Special science camp for lunar eclipse in Asansol:মানুষের কৌতূহল চিরকালই আকাশ ও মহাজাগতিক ঘটনাগুলিকে ঘিরে। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ এমন এক বিরল দৃশ্য, যা শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানীদেরই নয়, সাধারণ মানুষকেও মোহিত করে। দীর্ঘদিন ধরে চন্দ্রগ্রহণকে ঘিরে নানা কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা সমাজে রয়ে গেছে। কারও বিশ্বাস—গ্রহণের সময় খাবার খাওয়া উচিত নয়, আবার কারও মতে এ সময় গর্ভবতী নারীদের বাইরে বেরোনো বিপজ্জনক। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান এসব বিশ্বাসকে অস্বীকার করেছে। তবুও গ্রামীণ সমাজে এর প্রভাব রয়ে গেছে। এই প্রেক্ষিতেই পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ এগিয়ে এসেছে সচেতনতার বার্তা নিয়ে।রবিবার রাতে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় স্পষ্ট দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের আসানসোল এলাকার কুলটির মিঠানি গ্রামে এই উপলক্ষে বিশেষ শিবিরের আয়োজন করে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ।
সন্ধ্যা নামতেই ভিড় জমতে শুরু করে গ্রামের মাঠে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রবীণ—সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন আকাশের দিকে তাকিয়ে সেই দুর্লভ দৃশ্য দেখার জন্য।বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা দূরবীন বসিয়ে দেন, যাতে উপস্থিত মানুষরা কাছ থেকে চন্দ্রগ্রহণের প্রতিটি মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। ছোটরা প্রথমবার চাঁদকে এত কাছে থেকে দেখে অভিভূত হয়ে ওঠে। বিজ্ঞান মঞ্চের স্বেচ্ছাসেবকরা শুধু গ্রহণ দেখানোতেই থেমে থাকেননি, তাঁরা শিশুদের জন্য কুইজ প্রতিযোগিতা ও মহাকাশ নিয়ে গল্প বলার আয়োজনও করেন।যদিও এদিন সরাসরি কোনও সরকারি প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না, তবে আসানসোলের শিক্ষা ও বিজ্ঞান দপ্তরের পক্ষ থেকে এই ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনও জানায়, এ ধরনের বিজ্ঞান শিবির শিশু-কিশোরদের মধ্যে জ্ঞানপিপাসা জাগাতে সাহায্য করে এবং কুসংস্কার থেকে মানুষকে মুক্ত করে।
শিবিরে অংশ নিতে আসা এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “ছোটবেলায় আমাদের শেখানো হয়েছিল গ্রহণ মানেই ঘরে বসে থাকা, কিছু খাওয়া যাবে না। কিন্তু আজ বিজ্ঞানীরা এসে আমাদের বোঝালেন, এসবের কোনও ভিত্তি নেই।” অন্যদিকে, এক মা তাঁর ছেলেকে দূরবীনে চাঁদ দেখানোর পর আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, “এতদিন শুধু গল্পে শুনেছি, আজ চোখে দেখলাম। আমাদের বাচ্চারা ছোট থেকেই বিজ্ঞানের সঠিক শিক্ষা পাচ্ছে, এটা খুবই আনন্দের।চন্দ্রগ্রহণ একটি স্বাভাবিক মহাজাগতিক প্রক্রিয়া। পৃথিবী, সূর্য ও চাঁদের অবস্থানজনিত কারণে এই গ্রহণ ঘটে। অথচ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অজস্র কুসংস্কার। বিজ্ঞানীদের মতে, এসব কুসংস্কার মানুষের জ্ঞানচর্চাকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই সমাজে সচেতনতা তৈরি করা খুব জরুরি। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, বিজ্ঞানকে মানুষের দরজায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হলে অজ্ঞতা ভাঙা যাবে সহজেই।