Sunday, September 7, 2025
Google search engine
HomeUncategorised২০৪৭ সালের মধ্যে বিশ্বসেরা কৃষি শক্তি হয়ে উঠবে উত্তরপ্রদেশ

২০৪৭ সালের মধ্যে বিশ্বসেরা কৃষি শক্তি হয়ে উঠবে উত্তরপ্রদেশ

Uttar Pradesh will become the world’s leading agricultural power by 2047: ভারতের ইতিহাসে কৃষিই দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। প্রাচীনকাল থেকেই কৃষিজ উৎপাদন ভারতের গ্রামীণ জীবনের প্রধান ভরসা। স্বাধীনতার পরে ‘সবুজ বিপ্লব’ ভারতকে খাদ্য ঘাটতি থেকে আত্মনির্ভরতার পথে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজকের দিনে কৃষিকে শুধু উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে চলা সম্ভব নয়। বাজার, প্রযুক্তি, সংরক্ষণ এবং রপ্তানির সঙ্গে তাল মিলিয়ে না চললে ভবিষ্যতের চাহিদা মেটানো দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে। এই প্রেক্ষাপটেই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঘোষণা করেছেন এক মহত্‍ প্রকল্প— ‘বিকশিত উত্তরপ্রদেশ ২০৪৭’। তাঁর লক্ষ্য, আগামী ২০৪৭ সালের মধ্যে উত্তরপ্রদেশকে বিশ্বের শীর্ষ কৃষিশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।

‘বিকশিত উত্তরপ্রদেশ ২০৪৭’-এর রূপরেখায় কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রকে একসঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী যোগীর মতে, কৃষিকে শুধু গ্রামীণ জীবিকা হিসেবে না দেখে, তাকে বিশ্বমানের শিল্পের স্তরে উন্নীত করতে হবে।
এই প্রকল্পের প্রাথমিক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। তখনই উত্তরপ্রদেশ ফসল উৎপাদনে ভারতের প্রথম স্থানে পৌঁছাবে বলে দাবি করা হয়েছে। এরপর ধাপে ধাপে আন্তর্জাতিক স্তরে মেক্সিকো, চিন, ফ্রান্স এবং আমেরিকার মতো কৃষিশক্তিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। আরও দূরদৃষ্টির পরিকল্পনা রয়েছে—২০৪৭ সালের মধ্যে রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং কানাডার মতো কৃষিজ রপ্তানিকারী শক্তিশালী দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে উত্তরপ্রদেশ।

full

যোগী আদিত্যনাথের স্পষ্ট ঘোষণা—ভারতের উন্নয়ন কেবল শিল্পনির্ভর নয়, কৃষি ও শিল্পের যুগলবন্দিতেই দেশের সর্বাঙ্গীণ অগ্রগতি সম্ভব। কৃষিকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে এক নতুন অবকাঠামো। সরকার ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে—

  • কৃষিজ পণ্যের সংরক্ষণ ও ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ
  • প্রক্রিয়াকরণ অবকাঠামো তৈরির জন্য PACS, FPO, মেগা ফুড পার্ক এবং কোল্ড চেইন।
  • কৃষি শিক্ষা, উদ্ভাবন ও গবেষণার সম্প্রসারণ।
  • দীর্ঘমেয়াদি খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থার রূপরেখা।
  • বৈজ্ঞানিক কৌশল ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি।
4073354 kjsdak

কৃষকদের একাংশের মতে, এই উদ্যোগ তাঁদের জীবনে এক নতুন দিশা দেখাবে। দীর্ঘদিন ধরে কৃষকরা মুখোমুখি হয়েছেন সংরক্ষণ সমস্যার, বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ার, এবং ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির। কোল্ড চেইন ও স্টোরেজের উন্নতি হলে সেই সমস্যাগুলি অনেকটাই কাটবে বলে আশা করছেন তাঁরা।
তবে গ্রামীণ সমাজের একাংশের মধ্যে সংশয়ও রয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে সরকারি নীতিগুলি ঠিক কতটা কার্যকর হবে? প্রযুক্তির প্রয়োগ কি আদৌ গ্রামের প্রান্তিক কৃষকের কাছে পৌঁছবে?

1508788624 1238

উত্তরপ্রদেশ ভারতের কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গম, আখ, ধান ও আলু উৎপাদনে রাজ্যটি দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানে রয়েছে। তবুও দীর্ঘদিন ধরে কৃষির সমস্যা রয়ে গিয়েছে—সংরক্ষণের ঘাটতি, প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাব, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সুযোগ না পাওয়া।
‘বিকশিত উত্তরপ্রদেশ ২০৪৭’-এর পরিকল্পনা এই সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টা করছে। যদি সরকার ঘোষিত পদক্ষেপগুলি বাস্তবে কার্যকর হয়, তবে উত্তরপ্রদেশ শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বের কৃষি মানচিত্রে নতুন ইতিহাস লিখতে সক্ষম হবে।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্প সফল হলে উত্তরপ্রদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানি বহুগুণে বাড়বে, গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে।আগামী দুই দশক উত্তরপ্রদেশের কৃষিক্ষেত্রের জন্য হবে পরীক্ষা ও সাফল্যের সময়। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সেরা কৃষি রাজ্য হয়ে ওঠা প্রথম ধাপ। তারপরই শুরু হবে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি, উন্নত প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা, এবং আন্তর্জাতিক মানের রপ্তানি কৌশল—এই তিনটি ক্ষেত্রেই রাজ্যকে দ্রুত অগ্রগতি করতে হবে।

25A 78


একই সঙ্গে প্রয়োজন হবে কৃষকদের মধ্যে প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি। কারণ প্রযুক্তি ও অবকাঠামো কেবলমাত্র তখনই ফলপ্রসূ হবে যখন সাধারণ কৃষক সেগুলি গ্রহণ করবেন।যোগী আদিত্যনাথের ঘোষণা নিঃসন্দেহে এক সাহসী স্বপ্ন। উত্তরপ্রদেশকে বিশ্বের শীর্ষ কৃষিশক্তি বানানোর এই লক্ষ্য যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে শুধু রাজ্যের নয়, ভারতেরও কৃষি ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় রচিত হবে। তবে এই স্বপ্নের পথে রয়েছে চ্যালেঞ্জ—অবকাঠামো নির্মাণ, প্রযুক্তি প্রয়োগ, কৃষকের কাছে পৌঁছনো নীতি, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা।ভবিষ্যতই বলবে, ২০৪৭ সালে ভারতবর্ষ তার এই কৃষি যাত্রাকে কতদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তবে আজকের এই ঘোষণাই স্পষ্ট করে দিচ্ছে—কৃষি আর শুধু জীবিকার উপায় নয়, বরং ভারতের বিশ্বজয়ের হাতিয়ার।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments