and the arrival of the Goddess this year?:বাঙালির জীবনে দুর্গাপুজো শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি এক অনন্য সাংস্কৃতিক আবেগ। সারা বছর ধরে মানুষ অপেক্ষা করে এই কয়েকটা দিনের জন্য। পুজোর আগমনে শহর থেকে গ্রাম—সব জায়গাই আলোকসজ্জায় ভরে ওঠে। প্রতিটি পাড়ায় শুরু হয় প্যান্ডেল বানানো, প্রতিমা গড়া, আর সেই সঙ্গে জমে ওঠে কেনাকাটা। তবে এর বাইরেও দুর্গাপুজো মানে মিলনমেলা। সমাজের সব স্তরের মানুষ ভেদাভেদ ভুলে মেতে ওঠেন আনন্দে।২০২৫ সালের দুর্গাপুজো তাই নিয়ে এসেছে এক নতুন উত্তেজনা। কারণ এই বছর সময়সূচীর মধ্যে রয়েছে কিছু ভিন্নতা—বিশেষত সন্ধিপূজা, দেবীর আগমন এবং বিসর্জনের সময়কাল নিয়ে।পঞ্জিকা অনুযায়ী এবছরের পুজো শুরু হবে ২৭ সেপ্টেম্বর, শনিবার পঞ্চমী তিথি দিয়ে।বিজয়া দশমী: অবশেষে ২ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৯ মিনিটে শুরু হয়ে দুপুর ২টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত চলবে। এরপরই শুরু হবে প্রতিমা বিসর্জন ও সিঁদুরখেলা।পঞ্চমী: ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা ৪৩ মিনিটে শুরু হয়ে সকাল ৮টা ৪৯ মিনিটে শেষ হবে।মহাষষ্ঠী: ২৮ সেপ্টেম্বর, রবিবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে শুরু হয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত চলবে। এই দিন থেকেই পুজোর মূল উৎসব ধরা হয়।মহাসপ্তমী: ২৯ সেপ্টেম্বর, সোমবার সকাল ১০টা ৪৪ মিনিটে শুরু হয়ে দুপুর ১২টা ২৮ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। কলাবউ স্নান ও নবপত্রিকা প্রবেশের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু হয়।
মহাষ্টমী: ৩০ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা ২৭ মিনিটে শুরু হবে। এই দিনই দেবীর শক্তি প্রকাশ পায় পূর্ণতায়। সন্ধিপূজা এই দিনের অন্যতম প্রধান আচার, যা দুপুর ১টা ২১ মিনিট থেকে ২টা ৯ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে বেলা ১টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে বলিদান।মহানবমী: একই দিনে শুরু হওয়া মহানবমী তিথি চলবে ১ অক্টোবর, বুধবার দুপুর ২টা ৩৬ মিনিট পর্যন্ত।পুজোর সময় যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করেছে। কলকাতা ও জেলাগুলিতে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে, বাড়ানো হবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ। পৌরসভা, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি মিলিতভাবে কাজ করবে যাতে ভিড় সামলানো যায় এবং সাধারণ মানুষ নির্বিঘ্নে উৎসব উপভোগ করতে পারেন।কলকাতার বিভিন্ন পুজো কমিটির সদস্যদের মতে, এবছর দেবীর আগমন ও গমনের বার্তা বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। “দেবী গজে আসছেন, যার মানে প্রকৃতির সমৃদ্ধি ও শান্তি আসবে আমাদের ঘরে,”—বললেন এক পুজো উদ্যোক্তা। অন্যদিকে, বিসর্জনের সময় দেবীর গমন হবে দোলায়। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে আবেগ মিশ্রিত আনন্দ।
কারণ দোলা মানে ভক্তের মনে কিছুটা বিষাদও থেকে যায়—বিদায় নিলেও দেবী আবার ফিরবেন আগামী বছর।দেবীর আগমন ও গমন বাঙালির কাছে এক প্রতীকী ভাষা। গজে আগমন মানে শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা, প্রকৃতির প্রাচুর্য। আবার দোলায় গমন মানে জীবনের চক্র, বিদায়ের সুর, তবে তার মধ্যেই আগামী বছরের প্রত্যাবর্তনের আশা।অন্যদিকে, সময়সূচীর এই সামান্য ভিন্নতা পুজোপ্রেমীদের মধ্যে এক নতুন আগ্রহ তৈরি করেছে। বিশেষত সন্ধিপূজার নির্দিষ্ট সময় ও নবমীর সঙ্গে অষ্টমীর সংযুক্তি এক আলাদা মাত্রা যোগ করছে এবারের উৎসবে।প্রশাসন, পুজো কমিটি এবং সাধারণ মানুষ—সকলের প্রত্যাশা এবছরের দুর্গাপুজো হোক শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও আনন্দঘন। বড় পুজোগুলি যেমন শোভাবর্ধক হবে, তেমনই ছোট পাড়ার পুজোও হবে সামাজিক বন্ধনের প্রতীক।দুর্গাপুজো কেবল ধর্মীয় আচার নয়, এটি বাংলার আত্মার উৎসব। এবছর দেবীর আগমন গজে এবং গমন দোলায়—এই প্রতীকী বার্তা বাঙালির মনে একদিকে যেমন আনন্দ জাগাচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি ভবিষ্যতের প্রতি আস্থা ও আশাবাদও বাড়াচ্ছে। দিন গুনছে প্রতিটি মানুষ—কবে আবার প্রতিমার সামনে দাঁড়িয়ে দেবীর আরাধনা করবেন, কবে কানে ভেসে আসবে ঢাকের শব্দ, আর কবে জমে উঠবে আনন্দ উৎসব।