DVC releases water again: বর্ষার মরসুমে জলাধারগুলি রক্ষণাবেক্ষণ এবং বন্যা প্রতিরোধে নিয়মিত জল ছাড়াই ডিভিসি-র (ড্যামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন) দায়িত্ব। প্রতি বছর বর্ষা যত তীব্র হয়, তত বাড়ে জলাধারে সঞ্চিত জলের পরিমাণ। আর ঠিক তখনই শুরু হয় নিয়ন্ত্রিত জল ছাড়ার প্রক্রিয়া। গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির ফলে ফের বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গিয়েছে মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধারের জলস্তর। তাই জলাধারের ভারসাম্য বজায় রাখতে ফের জল ছাড়ল ডিভিসি।ডিভিসি সূত্রে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে একসঙ্গে ৫৭,৩৩০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এর মধ্যে মাইথন জলাধার থেকে ছাড়া হয়েছে ২২,৫৬২ কিউসেক এবং পাঞ্চেত থেকে ৩৪,৭৬৮ কিউসেক জল। গতবারের তুলনায় এবার জল ছাড়ার পরিমাণ অনেকটাই বেশি বলে স্বীকার করেছে ডিভিসি।এই জল ছাড়ার ফলে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলার নিম্নভূমি অঞ্চলে প্লাবনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু অংশে ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি উত্তেজক হয়ে উঠেছে। নদী সংলগ্ন এলাকাগুলিতে জলস্তর ক্রমশ বাড়ছে।জল ছাড়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নড়েচড়ে বসেছে জেলা প্রশাসন। হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে জারি হয়েছে উচ্চ সতর্কতা। স্থানীয় বিডিও ও পঞ্চায়েত স্তরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, প্রতিটি নদীঘেঁষা এলাকা ও নিচু গ্রামে নজরদারি জারি রাখতে হবে।
পাশাপাশি, বিপদসংকেত পৌঁছাতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট থানাগুলিতে। জল ছাড়ার খবর জানিয়ে নদী পারের বসতিদের সতর্ক করা হচ্ছে। বেশ কিছু এলাকায় ইতিমধ্যেই নৌকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ব্লক স্তরে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।পাঁচলা, মুড়াগাছা, ঘাটাল, মঙ্গলকোট, আরামবাগ, খণ্ডঘোষ, বিষ্ণুপুর— এমন বহু এলাকা রয়েছে যেখানে ইতিমধ্যেই নদীর জল ঢুকতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।বর্ষায় এইরকম জল ছাড়ার সিদ্ধান্ত প্রায়ই দুই ধারার বিপরীত প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। একদিকে এটি প্রয়োজনীয়, কারণ অতিরিক্ত জল ধরে রাখলে জলাধার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অন্যদিকে, আচমকা জল ছাড়ার ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে, সাধারণ মানুষ পড়েন বিপদের মুখে।ডিভিসি যদিও দাবি করেছে তারা পূর্ব সতর্কতা সহই জল ছেড়েছে এবং প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে, তবুও বাস্তবে বহু বাসিন্দা অভিযোগ করছেন যে আগে থেকে কোনও রকম বার্তা পাননি তাঁরা। ফলে হঠাৎ জলবৃদ্ধি তাঁদের প্রস্তুতিহীন করে তোলে।আবহাওয়া দফতর পূর্বাভাস দিয়েছে যে ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গে আগামী কয়েকদিন আরও বৃষ্টি হতে পারে। ফলে জলাধারে ফের জলের স্তর বাড়তে পারে।

ফলে আরও এক বা একাধিক দফায় জল ছাড়তে হতে পারে ডিভিসি-কে।এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনগুলির উচিত প্লাবনপ্রবণ এলাকাগুলিতে অস্থায়ী ত্রাণশিবির তৈরি রাখা, পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা রাখা এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে তার বিকল্প উপায় চিন্তা করা।সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজন, ডিভিসি এবং রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে আরও দ্রুত তথ্য বিনিময়ের ব্যবস্থা, যাতে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগেই জল ছাড়ার খবর পেয়ে নিজেদের বাঁচানোর ব্যবস্থা করতে পারেন।ডিভিসি-র জল ছাড়ার ঘটনা বর্ষার সঙ্গে প্রায় নিয়মিতভাবে জুড়ে গেছে। তবুও প্রতিবছর একই ধরনের ভোগান্তি যেন নিত্য নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে দক্ষিণবঙ্গের নদী পারের মানুষের কাছে। সঠিক সময়ে সতর্কতা, সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশ ও যৌথ পরিকল্পনা থাকলে এর প্রভাব অনেকটাই কমানো সম্ভব।এই মুহূর্তে প্রয়োজন, বাস্তব পরিস্থিতিকে গুরুত্ব দিয়ে প্রশাসন, ডিভিসি এবং সাধারণ মানুষ— তিন পক্ষের সম্মিলিত সচেতনতা ও সতর্কতা। কারণ প্রকৃতির নিয়ম আটকানো না গেলেও, তার প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের দায়িত্ব।