Friday, September 5, 2025
Google search engine
Homeলাইফস্টাইলরেসিপিশরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে অপরিসীম তেজপাতা

শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে অপরিসীম তেজপাতা

Bay leaves are very beneficial for maintaining body balance: বাঙালির রান্নাঘরে মশলার বাক্স খুললেই যে কয়েকটি জিনিস চোখে পড়ে, তার মধ্যে তেজপাতা অন্যতম। খিচুড়ি, পোলাও, মাংস বা মাছের ঝোলে—তেজপাতার বিশেষ ঘ্রাণ যেন স্বাদের জাদু বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। তবে এই পাতার গুণাগুণ শুধু রান্নার স্বাদে সীমাবদ্ধ নয়। হাজার বছরের আয়ুর্বেদ থেকে শুরু করে আধুনিক গবেষণাও বারবার বলছে, তেজপাতা আসলে এক অসাধারণ ভেষজ, যার রয়েছে শরীর ও মনের নানা উপকারিতা।তেজপাতার ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই প্রচলিত। গ্রিক ও রোমান সভ্যতায় বিজেতার মাথায় তেজপাতার মুকুট পরানোর রীতি ছিল, যা শক্তি, জ্ঞান আর বিজয়ের প্রতীক হিসেবে ধরা হতো। আজকের দিনে সেই তেজপাতাই আমাদের ঘরে-ঘরে রান্নার স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি এক অনন্য ওষুধি গুণে ভরপুর প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে পরিচিত।

বিশেষ করে তেজপাতা সেদ্ধ করে তার জল পান করলে শরীর পায় বহু উপকার। গবেষণায় দেখা গেছে, তেজপাতার জলে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিশেষ ধরনের এনজাইম, যা হজম প্রক্রিয়াকে অনেকটাই মসৃণ করে। ফলে গ্যাস, অম্বল বা হালকা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়। সকালে খালি পেটে এক কাপ তেজপাতার জল খাওয়া এই সমস্যাগুলির সমাধানে কার্যকরী বলে ধরা হয়।এছাড়া, তেজপাতা ভরপুর থাকে ভিটামিন সি, এ ও খনিজ পদার্থে। এ সব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সিজন চেঞ্জ বা ভাইরাল সংক্রমণের সময় নিয়মিত তেজপাতার জল পান করলে অসুখ-বিসুখের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও তেজপাতার জল সহায়ক হতে পারে। কারণ এর নির্যাস রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডাক্তারি পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।

shutterstock 2316636813

তেজপাতার জল শরীরকে ডিটক্স করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শরীরের ভেতরের টক্সিন বের করে দেওয়ার ফলে ত্বক থাকে উজ্জ্বল ও সুস্থ। এমনকি এই জল দিয়ে চুল ধুলে চুল পড়া কমে, খুশকিও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে।আরেকটি দিক হলো মানসিক স্বাস্থ্য। তেজপাতার ঘ্রাণের বিশেষত্ব হলো এটি মনকে শান্ত করতে পারে। তেজপাতার জল নিয়মিত পান করলে মানসিক চাপ কমে এবং ঘুমের গুণমানও উন্নত হয়। ফলে সারাদিনের ক্লান্তি শেষে শরীর ও মন ফিরে পায় এক নতুন সতেজতা।আয়ুষ মন্ত্রক এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সংগঠন বহুবার জোর দিয়ে বলেছে, দেশীয় ভেষজ ব্যবহারকে দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আয়ুর্বেদ ও ইউনানির গবেষণাপত্রেও তেজপাতার ভেষজগুণ স্বীকৃত হয়েছে। যদিও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত ব্যবহার এড়াতে বলা হয়েছে, বিশেষ করে যাঁরা দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন।

WhatsApp Image 2024 02 19 at 12.06.28 PM

কলকাতার একাধিক আয়ুর্বেদিক ডাক্তার জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে অনেক রোগীই তেজপাতার জলের উপকারিতা নিয়ে জানতে চান। সাধারণ মানুষও এখন ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করেছেন, এই পাতার ভেতরে লুকিয়ে আছে ভরপুর স্বাস্থ্যসম্ভার। দক্ষিণ কলকাতার গৃহবধূ শর্মিলা দত্ত বলেন, “আমি প্রতিদিন সকালে খালি পেটে তেজপাতার জল খাই। আগে যেটা গ্যাস আর অম্বলের সমস্যা ছিল, সেটা অনেকটাই কমেছে।”এমনই আরেক মত প্রকাশ করেছেন কলেজপড়ুয়া রিয়া মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, “পড়াশোনার চাপের জন্য রাতে ঘুম হত না। এখন প্রায় এক মাস ধরে তেজপাতার জল খাচ্ছি। মনে হয় চাপ কিছুটা কমছে আর ঘুমও ভালো হচ্ছে।”বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে, তেজপাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষকে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শরীরের ভেতরের ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিক্যাল দূর করতে পারে বলে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঠিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

bayleaves

এ ছাড়া হজমের এনজাইম সক্রিয় রাখার ফলে খাবার ভাঙতে সুবিধা হয় এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। এর ফলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হওয়ার পাশাপাশি শরীরে অপ্রয়োজনীয় চর্বি জমার প্রবণতাও কিছুটা কমে।যদিও এ ধরনের ভেষজ পানীয় নিয়মিত অভ্যাস করা ভালো, কিন্তু চিকিৎসকরা মনে করিয়ে দেন, এটি কখনোই বিকল্প চিকিৎসা নয়। সঠিক খাবার, ব্যায়াম ও জীবনযাত্রার সঙ্গে মিশিয়ে তবেই এই ধরনের ভেষজ অভ্যাস গ্রহণ করলে দীর্ঘমেয়াদি ফল মেলে।আজকের ব্যস্ত জীবনে মানুষ প্রায়ই প্রকৃতির সঙ্গে সংযোগ হারিয়ে ফেলছে। অথচ সহজ কিছু ভেষজের গুণে শরীর ও মন উভয়ই পেতে পারে নতুন প্রাণশক্তি। তেজপাতার জল সেদিক থেকে এক অমূল্য উপহার।

2148426116

আগামী দিনে স্বাস্থ্যসচেতনতা যত বাড়বে, ততই মানুষ প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকে ফিরে পেতে চাইবে। খাদ্যাভ্যাসে তেজপাতার মতো ভেষজ জল অন্তর্ভুক্ত করা এক সহজ অথচ কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে। তবে চিকিৎসকরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিস বা অন্য দীর্ঘস্থায়ী অসুখে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই আগে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া উচিত।তেজপাতা—যা একসময় কেবল রান্নার স্বাদ বাড়ানোর উপাদান হিসেবে পরিচিত ছিল—আজ সেটাই হয়ে উঠছে শরীরের ভারসাম্য রক্ষার এক প্রাকৃতিক ওষুধি। এর ভেতরে থাকা ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শুধু শরীরকে রোগমুক্তই রাখে না, বরং মনকেও শান্ত করে। প্রতিদিনের জীবনে এক কাপ তেজপাতার জল অন্তর্ভুক্ত করা মানেই শরীর ও মনে এনে দেওয়া এক নতুন সতেজতা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments