Huge turnout at the ‘Our Neighborhood, Our Solution’ camp!: জনসংযোগকে হাতিয়ার করে প্রশাসনের দ্বার মানুষের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নতুন প্রকল্প ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল, গ্রাসরুট স্তরে গিয়ে সরাসরি সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলি শুনে দ্রুততার সঙ্গে তার সমাধান করা। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ আসছিল—প্রশাসনের প্রকল্পগুলি নিচু স্তরে পৌঁছচ্ছে না, কিংবা পৌঁছলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে দেরিতে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে, তৃণমূল সরকারের এই প্রকল্পকে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের এক সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।প্রথম থেকেই প্রকল্পটির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ ছিল প্রবল। আর এই প্রকল্পের প্রথম শিবিরেই সেই আগ্রহ বাস্তব রূপ পেল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জে।দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের বালুপাড়া কলোনি নিবেদিতা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হল ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’-এর প্রথম শিবির। ভোর থেকেই এলাকার সাধারণ মানুষ ভিড় জমাতে শুরু করেন বিদ্যালয়ের চত্বরে। মহিলা, বৃদ্ধ, যুবক—সকলেই এসেছিলেন তাঁদের নানান সমস্যার কথা বলার আশায়।
উপস্থিত ছিলেন কুমারগঞ্জ ব্লকের বিডিও শিবাস বিশ্বাস, কুমারগঞ্জ বিধানসভার বিধায়ক তোরাফ হোসেন মন্ডল, কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি উমা রায়, সমাজসেবী শেখর রায়, আনিসুর সরকার সহ প্রশাসনের একাধিক প্রতিনিধি।শিবিরে উপস্থিত জনগণ তাঁদের বহুদিনের জমি সংক্রান্ত সমস্যা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, রেশন সংক্রান্ত অসুবিধা, পানীয় জল সংকট, পুরাতন বাড়ির বিপদজনক অবস্থা ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবের মতো সমস্যা তুলে ধরেন। অনেকেই অভিযোগ করেন যে বারবার বলার পরেও স্থানীয় স্তরের কোনও সমাধান হয়নি। কিন্তু এদিন প্রথমবার, শীর্ষ প্রশাসনের কাছে সরাসরি নিজের বক্তব্য রাখার সুযোগ পেয়ে তাঁরা ভীষণভাবে আশাবাদী হয়ে ওঠেন।বিডিও শিবাস বিশ্বাস এদিন ঘোষণা করেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য হল প্রত্যেকটি বুথ স্তরে পৌঁছনো।
\মানুষের সমস্যাগুলিকে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে শোনা এবং দ্রুততার সঙ্গে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়াই মূল উদ্দেশ্য। শুধুমাত্র অভিযোগ গ্রহণ নয়, সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়াও হবে একই প্ল্যাটফর্ম থেকে।”বিধায়ক তোরাফ হোসেন মন্ডল বলেন, “মানুষের প্রতিটি সমস্যা আমাদের সমস্যা। এই শিবিরে যারা এসেছেন, আমরা চেষ্টা করব যাতে সবাই অন্তত একটা নির্ভরযোগ্য আশ্বাস নিয়ে বাড়ি ফেরেন। এই উদ্যোগ মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প, মানুষের পাশে থেকে সরকার কেমন কাজ করে তা দেখানোর সুযোগ।”এই ধরনের জনমুখী শিবির সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশাসনের প্রতি আস্থা বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। বহু বছর ধরে চলা অভিযোগ, নিষ্ক্রিয়তা কিংবা সিদ্ধান্তহীনতা কাটিয়ে মানুষের মধ্যে আশার আলো জাগায়। প্রকল্পটির বড় সাফল্য হল, প্রান্তিক মানুষদেরও সরাসরি বক্তব্য রাখার সুযোগ করে দেওয়া।
সঠিক পরিকল্পনা ও নিয়মিত তদারকি থাকলে, এই ধরনের শিবিরগুলি পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে এক নতুন দিশা দিতে পারে।এছাড়া, এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি প্রকল্প সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হচ্ছে। অনেকে যেমন জানতেন না যে তাঁরা কৃষক বন্ধু বা স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করাতে পারেন, এই শিবিরে এসে তা জানতে পারলেন।প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ শিবির পর্যায়ক্রমে জেলার প্রতিটি ব্লক এবং বুথ স্তরে হবে। এতে করে কোনও এলাকার কোনও নাগরিকই বঞ্চিত থাকবেন না। তবে এই উদ্যোগের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য দরকার নিয়মিত ফলোআপ, শিবিরে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা নজরে রাখা।যদি এই প্রকল্পকে নিছক একদিনের ‘আয়োজনে’ সীমাবদ্ধ না রেখে প্রকৃত সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ব্যবহার করা যায়, তবে তা হতে পারে বাংলার প্রশাসনিক সংস্কারের এক বড় পদক্ষেপ।‘আমাদের পাড়া, আমাদের সমাধান’ প্রকল্পের প্রথম শিবিরে জনসাধারণের ব্যাপক সাড়া এবং প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সরাসরি অংশগ্রহণ মিলিয়ে যে পরিবেশ তৈরি হল, তা নিঃসন্দেহে আশাজাগানিয়া। রাজনীতির বাইরে এসে প্রশাসন যদি মানুষের কাছে পৌঁছোয়, তাহলেই প্রকৃত গণতন্ত্রের সার্থকতা। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ সেই পথেই প্রথম পদক্ষেপ রাখল।